‘ঠিকানা’র অদূরে এসেও দূরে মুকুল

সেই কালীঘাটও আছে, তপসিয়ার সেই তৃণমূল ভবনও আছে। নেই শুধু তিনি। আর যেটা নেই, সেটা হল ‘ওয়ার রুম’। এর প্রণেতাও তিনি। বাম জমানায় পুরসভা, বিধানসভা বা লোকসভা ভোট এলে কালীঘাটে তৃণমূল নেত্রীর বাড়ির সংলগ্ন দফতর আর তপসিয়ার তৃণমূল ভবনে তৈরি হতো ‘ওয়ার রুম’। আর তিনি, মুকুল রায়, মূলত তৃণমূল ভবনে গোটা চারেক টিভি সেট আর সমসংখ্যক ফোন সামনে নিয়ে ভোট সামলাতেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৬
Share:

তপসিয়ার একটি স্কুলে ভোট দিতে ঢুকছেন মুকুল রায়। শনিবার। দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি।

সেই কালীঘাটও আছে, তপসিয়ার সেই তৃণমূল ভবনও আছে। নেই শুধু তিনি।
আর যেটা নেই, সেটা হল ‘ওয়ার রুম’। এর প্রণেতাও তিনি। বাম জমানায় পুরসভা, বিধানসভা বা লোকসভা ভোট এলে কালীঘাটে তৃণমূল নেত্রীর বাড়ির সংলগ্ন দফতর আর তপসিয়ার তৃণমূল ভবনে তৈরি হতো ‘ওয়ার রুম’। আর তিনি, মুকুল রায়, মূলত তৃণমূল ভবনে গোটা চারেক টিভি সেট আর সমসংখ্যক ফোন সামনে নিয়ে ভোট সামলাতেন।
সেই ‘ওয়ার রুম’ এখন হয়েছে ‘কন্ট্রোল রুম’। বিরোধী থেকে শাসক হওয়ার সুবাদেই বোধ হয় লব্জে এই বদল। কিন্তু কলকাতায় পুরভোটের দিনে মুকুল কোথায়?
শনিবার তপসিয়ায় বিলক্ষণ এলেন তিনি। কিন্তু তৃণমূল ভবনে নয়। বেলা ২টো নাগাদ তৃণমূল ভবনের ঠিক পেছনে একটি স্কুলে হাজির হলেন তৃণমূলের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। ভোট সামলাতে নয়, ভোট দিতে! উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচরাপাড়ায় আদি বাড়ি হলেও মুকুলবাবু আদতে কলকাতার ভোটার। তাঁর কলকাতার সরকারি ঠিকানা, ৩৬জি তপসিয়া রোড।
অর্থা‌ৎ তৃণমূল ভবন!
সেই ভবনের ধারকাছ না মাড়িয়ে মুকুলবাবু এ দিন যখন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হাজির, মোটামুটি প্রায় তখনই দলীয় সদর দফতর ছাড়ছেন বর্তমান সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী। ভোট শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই যিনি চলে এসেছিলেন ভবনে। তৃণমূল ভবনে এ দিন কর্মী থেকে সাধারণ মানুষের আসা-যাওয়া ছিল কম। কোথায় কী হচ্ছে, ভবনের কন্ট্রোল রুমে বসে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন সুব্রতবাবু।
ও দিকে, কালীঘাটে নেত্রীর বাড়ির সংলগ্ন দলীয় দফতরের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে ছিলেন ‘যুবরাজ’! ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখান থেকেই চতুর্দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে গিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঝেমধ্যে সেই কন্ট্রোল রুমে এসে বসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। ভোটের হাল-হকিকত নিয়ে খোঁজখবর যেমন নিয়েছেন, তেমনই দলের নেতাদের সঙ্গেও প্রয়োজনীয় কথাবার্তা সেরেছেন। বেলা একটু বাড়লে তাঁরই নির্দেশে তৃণমূল ভবনে চলে এসেছেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ কন্ট্রোল রুমের ফোন বেশ ঘন ঘনই বাজছিল। বেশির ভাগ ফোন আসছিল যাদবপুর-মুকুন্দপুর এলাকা থেকে। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘অভিযোগ আসছিল, সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের লোকজনেরা ওই সমস্ত এলাকায় বুথে বুথে ঝামেলা করছে (যদিও ওই এলাকায় শুক্রবার রাতে কান্তিবাবু ও তাঁর ছেলে সাম্যকে নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলেরই বিরুদ্ধে)।’’ নেতারা জানালেন, ফোনে অভিযোগ পেয়ে সমস্যা মেটাতে সুব্রতবাবু-রাজীববাবুরা কখনও পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকদের, কখনও স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন।
দুপুর ২টো নাগাদ রাজীববাবুর উপর কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব তমলুক রওনা হন সুব্রতবাবু। আগামী ২৫ এপ্রিল সেখানে ভোট। তারই প্রচারে চলে যান সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সাড়ে তিনটের পর ভবনে চলে আসেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, রাজ্যসভায় তৃণমূলের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন, দলের জয়হিন্দ বাহিনীর প্রধান ইন্দ্রনীল সেন। এ বার তাঁদের হাতে কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব সঁপে জেলায় পুরভোটের প্রচারে বেরিয়ে যান রাজীববাবুও। ভবনে তখন লোকজনের ভিড় বাড়ছে। চারদিক থেকে খবর আসছে, ‘ভাল ভোট হয়েছে।’ নেতাদের মুখে হাসি। এক কথায় গমগমে আবহ।
কী অদ্ভুত বৈপরীত্য তখন এন্টালি এলাকার ডাক্তার লালমোহন ভট্টাচার্য রোডের ‘বিধান ভবনে’। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এ দিন সকাল থেকেই দফতরে ছিলেন।
সঙ্গে গুটি কয়েক নেতা-নেত্রী ও দফতরের সর্বক্ষণের কর্মীরা। সভাপতির ফোনে তো বটেই, সাধারণ সম্পাদিকা ঊর্বশী ভট্টাচার্যর কাছেও চারিদিক থেকে ঘন ঘন ফোন আসছে। তবে সেগুলো খুব স্বস্তিসূচক নয়। কোনও বুথ থেকে দলীয় এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছে। কোথাও কর্মীরা আক্রান্ত।
কী করবেন?
অধীরবাবু বললেন, ‘‘কী আর করব! রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি লিখেছি। মানুষ যাতে অবাধে ভোট দিতে পারে, তার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করেছি। দেখা যাক!’’ একটু পরে পুরভোটের প্রচারে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি চলে যান হুগলি। আরও নিঝুম হল বিধান ভবন। তার আগে বহরমপুরের প্রবল পরাক্রান্ত ‘দাদা’র গলাটা কেমন অন্য রকম শোনাচ্ছিল।
ঠিক যেমন অন্য রকম শোনাচ্ছিল মুকুল রায়ের গলা! ৩৬জি তপসিয়া রোডের অদূরে নিঃশব্দে ভোট দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে যিনি বলেন, ‘‘এটা আমার অনেক দিনের ঠিকানা। এ বার ভাবছি বদল করব!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement