(বাঁ দিকে) ফিরহাদ হাকিম, সজল ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে রবিবার খাস কলকাতায় আজোয়ন হতে চলেছে দেব দীপাবলির। এ বার সেই দেব দীপাবলির আয়োজন নিয়ে জোর তরজায় জড়াল তৃণমূল-বিজেপি, দু’পক্ষ। শনিবার কলকাতা পুরসভার অধিবেশন শেষে কলকাতায় দেব দীপাবলির আয়োজনে কলকাতায় পুরসভার নাম জড়ানোয় প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ। পাল্টা জবাব দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিমও।
৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সজল বলেন, ‘‘তোষণের রাজনীতি করেই চলেছে রাজ্য সরকার। এ বার হিন্দু তোষণের চেষ্টা চলছে। যে হেতু লোকসভা ভোট আসছে, তাই এখন হিন্দু ভোট পেতে কলকাতা পুরসভার মতো একটি সংস্থা এই ধরনের উৎসবের আয়োজন করছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘অযোধ্যাতেও রামমন্দির তৈরি হচ্ছে, সেই মন্দির তৈরি করছে একটি ট্রাস্ট। আর বাংলায় কলকাতা পুরসভার দেব দীপাবলির আয়োজন করছে। রাজ্য সরকার দিঘায় জগন্নাথ মন্দির তৈরি করছে। এ গুলো কখনওই সরকারের কাজ হতে পারে না।’’
জবাবে মেয়র ফিরহাদ বলেন, ‘‘তৃণমূল সারা বছর মানুষের সঙ্গে থাকে। তাই ধর্মের রাজনীতি করে আমাদের ভোটের চিন্তা করতে হয় না। বিজেপিই ধর্মের রাজনীতি করে ভোট পাওয়ার চেষ্টা করে। যা বাংলায় তাদের জমি তৈরি করতে দেবে না।’’ তিনি আরও দাবি করেন, ‘‘এই উৎসবের আয়োজন করছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এর জন্য কলকাতা পুরসভার একটি টাকাও খরচ হয়নি। তাই আমরা যে সরাসরি এই উৎসবের আয়োজন করছি, তা বলা যাবে না।’’
যে বাজা কদমতলা ঘাটে এই উৎসবের আয়োজন করা হবে, সেখানে এমনিতেই প্রতিদিন গঙ্গা আরতি হয়। চলতি বছরেই মুখ্যমন্ত্রী ওই গঙ্গা আরতির সূচনা করেছেন। কলকাতা পুরসভার তরফে এই গঙ্গা আরতি আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে ‘দেবোত্তর জয়চণ্ডী ঠাকুরানি ট্রাস্ট’। দেব দীপাবলি উৎসবেরও আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে তারাই। ইতিমধ্যেই তারা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে। তাদের যাবতীয় সহায়তা করছে কলকাতা পুরসভা।
এমনই বিতর্কের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রবিবার এই উৎসবের সূচনা করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল কলকাতা পুরসভা। কিন্তু তিনি উৎসব সূচনার দায়িত্ব দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদকে। রবিবার বিকেলে বাজা কদমতলা ঘাটে উৎসবের সূচনা করবেন মেয়র। থাকবেন দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ মালা রায়-সহ কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদরা।
এমনিতে কলকাতায় কখনওই গঙ্গার ঘাটে দেব দীপাবলির চল নেই। মূলত উত্তর ভারতে এই উৎসবের রমরমা। কিন্তু কলকাতাতে এই ধরনের আয়োজন প্রথম বার হচ্ছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে, হেমন্ত পূর্ণিমার আগে একাদশীতে বিষ্ণু নিজের নিদ্রা ভঙ্গ করেন। তাই এই পূর্ণিমায় দেবলোকে সে দিন দেব দীপাবলি উৎসব পালিত হয়। আবার পাশাপাশিই কথিত, এই তিথিতে মহাদেব অর্ধনারীশ্বর রূপে বধ করেছিলেন ত্রিপুরাসুরকে। তাই এই পূর্ণিমা তিথি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র। যে কারণে গোটা উত্তর ভারত জুড়ে দেব দীপাবলি উৎসব পালিত হয়। ঘটনাচক্রে, পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি এলাকায় আবার এই দিনটিকে রাস উৎসব হিসেবে পালন করা হয়। নবদ্বীপ, শান্তিপুর, দাঁইহাটের মতো জায়গায় আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হয় সেই উৎসব। কিন্তু দেব দীপাবলির আয়োজন কলকাতায় এই প্রথম।