এ বার মেট্রোর সুড়ঙ্গে ফাটলো বিদ্যুতের কেব্ল। আগুন লেগে ছড়াল ধোঁয়া। যার জেরে বেশ কিছুক্ষণ ট্রেনের কামরাতেই আটকে রইলেন আতঙ্কিত যাত্রীরা। তবে বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। সময় মতো বার করে আনা গিয়েছে সব যাত্রীকেই।
যান্ত্রিক বিভ্রাট পিছু ছাড়ছে না কলকাতা মেট্রোর। তবে এ বার ট্রেনে নয়, ত্রুটি দেখা গেল সুড়ঙ্গের বিদ্যুতের কেব্লে। তার জেরেই বুধবার সকাল থেকে দীর্ঘ সময় ধরে অনিয়মিত ভাবে চলল মেট্রো। উত্তরে দমদম থেকে সেন্ট্রাল ও দক্ষিণে কবি সুভাষ থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্ত সাময়িক ভাবে মেট্রো চালানো হয়। মেরামতির পরে সকাল ১০টা নাগাদ টানা ট্রেন চলাচল ফের স্বাভাবিক হয়। তবে তখনও নির্দিষ্ট সময় মেনে নয়, দীর্ঘক্ষণ অনিয়মিতই ছিল শহরের এই ‘লাইফ লাইন’।
মেট্রো সূত্রে খবর, এ দিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে দমদমমুখী একটি মেট্রো কবি সুভাষ থেকে ছাড়ে। ৭টা ২০ নাগাদ পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে ঢোকার সময়ে সুড়ঙ্গের মধ্যে চালক আগুনের ঝলক এবং বিকট শব্দ শুনতে পান। ততক্ষণে চারটি কামরা স্টেশনে ঢুকে গিয়েছে। সুড়ঙ্গের মধ্যে তখনও পাঁচটি কামরা। চালক দেরি করেননি। সঙ্গে সঙ্গে আপৎকালীন ব্রেক কষেন। ওই অবস্থাতেই দাঁড়িয়ে পড়ে মেট্রো। পার্ক স্ট্রিট স্টেশনের কর্মীরা এবং ট্রেনের চালক তড়িঘড়ি সামনের দিকের আপৎকালীন দরজা খুলে দেন। ওই সময়ে স্টেশনে ছিলেন প্রচুর অফিসযাত্রী। মেট্রো আচমকা মাঝপথে থেমে যাওয়ায় প্রথমে তাঁরা ভেবেছিলেন কেউ লাইনে ঝাঁপ দিয়েছেন। কিন্তু পরে সুড়ঙ্গের মধ্যে থাকা পাঁচটি কামরার যাত্রীরা আগুনের ঝলক দেখে ও বিকট আওয়াজ শুনে যখন ‘আগুন আগুন’ করে এগিয়ে আসছিলেন, তখন বাকিদের মধ্যেও আতঙ্ক বেড়ে যায়। মেট্রোকর্মীরাই সকলকে শান্ত করে প্ল্যাটফর্মে নেমে আসতে বলেন। সকলে নেমে গেলে রেকটিকে কারশেডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে তৃতীয় লাইনে বিদ্যুৎ বন্ধ করে সুড়ঙ্গে নামেন মেট্রোর বৈদ্যুতিক বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার, আরপিএফ-সহ অন্য কর্মীরা। সেখানে গিয়ে তাঁরা কেব্ল মেরামতির চেষ্টা করেন। সব কিছু ঠিক হলে সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে টানা ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
মেট্রোকর্তারা জানিয়েছেন, শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন। তবে কী ভাবে আগুন লাগল, তা খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। মেট্রোর জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই ঘটনায় যাত্রীদের মধ্যে প্রথমটায় একটু আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু সমস্ত যাত্রীদের প্ল্যাটফর্মে নামিয়ে আনা হয়। ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে আমরা শাট্ল সার্ভিসও চালু করে দিয়েছিলাম।’’
এ দিন রিনা বিশ্বাস নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘দমদম থেকে সেন্ট্রাল পর্যন্ত ট্রেন চললেও তা ছিল খুবই অনিয়মিত। পরে টানা ট্রেন চলাচল শুরু হলেও বিভিন্ন স্টেশনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকায় গিরিশ পার্ক থেকে পার্ক স্ট্রিটে পৌঁছতেই ৪৫ মিনিট লেগে গেল।’’ একই রকম অভিযোগ শোনা গেল টালিগঞ্জ এবং কবি সুভাষ থেকে আসা যাত্রীদের মুখেও। এ দিকে, অফিস টাইমে মেট্রো বন্ধ হওয়ায় গোটা ভিড়টাই নেমে আসে রাস্তায়। বাসে বাদুড়ঝোলা ভিড়। ট্যাক্সির দেখা মিললেও তার ভাড়া বেশি চাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।