অদৃশ্য: রাতের পার্ক স্ট্রিটে ফাঁকা পুলিশ কিয়স্ক। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
শহরে উৎসবের মরসুম। রাস্তায় এখনও অনেক রাত অবধি লোকের ভিড়। তা সত্ত্বেও বড়দিনের রাতের পুলিশি নিরাপত্তার ঘেরাটোপ যেন বর্ষবরণের আগের রাতগুলিতে খানিকটা ঢিলেঢালা। পানশালা থেকে রেস্তরাঁ, বড় রাস্তা, পানশালার আশপাশে ছোট গলি— সব জায়গাতেই রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই চলছে আইনভাঙার প্রবণতা। বৃহস্পতিবার রাতে শহরে ঘুরে তেমন ছবিই পাওয়া গেল।
রাত ১১টা ১০। গাড়ির চালকেরা মদ্যপান করে আছেন কি না, চায়না টাউনে ঢোকার রাস্তার উপরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে পুলিশ তা পরীক্ষা করছে। আবার ওই বড় রাস্তার মোড় থেকে চায়না টাউনের ভিতরে ঢুকতেই দেখা গেল রাস্তার ধারে রেস্তরাঁর সামনে কয়েক জন যুবকের জটলা। হাতে প্লাস্টিকের বোতল। তাঁদের সামনে গাড়ি নিয়ে যেতেই সতর্ক যুবকেরা হাতের বোতল লুকিয়ে ফেললেন। তাঁদের ছেড়ে একটু এগিয়ে পিছনে নজর ঘোরাতেই দেখা গেল ফের বোতল প্রকাশ্যে এসে হাতে হাতে ঘুরছে। বোতলে মদ আছে না কি অন্য কোনও পানীয়? রাতের চায়না টাউনে সেই পরীক্ষা করার এক্তিয়ার যাঁদের রয়েছে, সেই পুলিশকর্মীদের তখন সেখানে দেখা মিলল না। চায়না টাউনের পানশালা, রেস্তঁরা তখন জমজমাট।
রাত পৌনে ১২টা। সায়েন্স সিটি পেরিয়ে আশপাশে রেস্তরাঁ কিংবা পানশালাগুলির আলোর মালায় সেজে উঠেছে। পানশালার সামনের গ্যারাজে গাড়ির ভিড়। গাড়িতে ওঠার পথে পা টলমল বেসামাল জনা কয়েক যুবকের। গাড়ির আলাদা চালক নেই। পকেট থেকে চাবি বার করে জনৈক যুবক বেসামাল অবস্থাতেই শুধু গাড়ি চালুই করলেন না বেপরোয়া গতিতেই রওনা দিলেন রুবি মোড়ের দিকে। রাস্তায় পুলিশের গাড়ি বিক্ষিপ্ত ভাবে ঘুরতে দেখা গেলেও ওই পানশালার সামনে পুলিশি টহলদারি চোখে পড়েনি।
গাড়ি দুর্ঘটনায় মডেল সোনিকা সিংহ চৌহানের মৃত্যুর পরে মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো বা পানশালাগুলিতে মত্ত ব্যক্তিদের গাড়ি না চালাতে দেওয়ার দিকে নজরদারির ‘নির্দেশ’ জারি হয়। বর্ষবরণের রাতের আগে শহরে সেই সব বিধিনিষেধ চোখে পড়ল না তেমন ভাবে। কথা ছিল, মত্ত ব্যক্তির জন্য পানশালার তরফে অ্যাপ ক্যাব ডেকে দেওয়া হবে। পানশালায় থাকবে ‘হেল্প ডেস্ক’। বাস্তবে বৃহস্পতিবার রাতে দক্ষিণ কলকাতার একটি পানশালায় গিয়ে খোঁজ নিতে এক কর্মী জানান, বাইরে দাঁড়ানো বাউন্সারেরা সব ব্যবস্থা করবে। তেমনই এক বাউন্সারের কথায়, ‘‘এত রাতে অ্যাপ ক্যাব? ভাড়া কত হবে জানেন? হলুদ ট্যাক্সিও পাওয়া মুশকিল। ভগবান ভরসা করে আপনাকেই গাড়ি চালাতে হবে।’’
বড়দিনের শেষে বৃহস্পতিবার পার্ক স্ট্রিটে পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্পে দেখা মেলেনি পুলিশের। তবে রাস্তায় রয়েছে পুলিশের গাড়ি। আবার একই ভাবে রাস্তায় দাপাচ্ছে হেলমেটহীন মোটরবাইক চালকের দলও। প্রকাশ্য ফুটপাতেই ‘বোতলে’ চুমুক দিচ্ছেন পথচারী। তাঁদের ঠেকানোর কেউ নেই। রাত তখন ১২টা ২০ মিনিট। মধ্য কলকাতার চাঁদনি চকের ব্রিটিশ ইন্ডিয়া স্ট্রিটে একটি কয়েকটি রেস্তরাঁর সামনে পানীয়ের বোতল হাতে যুবকদের জটলা। পানশালার সামনে দাঁড়ানো হলুদ ট্যাক্সি সুযোগ বুঝে চড়া ভাড়া হাঁকছে।
উৎসবের মরসুমে হোটেল রেস্তঁরা থেকে অ্যাপ ক্যাব ডাকা সমস্যা বলে জানান, হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভের সভাপতি সুরেশ পোদ্দার। তিনি বলেন, “উৎসবের মরসুমে অ্যাপ ক্যাবের ভাড়া খুব বেশি হয়। সময় মতো মেলে না। আমরা চেষ্টা করছি রেস্তরাঁগুলোতে এক জন বা দু’জন গাড়ি চালকদের দল গঠন করতে। যাতে ওই চালকেরা মত্ত কোনও ব্যক্তির গাড়ি চালিয়ে তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দিতে পারেন।”
উৎসবের রাতের রাস্তার নিরাপত্তা নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (তিন) সুপ্রতিম সরকারকে ফোন এবং এসএমএস করা হয়। তিনি কোনওটিতেই সাড়া দেননি।