স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে বামেরা ছিল ‘ব্রিটিশের চর’— মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যে শুক্রবার তোলপাড় হল পুর-অধিবেশন। ওই মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবি তুলে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন বিরোধী বাম কাউন্সিলরেরা। তাঁদের অভিযোগ, মেয়র ইতিহাসকে বিকৃত করেছেন। তাতে অবশ্য কর্ণপাত না করে মেয়র তাঁর বক্তৃতা চালিয়ে যান। প্রতিবাদে কাজ না হওয়ায় এক সময়ে অধিবেশন কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান বামেরা। প্রায় ঘটনাবিহীন এক অধিবেশন শেষ লগ্নে উত্তাল হয়ে ওঠে। মেয়র অবশ্য বামেদের কক্ষ ত্যাগের ঘটনাকে ‘নাটক’ বলে অভিহিত করেছেন।
অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর-পর্ব মিটতেই প্রথম প্রস্তাব উত্থাপন করেন তৃণমূলের কাউন্সিলর তথা ১০ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্ত। তাঁর প্রস্তাব ছিল, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা শহরে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে শহর জুড়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার আর্জি জানান তিনি। জবাবে বিরোধী দলনেত্রী তথা সিপিএম কাউন্সিলর রত্না রায়মজুমদার বলতে থাকেন, নিজেদের ঢাক পেটানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতো মেয়র পুরসভার উন্নয়ন করলেও কোনও দিন তা বিজ্ঞাপন করে জাহির করতে চাননি। আর তৃণমূলের কাউন্সিলরেরা নিজেদের প্রচার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বিরোধী নেত্রীর ওই কথা শুনেই মাইক হাতে নিয়ে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলতে শুরু করেন, ‘‘নেতাজি নিয়ে আপনাদের এত শ্রদ্ধা তখন কোথায় ছিল? বামেরাই তো নেতাজিকে তোজোর কুকুর বলেছিলেন।’’ কক্ষ জুড়ে তৃণমূল কাউন্সিলরেরা টেবিল চাপড়ে বিরোধীদের কটাক্ষ করতে শুরু করেন। মেয়র ফের বলতে থাকেন, ‘‘সে সময়ে বামেরা তো ব্রিটিশের চর বৃত্তি করেছিল। ব্রিটিশকে খবর পাচার করত।’’ মেয়রের কথা শেষ হতেই হইচই শুরু করেন বাম কাউন্সিলরেরা। অধিবেশন-কক্ষ থেকে ওয়াক আউট করেন তাঁরা। পুরসভার করিডরে মেয়রের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে ঘোরেন তাঁরা। পরে রত্নাদেবী জানান, মেয়রের মতো দায়িত্বশীল পদে থেকে শোভনবাবু ইতিহাসকে বিকৃত করেছেন। ওঁর লজ্জা হওয়া উচিত।’’
জবাবে মেয়র বলেছেন, ‘‘যা বলেছি তথ্য অনুসারে। কোথাও বিকৃত হয়নি। মানা না মানা ওঁদের ব্যাপার। মানুষ সব জানে।’’