প্রতীকী চিত্র।
কোনও দিন যা হয় না, সেটাই হয়েছিল। আচমকাই ভাগ্নেকে খেলতে নিয়ে গিয়েছিল মামা। তার পরেই নিখোঁজ হয় দশ বছরের ভাগ্নে। মুক্তিপণ চেয়ে ফোন আসে বালকের মায়ের কাছে। যে বালক রোজ পার্কে একা খেলতে যায়, তাকে কেন তার মামা হঠাৎ করেই খেলতে নিয়ে গেল, সেই প্রশ্নই ভাবাচ্ছিল তদন্তকারীদের। শেষ পর্যন্ত পুলিশ জানতে পারল, ভাগ্নেকে অপহরণ করিয়েছিল মামাই।
লালবাজার জানিয়েছে, ওই ঘটনায় শনিবার ভোরে মহম্মদ ইমরান, রণজিৎ কুমার এবং বিশ্বজিৎ কুমার নামে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে তিলজলা থানার পুলিশ। ইমরান সম্পর্কে ওই বালকের মামা। তাকে গ্রেফতারের পরে রণজিৎ ও বিশ্বজিৎকে পুলিশ পর্ণশ্রী থানা এলাকার একটি গেস্ট হাউস থেকে ধরে। তদন্তকারীরা জানান, ভাগ্নের পরিবারের থেকে মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যেই বিহারের ছাপরা থেকে রণজিৎ ও বিশ্বজিৎকে ভাড়া করে এনেছিল ইমরান। অপহৃত বালককে ওই গেস্ট হাউস থেকেই উদ্ধার হয়। ধৃতদের এ দিন আলিপুর আদালতে তোলা হলে ন’দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয় বলে সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল জানিয়েছেন।
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ওই বালক তপসিয়া রোডে মায়ের সঙ্গে থাকে। বাবা সৌদি আরবে কর্মরত। তদন্তকারীরা জানান, অন্যান্য দিন একা গেলেও শুক্রবার বিকেলে ইমরান তার ভাগ্নেকে খেলতে নিয়ে যায়। কিন্তু রাতেও সে বাড়ি না ফেরায় তার মা বিভিন্ন আত্মীয়ের বাড়িতে খুঁজতে যান। ইতিমধ্যে বালককে অপহরণ করা হয়েছে জানিয়ে তার মায়ের মোবাইলে একটি ফোন আসে। ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। রাতে বালকের মা তিলজলা থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, হঠাৎ করে ইমরানের তার ভাগ্নেকে খেলতে নিয়ে যাওয়া, ভাগ্নের নিখোঁজের ঘটনায় তার নির্লিপ্ত থাকা, অভিযোগ জানাতে তার থানায় না যাওয়ার ঘটনাই তদন্তকারীদের সন্দেহ বাড়িয়ে দেয়। দিদিকেও সে পুলিশের কাছে যেতে বারণ করেছিল। এমনকি দিদির মোবাইল থেকে সে অপহরণকারীর নম্বরও মুছে দেয়।
পুলিশের ডাকে এক বার থানায় গিয়েছিল ইমরান। পরে আর তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। এর পরেই অপহরণের ঘটনায় তার জড়িয়ে থাকার সন্দেহ জোরালো হয় পুলিশের মনে। রাতেই তাকে তুলে এনে জেরা শুরু করলে ইমরান অপহরণের কথা স্বীকার করে। তার হোয়াটসঅ্যাপে বাকি অভিযুক্তদের কথোপকথন মেলে। পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার অন্য দুই অভিযুক্ত বিমানে কলকাতায় এসে পর্ণশ্রীর ওই গেস্ট হাউসে ওঠে। সেখানে শুক্রবার ভাগ্নেকে গাড়ি করে পৌঁছে দিয়েছিল ইমরানই। দিদির বিরুদ্ধে পুরনো রাগের প্রতিশোধ নিতেই সে ওই ঘটনা ঘটায় বলে ইমরান পুলিশকে জানায়।