প্রতীকী চিত্র।
হাওড়ার কোভিড হাসপাতালগুলিতে বর্তমানে যত রোগী ভর্তি আছেন, তার চেয়ে বেশি রোগী রয়েছেন হোম আইসোলেশনে। হাসপাতালগুলিতে যেখানে এই মুহূর্তে ৬০০ রোগী আছেন, সেখানে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ১১ হাজারেরও বেশি। বাড়িতে থাকা ওই রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ— সবই দিচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এ বার প্রত্যেক রোগীর বাড়িতে প্যাকেটে যাবতীয় ওষুধ এবং হোম আইসোলেশনে থাকার নিয়মাবলী সংবলিত ছাপানো কাগজ পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করল তারা।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কোভিডে সংক্রমিত হয়ে বর্তমানে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ১১,২০০ জন। সকলেই মৃদু উপসর্গযুক্ত। ওই রোগীরা যাতে নিজেরা চিকিৎসা শুরু করে বিপদ ডেকে না আনেন, তার জন্য ‘দুয়ারে চিকিৎসা’ প্রকল্প শুরু করেছে হাওড়া জেলা প্রশাসন। জেলার পঞ্চায়েত, ব্লক ও পুর এলাকায় বসবাসকারী ওই রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের বাড়িতে একটি করে প্যাকেট পৌঁছে দিচ্ছেন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মী ও আশাকর্মীরা। ওই প্যাকেটে র্যাবিপ্রাজ়ল, ডক্সিসাইক্লিন, মন্টিলুকাস্ট ও বি-কমপ্লেক্সের মতো ১২টি ওষুধ ছাড়াও থাকছে ১৭ দিন বাধ্যতামূলক ভাবে হোম আইসোলেশনে থাকার নিয়মাবলী।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাই মণ্ডল বলেন, ‘‘প্যাকেটে দেওয়া ওই ওষুধ খাওয়ার পরেও কোনও রোগীর শ্বাসকষ্ট বা অন্য সমস্যা দেখা দিলে তিনি যদি কন্ট্রোল রুমে অথবা আশাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’ তিনি আরও জানিয়েছেন, এই মূহূর্তে হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন আছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের মেডিক্যাল স্টোর্সে করোনা চিকিৎসার জরুরি ওষুধও মজুত আছে। সরকারি স্তরে চিকিৎসার কোনও সমস্যা নেই।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য, আগামী দিনে তৃতীয় ঢেউ আসার আশঙ্কা কোনও ভাবেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাই বেসরকারি হাসপাতালের উপরে নির্ভরতা কমিয়ে সরকারি স্তরে চিকিৎসা-পরিকাঠামো বাড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে। তার অঙ্গ হিসেবে আইসিইউ এবং এইচডিইউয়ে শয্যার সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে ঠিক হয়েছে। সেই সঙ্গে পাইপলাইনের মাধ্যমে অক্সিজেন পৌঁছনোর ব্যবস্থাও শুরু হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন হাসপাতালে। হাওড়ার মূল কোভিড হাসপাতাল বালিটিকুরি ইএসআইয়ে অক্সিজেন প্লান্ট তৈরির কাজও শুরু হচ্ছে।
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হাওড়া জেলা হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য ২০টি আইসিইউ শয্যা চালু হয়ে যাবে। বালিটিকুরি ইএসআই হাসপাতালে ২৫টি আইসিইউ-শয্যা বাড়ছে। উলুবেড়িয়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ১০টি আইসিউ শয্যা প্রস্তুত করা হচ্ছে। অধিকাংশ যন্ত্রপাতি এসে গিয়েছে। বাকিগুলি এলেই কাজ শুরু হবে।’’ জেলা প্রশাসনের দাবি, সরকারি স্তরে আইসিইউ-শয্যা বাড়ানো গেলে ভবিষ্যতে বেসরকারি হাসপাতালগুলির উপরে নির্ভরতা অনেকটাই কমবে।