জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রোর প্রস্তাবিত রুটকে বাধামুক্ত করে দ্রুত কাজ শুরুর নির্দেশ দিলেন মেয়র। বুধবার পুরভবনে রেলের অফিসার, পুলিশ, পরিবহণ দফতর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসককে নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক করেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘অনেক সময় গিয়েছে। এ বার ওই প্রকল্প দ্রুত শেষ করতেই হবে। একযোগে কাজ করবে মেট্রো রেল, পুলিশ এবং প্রশাসন।’’ সেখানেই তিনি বলেন, ওই মেট্রোর প্রস্তাবিত রুটে থাকা বেহালা বাজার এবং মাঝেরহাটের হকারদের দ্রুত সরাতে হবে। তবে তা যেন সহানুভূতির সঙ্গে করা হয়, সে ব্যাপারেও অফিসারদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক হকারকেই পুনর্বাসন দেওয়া হবে বলেও জানান মেয়র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর নির্দেশে যে তৎপরতার সঙ্গে জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রো রেলের কাজ চলছিল, তা অনেকটাই থমকে গিয়েছে। সেই জট কাটিয়ে কলকাতার প্রাণকেন্দ্র বিবাদী বাগের সঙ্গে দক্ষিণ শহরতলির যোগাযোগের এই মাধ্যম দ্রুত কার্যকর করতে এ বার উদ্যোগী হয়েছেন শোভনবাবু। প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় বার ইউপিএ সরকারের আমলে রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রো রেল প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। তখনই তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই কাজ শেষ করতে হবে। পরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় রেলমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দেন তিনি। তাঁরই দলের দুই সাংসদ পরে রেলমন্ত্রী হলেও এক সময়ে তৃণমূল ইউপিএ সরকার থেকে বেরিয়ে আসে। মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেন তৃণমূলের সাংসদেরা। অভিযোগ, তার পর থেকে ওই কাজে ঢিলেমি শুরু হয়। ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের রদবদল হয়। ক্ষমতায় আসে বিজেপি। কিন্তু জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রোর তেমন কোনও অগ্রগতি দেখা যায়নি বলে মনে করে পুর-প্রশাসন। যদিও মেট্রো রেলের বক্তব্য, কাজে ঢিলেমির কারণ জমি-জট।
রাজ্যে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফিরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোকা-বি বা দী বাগ মেট্রোর কাজ দ্রুত শেষ করার ব্যপারে পদক্ষেপ করতে বলেছেন পুর-প্রশাসনকে। তার প্রেক্ষিতেই এ দিন পুরভবনে এই বৈঠক করেন মেয়র। মেয়রের বক্তব্য, ‘‘মমতাদি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন দ্রুত কাজ এগোচ্ছিল। পরে তাতে ভাটা পড়ে। এর সঙ্গে জমি-জটও রয়েছে। ওই কাজ এ বার দ্রুত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ বৈঠকে মেট্রো রেল এবং রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেড-এর পদস্থ অফিসারদের তিনি বলেছেন, দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করতে হবে। জমি-জট সংক্রান্ত বিষয়ে সাহায্য করবে পুর-প্রশাসন ও পুলিশ।
মেয়র জানান, জোকা থেকে মাঝেরহাট পর্যন্ত রুটে দু’-তিন জায়গায় জমি নিয়ে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বেহালা বাজারের কাছে ৮টি দোকান। ওই দোকানগুলি না সরানোয় তাদের কাজে বাধা পড়ে বলে জানিয়েছে মেট্রো রেল। দ্বিতীয় সমস্যার জায়গা হল মাঝেরহাট সেতুর কাছে। সেখানেও ১২টি দোকান উঠতে না চাওয়ায় সমস্যায় পড়েন মেট্রো কতৃর্পক্ষ। এ দিনের বৈঠকে সে সব সমস্যার প্রসঙ্গ ওঠে। মেয়র জানান, বেহালায় জোকা-বি বা দী বাগ মেট্রোর প্রস্তাবিত পথে যাঁদের জমি রয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৪৩৮ জন ইতিমধ্যে জমি দিয়েছেন। সেই জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বাকি ২০০ জনের জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। আর ২৮ জনের ক্ষেত্রে মামলা হয়েছে। তার শুনানি চলছে। তারও দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য মেট্রো কতর্পক্ষ এবং জেলা প্রসাশনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।