নজরে পুকুর ভরাটও

পরিবেশ রক্ষায় নতুন মন্ত্রী চান সিএনজি-যান

দিল্লির মতো এ বার কলকাতাতেও কমপ্রেস্‌ড ন্যাচারাল গ্যাসে (সিএনজি) অটো, ট্যাক্সি ও বাস চালাতে চায় রাজ্য সরকার। শহরের পরিবেশের সুরক্ষায় এই পদক্ষেপ করার পথে এগোচ্ছে পরিবেশ দফতর। রবিবার, বিশ্ব পরিবেশ দিবসে সরকারের এই উদ্যোগের কথা জানান নবনিযুক্ত পরিবেশ মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৬ ০২:১১
Share:

বিশ্ব পরিবেশ দিবসের উদ্যাপনে মেতেছে খুদেরা। রবিবার, বিআইটিএমে। ছবি: সুমন বল্লভ

দিল্লির মতো এ বার কলকাতাতেও কমপ্রেস্‌ড ন্যাচারাল গ্যাসে (সিএনজি) অটো, ট্যাক্সি ও বাস চালাতে চায় রাজ্য সরকার। শহরের পরিবেশের সুরক্ষায় এই পদক্ষেপ করার পথে এগোচ্ছে পরিবেশ দফতর। রবিবার, বিশ্ব পরিবেশ দিবসে সরকারের এই উদ্যোগের কথা জানান নবনিযুক্ত পরিবেশ মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

বিশ্ব পরিবেশ দিবসে এ দিন সল্টলেকের পরিবেশ ভবনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রাজ্য পরিবেশ দফতর। সেখানেই শহরে সিএনজি ব্যবহারের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন শোভনবাবু। জানান, পরিবেশ সুরক্ষার কথা ভেবে পুকুর ভরাট রোখা, ধোঁয়া থেকে শহরবাসীকে রক্ষা করা ও ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার না করা ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, ‘‘দিল্লিতে দেখেছি বাস, অটো, ট্যাক্সিতে সিএনজি ব্যবহার করা হয়। ধোঁয়ায় বিষাক্ত হয় না পরিবেশ। এ শহরেও বাস-গাড়ি-অটোতে পেট্রোল, ডিজেল, এলপিজি-র ব্যবহার কমাতে হবে। সেগুলি থেকে দূষণ ছড়াচ্ছে।’’

Advertisement

একই সঙ্গে শোভনবাবু জানান, পরিকল্পনা এবং প্রয়োগে ফারাক থাকে। সেখানেই তিনি সকলকে নিয়ে ও প্রশাসনিক সমন্বয়কে দৃঢ় করে সেই পরিকল্পনাকে দ্রুত বাস্তব রূপ দিতে চান।

পরিবহণ সূত্রের খবর, কলকাতায় কয়েক লক্ষ যানবাহনে যে পরিমাণ ডিজেল ও পেট্রোল ব্যবহার হয়, তা থেকে প্রতিদিনই দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এই কয়েক লক্ষ যানবাহনকে সিএনজি-চালিত করা কম কথা নয়। কাজটা যে কঠিন, তা মেনে নিয়ে শোভনবাবু বলেন, ‘‘কাজটা সফল করা অবশ্যই সময়সাপেক্ষ। দ্রুত পদক্ষেপ করার জন্য প্রয়োজনে দিল্লিতেও দরবার করব।’’

মন্ত্রী জানান, যেহেতু বিষয়টি পরিবহণ দফতরের অধীনে, তাই তাদের কাছেও প্রস্তাব পাঠানো হবে। সেই বিষয়ে একটি বিশদ প্রকল্প রিপোর্টও (ডিপিআর) বানানো হবে। যদিও শোভনবাবু মনে করেন, কলকাতার মতো শহরে পরিবেশ সুরক্ষায় এই প্রকল্পে রূপায়ণে কোনও বাধা আসবে না।

কলকাতার মেয়র এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘ দিনের কাজের অভিজ্ঞতার নিরিখে শোভনবাবু এ দিন আর্সেনিক-সমস্যা এবং তার প্রতিকারের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভূপৃষ্ঠের জলের ব্যবহার বাড়াতে হবে। একাধিক জলপ্রকল্প তৈরি করে শহরের বাসিন্দাদের কাছে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দিতে পারায় অনেকাংশেই আর্সেনিক-সমস্যার মোকাবিলা করা গিয়েছে। এই কাজে কলকাতা একটি দৃষ্টান্ত। সেই কাজই সারা রাজ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।’’

পরিবেশ দফতরের আগামী কর্মপন্থা সম্পর্কে পরিকল্পনাও এ দিন পরিবেশ মন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট। তবে শুধু পরিবেশ রক্ষার আবেদনই নয়, কড়া বার্তাও দিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, পুকুর, জলাশয় বাড়াতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে কলকাতা পুরসভা জলাশয়ের ইতিহাস সংগ্রহ করেছে। ফলে যাঁরা ভাবছেন পুকুর বুজিয়ে নির্মাণকাজ করলে কিছু হবে না, তাঁরা ভুল ভাবছেন। আবেদন-নিবেদন বা যতই চাপ থাকুক না কেন, পুকুর বোজানো বন্ধের বিষয়ে প্রশাসন যে নরম মনোভাব দেখাবে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন শোভনবাবু।

শোভনবাবু জানিয়েছেন, পরিবেশ রক্ষার কাজে প্রশাসনিক সমন্বয়ের দিকেও বাড়তি গুরুত্ব দিতে চলেছে সরকার। এ দিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র, পরিবেশ দফতরের প্রধান সচিব অর্ণব রায়, আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পি ঈশ্বরভাট প্রমুখ।

পরিবেশ দিবস উপলক্ষে শহরের প্রতিটি বরো এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। ১২ নম্বর বরোর ১১০ নম্বর ওয়ার্ডে এক অনুষ্ঠানে প্লাস্টিক-দূষণ রোধে বাসিন্দাদের এগিয়ে আসার আবেদন জানানো হয়। ৪০ মাইক্রনের নীচে পলিপ্যাক বন্ধ করা, জলাশয় রক্ষার দাবিকে সামনে রেখে পরিবেশ দিবস উদ্‌যাপন করে বরাহনগরের এক সংস্থা। পাশাপাশি, কামারহাটি, বালি, সিঁথি-সহ বিভিন্ন জায়গায় বৃক্ষরোপণ-সহ একাধিক অনুষ্ঠান হয়। অংশ নেন বরাহনগরের বিধায়ক তাপস রায়, বরাহনগরের উপ-পুরপ্রধান জয়ন্ত রায়, উত্তর দমদম পুরসভার বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য প্রমুখ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement