ডিজিটাল রেশন কার্ডের ফর্ম পূরণে চলছে দালাল-চক্র

অনেকেরই ইংরেজিতে লেখা ফর্ম পূরণের সাধ্য নেই। বহুক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছন মোহনপুরের স্বস্তিক সিংহরায়।

Advertisement

বিতান ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:৪৪
Share:

দালালদের কাছে চলছে ফর্ম পূরণ। শুক্রবার, ব্যারাকপুর (২) বিডিও-র কার্যালয়ের সামনে। নিজস্ব চিত্র

এক ঝলক দেখলে মনে হবে, ভোটের লাইন। সেই লাইনের সামনে বাড়ির রোয়াকে টুল পেতে বসে আছেন কয়েক জন। কেউ আবার টেবিল আর ছাতা নিয়ে বসে। অভিযোগ, এঁরা প্রত্যেকেই দালাল। ৫০ বা ১০০ টাকার বিনিময়ে ফর্ম পূরণ করে দিচ্ছেন ডিজিটাল রেশন কার্ডের জন্য। কয়েক পা এগোলেই ব্যারাকপুর (২) বিডিও-র কার্যালয়। সেখানে ডিজিটাল রেশন কার্ডে ভুল সংশোধন ও যাঁরা এখনও সেই কার্ড হাতে পাননি, তাঁদের ফর্ম নেওয়ার লাইন।

Advertisement

প্যাচপেচে গরমে লাইনে দাঁড়িয়েছেন বিলকান্দা, শিউলি বা মোহনপুরের কয়েকশো বাসিন্দা। যাঁদের অনেকেরই ইংরেজিতে লেখা ফর্ম পূরণের সাধ্য নেই। বহুক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছন মোহনপুরের স্বস্তিক সিংহরায়। তত ক্ষণে কাউন্টার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শিউলির সুকান্তপল্লির বাসিন্দা গীতা ভট্টাচার্যের নিজের কার্ড আসেনি। পরিবারের অন্যদের ডিজিটাল কার্ড এলেও নাম বা ঠিকানায় ভুল রয়েছে। অসুস্থ মানুষটি তিন বার গাড়ি বদল করে বিডিও অফিসে পৌঁছে জানতে পারেন, যে কাউন্টার থেকে ডিজিটাল কার্ড নতুন করে পাওয়ার ফর্ম দেওয়ার কথা, সেটি সে দিন খুলবে না।

তবু দেখা গেল, বিডিও অফিসের বাইরে বসা দালালদের কাছে ফর্ম চলে আসছে বন্ধ দরজার ফাঁক গলে। লাইনে দাঁড়ানো খড়দহের পাতুলিয়ার বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম, জান্নাতুন বিবি বা বিলকান্দার অশোক রায়রা জানান, ২০১৫ সালে ডিজিটাল কার্ড হলেও তাতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যেরই নাম বা ঠিকানা ভুল। কারও আবার কার্ডই আসেনি। ২০১৬ সালে তা সংশোধনের কথা বলা হলেও সে কাজ হয়নি। এত দিন পরে সরকারি বিজ্ঞাপন দিয়ে ৯ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংশোধনের কথা বলা হল তখন, যখন এনআরসি নিয়ে চিন্তা শুরু হয়েছে।

Advertisement

এই ক’দিনে কী করে কয়েক লক্ষ বাসিন্দার রেশন কার্ডের ত্রুটি স‌ংশোধন হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। শিউলির মর্নিং স্টারের বাসিন্দা প্রকাশ পাল বলেন, ‘‘ভিটে হারানোর আতঙ্কই এই ভিড় তৈরি করছে। কিন্তু ভিড় সামলানোর থেকে বেশি নজর দেওয়া উচিত দালাল-চক্রের দিকে। তারা এই সুযোগে মুনাফা লুটছে।’’

দালাল-চক্রের বিষয়ে ব্যারাকপুর দু’নম্বর ব্লকের বিডিও অনামিকা সাহা বেরা বলেন, ‘‘এনআরসি আতঙ্কেই এত ভিড় হচ্ছে। আমার অফিসের বাইরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দালাল-চক্র চলছে। যাঁরা ইংরেজিতে লেখা ফর্ম পূরণ করতে পারছেন না, তাঁদের সাহায্য করার নামে এটা চলছে। বিষয়টা পুলিশকে দেখতে বলছি।’’ তবে দালাল-চক্র চলতে দেওয়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেন, ‘‘এত আতঙ্কিত হয়ে তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই। আবার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। দালালের খপ্পরে পড়বেন না কেউ। লাইনও দিতে হবে না। বাড়ি বাড়ি দফতরের কর্মীরা যাবেন রেশন কার্ড

সংশোধন করতে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement