বর্ষবরণের হোর্ডিংয়ে ভোটপুজোর বার্তা

এই বার্তাটি যাঁরা ছড়াচ্ছেন, সেই টালা প্রত্যয়ের পুজোকর্তারা মিটিমিটি হাসছেন।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২১ ০২:৪৬
Share:

নজরকাড়া: শহর ছেয়েছে এই পোস্টারে। নিজস্ব চিত্র

‘একুশে বদল হবে না’।

Advertisement

বছর শেষের দিনটায় শহর কলকাতা ছয়লাপ এই বার্তায়। মহানগরীর বেশির ভাগ চৌরাস্তার মোড়েই এমন হোর্ডিং ছড়িয়ে পড়েছে। সৌজন্য, উত্তরের টালাপার্ক অঞ্চলের একটি বড় পুজো। দেখে কারও মনে পড়তেই পারে এক যুগ আগের হোর্ডিং, তাতে শিল্পসংস্কৃতি জগতের অজস্র চেনা মুখের পাশে লেখা ‘আমরা পরিবর্তন চাই’! এর বেশি কিছু বলা ছিল না। কিন্তু ২০০৯এর লোকসভা ভোটের পরে তখনই ‘পরিবর্তন’ শব্দটি ঢুকে পড়ে বঙ্গ রাজনীতির রোজকার লব্জে। এ বারের বার্তাটিও সহজবোধ্য। বাংলার ভোটের বছর, ২০২১ এর কপালে কী লেখা, তা নিয়ে চর্চা শুধু রাজ্য নয় গোটা দেশ জুড়েই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলের জন্য মরিয়া দিল্লির শাসক দলের টক্করের খবর ইতিমধ্যেই বঙ্গজীবনের রোজনামচা।

এই অবস্থায় শহরবাসীর আগ্রহ বাড়ছে, বর্ষবরণের আপাত নিরীহ হোর্ডিংটি নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যাতায়াতের পথ কালীঘাট থেকে নবান্নের রাস্তাতেও রীতিমতো প্রকট এই বার্তা। পুলিশ মহলের খবর, মুখ্যমন্ত্রী নাকি ইতিমধ্যে তা খেয়ালও করেছেন। বড় হরফে ‘একুশে বদল হবে না’-র নীচে অবশ্য তার মানেও বোঝানো হয়েছে। লেখা রয়েছে ‘একুশেও সাথে সুশান্ত পাল।’ অর্থাৎ ২০২১এ পুজোর শিল্পী বদল হচ্ছে না।

Advertisement

এই বার্তাটি যাঁরা ছড়াচ্ছেন, সেই টালা প্রত্যয়ের পুজোকর্তারা মিটিমিটি হাসছেন। পুজোর সহ-সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের কথায়, “ধরুন একটা সমকালীন বিষয়ের ছোঁয়া থাকল ২০২১-এর শুভেচ্ছা-বার্তায়। একুশে ও বদল প্রসঙ্গে লোকে যেমন খুশি মানে করবে!”

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে দ্রোণাচার্যকে ঘায়েল করার লক্ষ্যে অনেকটা এমনই ভঙ্গিতে ‘অশ্বত্থামা হত ইতি গজ’ বলেছিলেন সত্যবাদী যুধিষ্ঠির। মারা গিয়েছে অশ্বত্থামা নামের হাতি, কিন্তু পুত্র অশ্বত্থামা মারা গিয়েছেন ভেবে অস্ত্র ত্যাগ করেন দ্রোনাচার্য। ভোট যুদ্ধের রীতিতেও কৌশলের নানা রকমফের। তা ছাড়া, মহাভারতে যুধিষ্ঠিরের সেই বিখ্যাত মিথ্যার রীতি বিজ্ঞাপন, বিপণনের যুদ্ধেও চালু কৌশল। ‘গলানো সোনা ২৮ টাকা’ প্রচারে যে বিজ্ঞাপন শহর ছেয়ে ফেলেছিল, তা আসলে একটি সর্ষের তেলের কথা বলছিল। আবার কয়েক বছর আগে দেশপ্রিয় পার্কের একটি পুজোর ‘সব থেকে বড় দুর্গা’ দেখানোর প্রতিশ্রুতি গোলযোগ সৃষ্টি করেছে। বিভ্রান্তি থেকে বিশৃঙ্খলার জন্য সেই পুজোটাই বন্ধ করে দিতে হয়েছিল।

“তবে বিজ্ঞাপনের কৌশলে দ্ব্যর্থক বা ডবল মিনিং প্রয়োগ অনেক দিনই চলছে। মনোযোগ আকর্ষণের এটা ভাল ফর্মুলা”— বলছেন বিজ্ঞাপন বিশারদ সৌভিক মিশ্র। তবে বাঙালির দুর্গাপুজোর সঙ্গে রাজনীতির সংযোগটাও প্রকট এই হোর্ডিংয়ে। কলকাতার তাবড় সব পুজোই মন্ত্রী, নেতাদের পুজো। প্রতিপক্ষ বিজেপিও পুজোয় ঢোকার চেষ্টা করছে। টালার পুজোটির সভাপতি, পুরসভার বরো কোঅর্ডিনেটর তরুণ সাহার কথায়, “পুজোয় সরকারি সহযোগিতার জন্য এটা আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ধরলেও ক্ষতি কী!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement