ছবি পিটিআই।
কোভিড সংক্রমণ ঠেকাতে বিমান মন্ত্রক নিয়ম করেছে, মাস্ক পরে না-এলে কোনও যাত্রীকে বিমানবন্দরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। কিন্তু এই মুহূর্তে কলকাতা থেকে যে যাত্রীরা দেশের বিভিন্ন শহরে যাচ্ছেন, তাঁদের ৯০ শতাংশই পরিযায়ী শ্রমিক। বেশির ভাগই প্রথম বিমানে চড়ছেন। নিয়মকানুন জানেন না। এমনকি কেন্দ্রের নির্দেশ সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল নন। ফলে অধিকাংশের মুখেই থাকছে না মাস্ক। বিমানবন্দরের প্রবেশপথে নিরাপত্তারক্ষী আটকালে পুরুষ যাত্রীরা রুমাল বার করে মুখে বাঁধছেন। মহিলারা শাড়ির আঁচল জড়িয়ে নিচ্ছেন মুখে।
এই পরিস্থিতিতে আজ, বৃহস্পতিবার থেকে বিমানবন্দরের গেটের বাইরে মাস্ক বিক্রি করা হবে। কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা কৌশিক ভট্টাচার্য বুধবার বলেন, ‘‘যাত্রীরা নিয়ম না-মানলে আমরা তো বসে থাকতে পারি না। তাই মাস্ক বিক্রির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’ যাঁরা মাস্ক পরে আসবেন না, তাঁরা সেই মাস্ক কিনে পরলে তবেই বিমানবন্দরে ঢুকতে দেওয়া হবে।
শুধু মাস্ক পরাই নয়। কেন্দ্রের নিয়ম অনুযায়ী, এখন বিমানে উঠতে গেলে আগে থেকে ওয়েব চেক-ইন করে বোর্ডিং কার্ড সঙ্গে আনতে হবে। প্রথম বার বিমানে চড়া এই শ্রমিকেরা সেই বিষয়ে সড়গড় নন। হাতে কাগজের টিকিট নিয়েই চলে আসছেন। বিমানবন্দরের ৩সি গেটের ভিতরে তাঁদের জন্য কিয়স্ক বসেছে। সেখানে ওয়েব চেক-ইন করে বোর্ডিং পাস নেওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সেই কিয়স্কেও সড়গড় নন অধিকাংশ শ্রমিক। ফলে তাঁদের সাহায্য করার জন্য উড়ান সংস্থার কর্মীদের থাকতে হচ্ছে।
কৌশিকবাবু বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার থেকে উড়ান সংস্থার এবং নিরাপত্তাবাহিনীর কর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। এক-এক জনের ওয়েব চেক-ইন করতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগছে। এর ফলে প্রায় প্রতিদিনই গড়ে ৪০ জন করে যাত্রী উড়ান ধরতে পারছেন না।’’
এত দিন দিল্লি, মুম্বই-সহ দেশের ছ’টি শহরের সঙ্গে কলকাতার সরাসরি উড়ান বন্ধ ছিল। গড়ে প্রতিদিন ১২০টি উড়ান ওঠানামা করছিল। যাত্রী হচ্ছিল প্রায় ১৫ হাজার। মঙ্গলবার সেই ছ’টি শহরের সরাসরি উড়ান চালু হওয়ার পরে উড়ান বেড়েছে ৬৪টি। যাত্রী বেড়েছে প্রায় ১০ হাজার। ফলে আরও হুলুস্থুল অবস্থা। মঙ্গলবারও উড়ান ধরতে পারেননি প্রায় শতাধিক যাত্রী।
বিমানবন্দরের কর্তাদের মতে, ১৫ হাজার যাত্রী নিয়ে তবু পরিস্থিতি সামলানো যাচ্ছিল। কিন্তু সেটা ২৫ হাজার হয়ে যাওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। বৃহস্পতি ও রবিবার আবার ২৫ হাজার যাত্রী হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না।
অধিকর্তা জানান, কেরল-সহ কয়েকটি রাজ্যে যেতে গেলে ই-পাস বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যে শ্রমিকেরা কাজের খোঁজে রাজ্য ছেড়ে যাচ্ছেন, তাঁদের বেশির ভাগেরই গন্তব্য দক্ষিণ ভারত। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে ই-পাস থাকছে না।
সমস্যা হচ্ছে বিমানবন্দরের ভিতরে দূরত্ব-বিধি মানা নিয়েও। যাত্রীরা যাতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলেন, তার জন্য বিমানবন্দরের ভিতরে আলাদা দাগ দেওয়া রয়েছে। তিনটি আসনের মাঝের আসনে লাল চিহ্ন দিয়ে বসতে বারণ করা হয়েছে। অভিযোগ, পরিযায়ী শ্রমিকেরা সেই সব নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না। উড়ান সংস্থা সূত্রের খবর, বিমানের ভিতরেও এমন যাত্রীদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন বিমানসেবিকারা।