বিপর্যয়: অগ্নিকাণ্ডের পরে সেই ঘর। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে একচিলতে ঘর। দরজার একটা পাল্লা ভেঙে সেখান থেকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় বার করা হল তিন জনকে— দশ মাসের ছেলে, দু’বছরের মেয়ে ও তাদের মা। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মা ও ছেলেকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। মেয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মৃত মা ও ছেলের নাম শ্বেতা মিশ্র (৩৭) ও ওঙ্কার মিশ্র। মেয়ের নাম স্বাতী ওরফে বৈষ্ণবী।
দমকল সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ শ্যামপুকুর থানা এলাকার রাজা নবকৃষ্ণ স্ট্রিটের একটি বাড়িতে আগুন লাগে। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন আধ ঘণ্টায় আগুন নেভালেও তত ক্ষণে তিন জন আগুনে ভাল রকম জখম হয়েছেন।
মিশ্র পরিবারের প্রতিবেশী বীণাদেবী গুপ্ত এ দিন জানান, দুপুর আড়াইটে নাগাদ শ্বেতা তাঁর দুই সন্তানকে বীণাদেবীর বাড়ির সামনে নিয়ে আসেন। তাঁকে বলেন, তাঁর সন্তানদের একটু দেখতে। কিন্তু বীণাদেবী তখন সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি জানান, হাতের কাজ শেষ হলে দেখবেন। এর পরে সন্তানদের নিয়ে ঘরে চলে যান শ্বেতা। সাড়ে তিনটে নাগাদ মিশ্রদের ঘর থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখে চিৎকার করে আশপাশের বাসিন্দাদের ডাকেন বীণাদেবী। পড়শিরা জানান, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। তাঁরা এক দিকের পাল্লা ভেঙে ঘরে ঢোকেন। তখন মেঝেতে প়ড়ে ছিলেন শ্বেতাদেবী ও তাঁর দুই সন্তান। ঘরে কেরোসিনের তীব্র গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল।
প্রতিবেশীরা জানান, শ্বেতার স্বামী মঞ্জিত মিশ্র লরিচালক। ঘটনার সময়ে তিনি বাড়ি ছিলেন না। ঘটনার কথা জানার পরে তিনি বাড়ি এলেও পরে তাঁকে পাওয়া যায়নি। চার বছর আগে শ্বেতা ও মঞ্জিতের বিয়ে হয়েছিল। বেশ কয়েক বছর আগে মঞ্জিতের প্রথম স্ত্রী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তবে, এই ঘটনার পিছনে পারিবারিক অশান্তি কাজ করছিল কি না, সে বিষয়ে তাঁরা কিছু বলতে পারেননি।
সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে নমুনা সংগ্রহ করতে যান পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্তারা। তাঁরা জানান, এটা খুন, না আত্মহত্যা, নাকি নিছকই দুর্ঘটনা— এখনই তা বলা যাচ্ছে না।