এ ভাবেই পড়ে রয়েছে পানীয় জলের পাউচের স্তূপ। পাশেই চলছে প্রস্রাব। সোমবার, সেন্ট্রাল পার্কে। নিজস্ব চিত্র
জলের অভাব নেই। তবে পান করার রুচি হচ্ছে না কারও।
সুষ্ঠু ভাবে আয়োজিত বইমেলার রেশ না-ফুরোতেই মাঠ জুড়ে স্তূপীকৃত ভাবে পড়ে থাকা পানীয় জলের পাউচের ছবিটা ধাক্কা দিচ্ছে বিক্রেতাদের একাংশকে। সোমবার সকালেই বইমেলার মাঠে বিপুল পরিমাণে পানীয় জল অপচয়ের অভিযোগ উঠেছে মেলার উদ্যোক্তা বুকসেলার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স গিল্ডের দিকে। কেন এমন হল, উদ্যোক্তাদের কাছে সদুত্তর মেলেনি।
সল্টলেকে মেলার মাঠে সাত এবং আট নম্বর গেটের মাঝখানে চোখে পড়ছিল অপচয়ের ছবিটা। কাছেই পরপর দমকলের অফিস, পুলিশের কিয়স্ক বা নগরোন্নয়ন দফতরের ছাউনি। ওই তল্লাটেই এক ধারে ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে গুচ্ছের জলের পাউচ। মেলার মাঠের সরকারি কর্মী থেকে শুরু করে দর্শনার্থীদের তেষ্টা মেটাতে পরিস্রুত পানীয় জলের এই পাউচের ঢালাও জোগান রেখেছিল রাজ্য সরকারের জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগ। সেই পাউচেরই একটা বড় অংশের এখন এই দশা! এ দিন সকালে মাঠে গিয়ে অনেকেরই চোখে পড়েছে, ডাঁই করে মাঠে পাঁচিল ঘেঁষে পড়ে থাকা পাউচগুলি। আর বইমেলার ভাঙা হাটে, ওই তল্লাট যেন এখন খোলা আকাশের নীচে উন্মুক্ত গণশৌচাগার। দেওয়ালের দিকে মুখ করে নির্বিকারে প্রস্রাব সারছেন স্টলের কর্মী, ডেকরেটরের লোকজন অনেকেই।
স্টল খুলতে এসে জনৈক বই-ব্যবসায়ী আশিস বিশ্বাস বলছিলেন, ‘‘জলের উপরেও কারও মায়াদয়া নেই দেখে তাজ্জব হয়ে যাচ্ছি। পারলে নিয়ে চলে যেতাম। কিন্তু লোকে যেখানে প্রস্রাব করছে তার পাশেই জলের পাউচ পড়ে আছে। আর হাত দিতে ইচ্ছে হয় নাকি!’’ অনেককেই হাঁটতে দেখা যাচ্ছে ওই পাউচ মাড়িয়ে। নষ্ট হচ্ছে পাউচ।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের এক কর্তা জানিয়েছেন, প্রতিদিন বইমেলায় গড়ে এক লক্ষ ২০ হাজার করে জলের পাউচ দেওয়া হয়েছিল। প্রধানত জলের এই জোগানই মেলাসুদ্ধ জনতার তেষ্টা মেটাতে কার্যকর হয়েছে। কিন্তু কত পাউচ বাঁচল আর কত পাউচ কাজে লাগল, তার কোনও হিসেব জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের হাতে নেই। এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার পদের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সাধারণত বাড়তি পাউচ আমরা ফিরিয়ে নিই। পরে অন্য কোনও দরকারে তা ব্যবহার করা হয়।’’
কী বলছেন বইমেলার আয়োজকেরা?
বিকেল পর্যন্ত গিল্ডের সভাপতি সুধাংশুশেখর দে-র কাছে এই পানীয় জলের অপচয়ের বিষয়ে কোনও খবরই আসেনি। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণত বাড়তি জলের পাউচ আমরা পিএইচই বিভাগকে ফিরিয়ে দিই।’’ বিকেলে তিনি সব শুনে তৎপর হওয়ার পর চেষ্টা শুরু হয়েছে, যতগুলো সম্ভব জলের পাউচ বাঁচানোর। পাউচগুলি মেলার মাঠ থেকে সরানোর কাজও তখন শুরু হয়। ঠিক কতগুলি পাউচ নষ্ট হল বা বাঁচানো গেল তার অবশ্য হিসেব মেলেনি উদ্যোক্তাদের কাছে।
বড়সড় ছন্দপতন ছাড়া বইমেলা কাটলেও শেষ লগ্নে জলের এই অপচয় নিয়ে দানা বাঁধল খুঁতখুঁতুনি।