প্রতীকী ছবি।
বিমানে কলকাতায় আসতে গেলে শুধু আরটি পিসিআর নেগেটিভ রিপোর্টকে বাধ্যতামূলক না করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চায় উড়ান সংস্থাগুলি। তাদের দাবি, কোনও যাত্রীর সঙ্গে চিকিৎসকের দেওয়া ‘ফিট টু ফ্লাই’ সার্টিফিকেট থাকলে তাঁকেও কলকাতায় আসার সুযোগ দেওয়া হোক।
মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ সরকার জানিয়ে দিয়েছে, এ বার ভারতের যে কোনও শহর থেকে কলকাতা, বাগডোগরা ও অন্ডালে বিমানে করে নামতে গেলে যাত্রীর সঙ্গে আরটি পিসিআর নেগেটিভ রিপোর্ট থাকতে হবে। এই নিয়ম ৭ মে রাত বারোটা থেকে কার্যকর হবে। এত দিন এই নিয়ম দিল্লি, মহারাষ্ট্র, কেরল, কর্নাটক, গুজরাত, তামিলনাড়ু, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, মণিপুর-সহ কয়েকটি রাজ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল।
উড়ান সংস্থার কর্তাদের দাবি, এখনই যাত্রী সংখ্যা তলানিতে এসে ঠেকেছে। কলকাতা বিমানবন্দরের একটি সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার সারা দিনে মাত্র ৬,১০৫ জন যাত্রী অন্য শহরে উড়ে গিয়েছেন। আর অন্য শহর থেকে এসেছেন ১০,২৪৭ জন। সোমবার সংখ্যাটা যথাক্রমে ছিল ৫,৮২১ এবং ৯,১০৭। রবিবার সেটাই ছিল ৭,২১৪ এবং ১০,৫৩৭। অভিযোগ, প্রায় প্রতিটি উড়ানে যাত্রী হচ্ছে ৪৫ শতাংশেরও কম। প্রভূত লোকসানে চলছে উড়ান সংস্থাগুলি।
উড়ান সংস্থার এক কর্তার কথায়, “পরিসংখ্যান বলছে, এখনও কলকাতা থেকে যত যাত্রী বাইরে যাচ্ছেন, তার থেকে বেশি আসছেন শহরে। এই অবস্থায় আরটি পিসিআর নেগেটিভ রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করলে যাত্রী সংখ্যা ৭ মে-র পরে কোথায় নেমে যাবে জানি না। চিকিৎসকদের একটি অংশের মতে, যে ব্যক্তির করোনা হয়েছে, সংক্রমণের ২০ দিন পরে তিনি আর সংক্রমণ ছড়াতে পারেন না। তখন তাঁর যাত্রা করতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এ দিকে সংক্রমণের ২০ দিন পরে তিনি আরটি পিসিআর পরীক্ষা করাতে গেলে তার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসছে। অনেকেই সংক্রমণের ২০-২৫ দিন পরে ডাক্তারের সার্টিফিকেট নিয়ে বিমানে যাত্রা করছেন। আমরা চাই, এইটুকু অন্তত রাজ্য সরকার অনুমতি দিক।”
তবে, যে হারে যাত্রী সংখ্যা ক্রমশ কমছে, তাতে চলতি মাসেই দেশ জুড়ে অভ্যন্তরীণ উড়ান পরিষেবা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কাও দেখছেন অনেকে। ২০২০ সালের মার্চে যেমন সারা দেশ জুড়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল যাবতীয় অভ্যন্তরীণ উড়ান পরিষেবা।
উড়ান সংস্থার এক কর্তার কথায়, “শুধু উড়ান নয়, সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে সড়ক ও রেল পরিবহণও বন্ধ করতে হবে। এখন গ্রীষ্মকালীন উড়ানসূচি চলছে। আমরা যে প্রস্তাবিত উড়ানসূচি দিয়েছিলাম, লোকসানের কারণে তা চালাতে পারছি না। কোথাও একই গন্তব্যের একাধিক উড়ানের জায়গায় একটি উড়ান যাচ্ছে। কোথাও যাত্রী না পেয়ে অন্য শহর ঘুরে উড়ান যাচ্ছে। তাতেও মেরেকেটে অর্ধেক বিমান ভরছে না। প্রতিটি উড়ানেই লোকসান। এর থেকে তো গত বছরের মার্চের মতো লকডাউন করে দিলে অন্তত জ্বালানির খরচ বেঁচে যাবে।”
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কর্তাদের মতেও, পরিস্থিতি ভীষণই খারাপ। সরকার লকডাউন যদি না-ও করে, এ ভাবে চললে হয়তো মাসখানেকের মধ্যে কলকাতা থেকে সারা দিনে হাজার তিনেক যাত্রী যাতায়াত করবে। ফলে লোকসানের জেরে উড়ান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে একাধিক সংস্থা।