ঠনঠনিয়া, সোমবার রাতে
মরসুমের প্রথম বড় বৃষ্টি। আর তাতেই সোমবার রাতে ডুবে গেল দক্ষিণ কলকাতার বেশ কয়েকটি এলাকা। বাদ যায়নি ধর্মতলা চত্বরও। মঙ্গলবার সকালেও সেখানে ছিল জল-ছবি। তবে বাস্তব পরিস্থিতি যা-ই হোক, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘বেশি জল ঢাললে বাথরুমেও তো জল জমে।’’ অর্থাৎ, এই জল জমাকে তেমন কিছু নয় বলেই মনে করছেন পুরকর্তারা।
সোমবার রাতের বৃষ্টিতে রীতিমতো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে নগর-জীবন। দক্ষিণ কলকাতার রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিক রোড, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড কানেক্টর, যোধপুর পার্ক-সহ ৯৩, ৯৯, ১০১, ১০২, ১০৭ এবং ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের গলির ভিতরের কিছু রাস্তা জলে ডুবে যায়। ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘১৯৭৮ সালের ভয়াবহ বৃষ্টির সময়েও জলমগ্ন হয়নি, এমন এলাকাতেও এ বার জল জমেছে।’’ রাতে বাড়ি ফেরার সময়ে রীতিমতো নাজেহাল হতে হয় সন্তোষপুর, বাঘাযতীন এলাকার বহু বাসিন্দাকে। কোথাও প্রায় ঘণ্টা তিন-চার, কোথাও বা এ দিন সকাল পর্যন্ত জল জমে ছিল। বাদ যায়নি উত্তর কলকাতার ঠনঠনিয়াও। মঙ্গলবার সকালে ধর্মতলায় ট্রামডিপোর বাইরে জল জমে ছিল। তার উপরে ওই রাস্তায় গাছ উপড়ে পড়ায় ব্যাহত হয় স্বাভাবিক যান-চলাচল। বেলা পর্যন্ত তা সরানো হয়নি। যদিও পুরকর্তাদের হিসেবে, সে সব তেমন কিছু নয়।
যোধপুর পার্ক, সোমবার রাতে
পুরসভার নিকাশি দফতর সূত্রের খবর, কলকাতা শহরের ভৌগোলিক অবস্থান যা, তাতে এক ঘণ্টায় ৬০ মিলিমিটারের উপরে ভারী বর্ষণ হলে জল জমবে। তবে রাতভর টিপ-টিপ করে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও জল জমবে না। ওই দফতরের এক অফিসার জানান, সোমবার রাতে এক ঘণ্টায় দক্ষিণ কলকাতার কোথাও কোথাও ৭০ থেকে ১০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তায় জল জমে যায়। আর বৃষ্টি বেশিক্ষণ চলায় দীর্ঘক্ষণ জল জমেও থাকে। অনেক রাতে কোনও কোনও রাস্তা জলমুক্ত হয়েছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের বিভিন্ন এলাকায় ৭৩টি নিকাশি পাম্পিং স্টেশন রয়েছে। সেখানে সাড়ে তিনশোরও বেশি পাম্প রয়েছে। ওই সব পাম্প বৃষ্টির সময়ে জল জমলেই তা টেনে বার করে দেবে। তা সত্ত্বেও কেন জল জমল এ বার?
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, কিছু এলাকায় এখনও নিকাশি নালার কাজ করতে হবে। বেশি বৃষ্টি হলে সমস্যা একটু হয় বটে, তবে এক সময়ে ভারী বর্ষণ হলে যে ভাবে দিনের পর দিন রাস্তা জলে ডুবে থাকত, এখন তা আর নেই। এটা তাঁদের সাফল্য বলেই মেয়রের দাবি। তবে মেয়র যতই নিজেদের বোর্ডের সাফল্যের জাহির করুন না কেন, সোমবারের বৃষ্টি লাগাতার হলে পুরনো সেই জল-ছবিই ফুটে উঠত বলে মনে করেন শহরবাসীদের অনেকেই। নিকাশি দফতরের একাধিক অফিসারের মতে, শহরে যত সংখ্যক পাম্প রয়েছে, তাতে বৃষ্টির জল বার করতে বেশি সময় লাগার কথা নয়। তবু এই ভাবে জল জমছে কী কারণে?
ধর্মতলা, মঙ্গলবার সকালে
এর পিছনে নিকাশি এবং জঞ্জাল দফতরের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন পুরসভার একাধিক ইঞ্জিনিয়ার। তাঁদের কথায়, রাস্তায় গালিপিট নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। ফলে রাস্তায় জল জমে থাকে। জঞ্জাল দফতরের যে সব কর্মী প্রতিদিন রাস্তা পরিষ্কার করেন, তাঁরা ওই কাজ নিয়মিত করলে জল সহজেই বার হয়ে যেত। একই সঙ্গে শহরের সব রাস্তা পুরসভার নয়। যে যে রাস্তা সরকারের বিভিন্ন দফতরের আয়ত্তে, সেই সব সংস্থাকেও সজাগ থাকতে হবে বলে মনে করেন পুরসভার এক আমলা।
কলকাতা পুরসভার নিকাশি দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, সোমবারের বৃষ্টির পরিমাণ সব থেকে বেশি ছিল যোধপুর পার্কে। সেখানে বৃষ্টি হয়েছে এক ঘণ্টায় ১২৫ মিলিমিটার। তার ফলে লেক গার্ডেন্স, যোধপুর পার্ক এবং যাদবপুরের একাংশে জল জমে ছিল এ দিন সকালেও। এ ছাড়াও, ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের দু’ধারেই জল জমে যায়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য মাদুরদহ, আনন্দপুর, মুকুন্দপুর-সহ গড়িয়ার বিস্তীর্ণ অংশ।
পুরসভা সূত্রের খবর, সোমবারের ভারী বর্ষণে পুর-প্রশাসন অস্বস্তিতে। কারণ তাঁরা জানেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেও এ ব্যাপারে সজাগ। সোমবার তিনি শহরে না থাকলেও সব কিছু খোঁজখবর নিয়েছেন। তাই আগামীতে শহরে যাতে দ্রুত জমা জল সরানো যায়, তার জন্য আজ বুধবার পুরসভায় জরুরি বৈঠক ডেকেছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। থাকবেন নিকাশি দফতরের মেয়র পারিষদ তারক সিংহও। ১৬ নম্বর বরোর এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে জল জমার চিত্র ও তা রোধ করার উপায় জানতে চাওয়া হবে।