-ফাইল চিত্র।
সরকারি কোভিড হাসপাতালের দুই প্রান্তে ঘটে যাওয়া দু’টি ঘটনা ঘিরে সোমবার শোরগোল পড়ে গেল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে। একটি ঘটনায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠল। অন্য দিকে, কোভিড হাসপাতালের পরিষেবায় সন্তুষ্ট না হয়ে দু’বার নিরাপত্তারক্ষীদের চোখে ধুলো দিয়ে ওয়ার্ড থেকে নীচে নেমে এলেন কোভিড রোগী!
প্রথম ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ক্যানসারে আক্রান্ত ৫৪ বছরের এক প্রৌঢ়ের পরিবারের অভিযোগ। কোভিড ধরা পড়ায় তপসিয়ার ওই বাসিন্দাকে গত ২২ অগস্ট নিউ টাউনের ক্যানসার হাসপাতাল থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়।
পরিজনদের অভিযোগ, গ্রিন বিল্ডিংয়ে চিকিৎসাধীন ওই প্রৌঢ়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় দিন চারেক আগে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, ক্যানসারের পাশাপাশি কোভিডে কাবু প্রৌঢ়কে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তরিত করা প্রয়োজন। কিন্তু সেখানে শয্যার অভাবে প্রৌঢ়কে ভেন্টিলেটরে দেওয়া যায়নি। রবিবার গভীর রাতে প্রৌঢ়ের মৃত্যু হলে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে সরব হন তাঁর পরিজনেরা। তাঁদের বক্তব্য, সিসিইউ-এর প্রয়োজন জানিয়ে হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ তথা সুপারের কার্যালয়ে আবেদন করলেও শয্যা পাওয়া যায়নি।
দ্বিতীয় ঘটনার কেন্দ্রে রয়েছেন দমদমের বাসিন্দা মধ্যবয়সি এক মহিলা। গত ১২ অগস্ট কোভিড পজ়িটিভ ওই মহিলাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের উপরে সিবি ব্লকে ভর্তি করা হয়। এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ আচমকা ওয়ার্ড থেকে নীচে নেমে আসেন তিনি। তাঁর দাবি, করোনা না-হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে জোর করে সিবি ব্লকে রাখা হয়েছে। মহিলা আদতে স্নায়ুরোগে আক্রান্ত। কিন্তু সেই রোগের কোনও চিকিৎসা হচ্ছে না। রোগী নীচে নেমে এসেছেন দেখে হাসপাতালের কর্মীদের মধ্যে তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। কোনও মতে মহিলাকে বুঝিয়ে ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। কিন্তু বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ ফের নীচে চলে আসেন তিনি। এর পরে তাঁকে নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় হাসপাতালে কর্তব্যরত স্বাস্থ্যকর্মীদের। কোভিডে আক্রান্ত মহিলা অন্য রোগীর পরিজন ও সুস্থদের কাছাকাছি চলে আসছেন দেখে নাভিশ্বাস ছোটে নিরাপত্তারক্ষীদের। এক সময়ে পিপিই পরিহিত কর্মীরা কার্যত বলপ্রয়োগ করে মহিলাকে উপরে নিয়ে যান।
রক্ষীরা থাকা সত্ত্বেও মহিলা নীচে নেমে এলেন কী ভাবে? হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ তথা সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘কোভিড হাসপাতালে দীর্ঘদিন থাকলে এমনিই মানসিক ভাবে চাপ তৈরি হয়। স্নায়ুরোগে আক্রান্ত ওই মহিলার সব ধরনেরই চিকিৎসা হয়েছে।’’ আজ, মঙ্গলবার তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন সুপার।
মৃত প্রৌঢ়ের চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘প্রতিটি শয্যাতেই এনআরবিএম, হাই-ফ্লো নেজ়াল অক্সিজেন রয়েছে। ফলে সিসিইউ-এ শয্যা না পেলেও চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ঠিক নয়। সঙ্কটজনক অবস্থাতেই ওই রোগীকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল।’’