প্রতীকী ছবি।
বেআইনি নির্মাণের অভিযোগে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আগাম জামিনের আর্জিও জানিয়েছেন। সেই আবেদনের শুনানিতে এজলাসে উঠে বিচারক আদালতের কর্মীদের কাছে ওই মামলার নথি চাইলেন। কিন্তু কর্মীরা জানালেন, নথি রয়েছে থানায়। বিচারক আগাম জামিনের আবেদনকারীর আইনজীবীর কাছে নিজের অসহায়তা প্রকাশ করে জানালেন, মামলার তদন্তকারী অফিসারকে সব নথিপত্র নিয়ে হাজির হতে। কেবল ওই ঘটনাই নয়। ওই আদালতের সব মামলাতেই হাতের কাছে তৎক্ষণাৎ নথি না পেয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন বিচারকেরা। যে কোনও মামলার বিচারের কাজ দেরিতে হচ্ছে।
ওই চিত্র কলকাতা শহরের মিউনিসিপ্যাল কোর্টের (পুর আদালত)। ব্রিটিশ আমলে যার পোশাকি নাম ছিল ‘মেয়রস কোর্ট’। ওই আদালতে নথি না পৌঁছনোর এমন সমস্যার সমাধান হতে চলেছে এ বার। সূত্রের খবর, পুর আদালতের সুপারিশ মেনে কলকাতা পুলিশ নবান্নের কাছে গভর্নমেন্ট রেকর্ড (জিআর) সেকশন তৈরির প্রস্তাব পাঠিয়েছে। রাজ্যের যে কোনও আদালতের মতোই এ বার কলকাতা পুর আদালতে তৈরি হতে চলেছে পৃথক একটি জিআর সেকশন।
জিআর সেকশন না-থাকায় এত দিন কী অসুবিধা হচ্ছিল?
ওই আদালতের প্রাক্তন এক বিচারক জানান, মূলত ‘পুলিশ ফাইল’ থাকে জিআর সেকশনে। জামিন, আগাম জামিন, মামলার চার্জশিট পেশ, তদন্তকারীর কাছ থেকে কোনও মামলার রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো, সমন জারি, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ইত্যাদি সবই হয় জিআর সেকশনের মাধ্যমে। সহজ ভাবে বললে অভিযুক্ত, অভিযোগকারী ও তদন্তকারীর সঙ্গে জিআর সেকশন মারফত যোগাযোগ রাখেন বিচারক। কোনও অভিযুক্ত হয়তো দশ হাজার টাকার বন্ডে জামিন পেলেন। বন্ডের নথি পরীক্ষা করে দেখার দায়িত্ব জিআর সেকশনের।
নিয়ম অনুযায়ী কোনও মামলা আদালতে উঠলে জিআর সেকশনের কর্মীরাই কেস ডায়েরি-সহ সব নথি বিচারকের কাছে পেশ করেন। কিন্তু কলকাতা পুর আদালতে কোনও জিআর সেকশন না থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেখানকার বিচারকদের অসুবিধা হচ্ছে বিচার করতে। তাতে যেমন বিচারপ্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনই অভিযুক্তদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সূত্রের খবর, ২০১৮ সালে সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে প্রদীপকুমার অধিকারী কলকাতা পুর আদালতে যোগ দেওয়ার পরে সেখানে জিআর সেকশন তৈরির উদ্যোগ শুরু হয়। কলকাতার নগর দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারকের মাধ্যমে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সব স্তরে ওই সেকশন তৈরির আবেদন জানানো হয়েছে বলে প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে।
ওই আদালতের অন্য এক প্রাক্তন বিচারক জানান, কেবল বেআইনি নির্মাণ নয়, কলকাতা পুর আইন সংক্রান্ত সব মামলারই বিচার হয় ওই আদালতে। আবর্জনা সাফাই না হওয়ায় ডেঙ্গির লার্ভার আঁতুড়ঘর তৈরির জন্য যেমন জরিমানা হয় ওই আদালতে, তেমনই পুর পরিষেবা না পেয়ে কোনও নাগরিক ওই আদালতের দ্বারস্থও হতে পারেন।
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, জিআর সেকশন তৈরির বিষয়টি রাজ্যের অর্থ দফতরের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়। ওই দফতরের অনুমোদন মিললেই সেখানে ১৬ জন পুলিশ কর্মী নিয়োগ হবেন। তাঁদের মধ্যে থাকবেন এক জন ইনস্পেক্টর, দু’ জন সাব ইনস্পেক্টর, দু’ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর ও কয়েক জন মহিলা পুলিশ কর্মীও।