প্রকাশ্য রাস্তায় যুবককে কোপ দুষ্কৃতীদের

ছেলের এই অবস্থার জন্য স্থানীয় এক প্রোমোটারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন রাজার মা সায়েরা বিবি। তাঁর অভিযোগ, তিনি যে বাড়িতে ভাড়া থাকেন, সেই বাড়ির উপরে প্রোমোটারের নজর রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৯ ০২:৫৯
Share:

(বাঁ দিকে) এনআরএসের বাইরে রাজার মা সায়েরা বিবি। (ডান দিকে) হাসপাতালের শয্যায় শেখ রাজা। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

প্রকাশ্য রাস্তায় যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাচ্ছে চার দুষ্কৃতী। রবিবার সকালে তালতলার লটপাড়ার রাস্তায় সেই দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন পথচলতি মানুষ-সহ স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশ জানিয়েছে আহত ওই যুবকের নাম শেখ রাজা। তিনি নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আপাতত চিকিৎসাধীন। ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে তালতলা থানার পুলিশ।

Advertisement

ছেলের এই অবস্থার জন্য স্থানীয় এক প্রোমোটারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন রাজার মা সায়েরা বিবি। তাঁর অভিযোগ, তিনি যে বাড়িতে ভাড়া থাকেন, সেই বাড়ির উপরে প্রোমোটারের নজর রয়েছে। তাই তাঁর নির্দেশেই দানিশ, রোহিত ওরফে গুজ্জর, মহম্মদ রাজা এবং লাল্টু নামে চার যুবক এ দিন মৌলালি মোড় থেকে ধাওয়া করে তালতলা থানার অন্তর্গত লটপাড়ার রাস্তায় ফেলে কুপিয়েছে তাঁর ছেলেকে। আক্রান্ত এবং অভিযুক্ত প্রত্যেকেই এন্টালি থানা এলাকার বাসিন্দা বলে জানিয়েছে পুলিশ। অভিযোগ অস্বীকার করে ওই প্রোমোটার জানান, বাড়ি সংক্রান্ত বিবাদ মিটে গিয়েছে। আসলে ছেলের দোষ আড়াল করতে মিথ্যা অভিযোগ করছেন সায়েরা।

এ দিন সকাল ন’টা নাগাদ কনভেন্ট রোডের বাড়ি থেকে বেরিয়ে মৌলালি মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন রাজা ও তাঁর মামাতো ভাই আমন। সায়েরা জানান, সেই সময়ে দানিশ ও তার সঙ্গীদের বাইকে আসতে দেখে হামলার আশঙ্কায় মল্লিকবাজারের দিকে দৌড় দেন ওই দুই যুবক। প্রাণ বাঁচাতে কলকাতা পুরসভার সেন্ট্রাল গ্যারাজের আগে লটপাড়ার রাস্তায় ঢুকে পড়েন দু’জনে। সায়েরার কথায়, ‘‘ভেবেছিল, ওখানে লোকজনের সামনে দানিশেরা কিছু করবে না।’’ বাস্তবে তা হয়নি। দু’টি বাইকে চড়ে রাজাকে ঘিরে ফেলে দানিশ, গুজ্জরেরা। এই পরিস্থিতিতে আমন ভয়ে লুকিয়ে পড়ে।

Advertisement

লটপাড়ায় যে ওষুধের দোকানের সামনে এই কাণ্ড চলছিল তাঁর মালিক নির্মল পাঠক বলেন, ‘‘সেই সময়ে রাস্তার সব গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়েছিল। চারপাশে লোক জমে গিয়েছিল। প্রকাশ্য রাস্তায় ওই যুবককে ফেলে চার জন কোপাচ্ছিল।’’ কেন কেউ থামালেন না? নির্মল বলেন, ‘‘ওদের হাতে ছুরি, ধারালো অস্ত্র ছিল। তাই ভয়ে কেউ এগোয়নি!’’

জখম যুবকের দিদি তমন্না পরভিন জানান, ভাইকে দুষ্কৃতীরা মেরে ফেলছে দেখে লুকিয়ে থাকা আমন বেরিয়ে আসে। তমন্নার কথায়, ‘‘কোনও মতে দানিশদের হাত থেকে রাজাকে ছাড়িয়ে বড় রাস্তার দিকে দৌড় দেয় ওরা। একটি বাসে উঠেও পড়ে। কিন্তু বাইক নিয়ে ফের ধাওয়া করে দানিশরা। বাস থেকে নামিয়ে রাজাকে ফের মারা হয়।’’ রাজা নেতিয়ে পড়লে বাইক নিয়ে দুষ্কৃতীরা পালায়। কিছু ক্ষণ পরে রক্তাক্ত অবস্থায় কনভেন্ট রোডের পাড়ায় পৌঁছে রাজা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ছেলের অবস্থার কথা জানতে পারেন মা। ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁকে এনআরএসে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি। দু’পক্ষকেই চেনেন এমন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, হামলা হয়েছে। তবে ঘটনার যে বিবরণ দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নও আছে।

এনআরএস সূত্রের খবর, যুবকের মুখ, দু’টি হাত, কাঁধ-সহ একাধিক জায়গায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। রাজার পরিজনেরা জানিয়েছেন, আমনের বয়ান নথিভুক্ত করেছেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন বস্তির ভিতরের কোনও একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে গন্ডগোল হয়। তার রেশ ধরেই প্রকাশ্য রাস্তায় ঘটে যায় রক্তপাতের ঘটনা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement