অভিজ্ঞতা দুই মন্ত্রীর

খুচরো বাজারে সব্জির দাম পাইকারির চার গুণ

ক্যাপসিকাম কত করে? জিজ্ঞেস করতেই দোকানদার সটান দাম হাঁকলেন, পঞ্চাশ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম। বিস্মিত ক্রেতা বললেন, ‘‘পনেরো মিনিট আগেই তো কোলে মার্কেটের পাইকারি বাজারে দেখে এলাম ৬০ টাকায় এক পাল্লা (পাঁচ কেজি)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২১
Share:

কোলে মার্কেট পরিদর্শনে দুই মন্ত্রী, তপন দাশগুপ্ত ও পূর্ণেন্দু বসু। বৃহস্পতিবার। — নিজস্ব চিত্র

ক্যাপসিকাম কত করে? জিজ্ঞেস করতেই দোকানদার সটান দাম হাঁকলেন, পঞ্চাশ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম। বিস্মিত ক্রেতা বললেন, ‘‘পনেরো মিনিট আগেই তো কোলে মার্কেটের পাইকারি বাজারে দেখে এলাম ৬০ টাকায় এক পাল্লা (পাঁচ কেজি)। অর্থাৎ, ১২ টাকা টাকা কেজি। দামে এত ফারাক কেন?’’

Advertisement

ক্রেতার কথা শুনে থমকে যান মানিকতলা বাজারের সব্জি ব্যবসায়ী প্রণব আদক। এক গাল হেসে বললেন, ‘‘স্যার, চল্লিশ টাকা কেজি দরে নিয়ে যান।’’ ক্যাপসিকামের দর এক ধাক্কায় কেজিতে দশ টাকা কমে যাচ্ছে শুনে পকেট থেকে রুমাল বার করে ঘাম মুছতে শুরু করেছেন দুই ক্রেতা। এই দুই ক্রেতা অবশ্য যে সে লোক নন, খোদ রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু এবং কৃষি বিপণনমন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত।

পাইকারি হারে যে সব্জি কোলে মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা দরে, মাত্র দু’কিলোমিটার দূরত্বে সেই সব্জিই বিক্রি হচ্ছে চারশো শতাংশেরও বেশি দামে। দামের এত ফারাক স্বভাবতই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে সরকারি নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা নিয়ে। মন্ত্রী-অফিসার দেখে হয়তো মানিকতলার ওই ব্যবসায়ী কেজিতে ১০ টাকা দর কমিয়েছেন, কিন্তু তা যে ক্ষণস্থায়ী সে কথা বুঝেছেন ওই বাজারের অন্য ক্রেতারাও। তবে খুচরো বাজারে এত গুণ দর বেশি হওয়াটা যে সরকারকে অপদস্থ করতে পারে, তা জেনেই টাস্ক ফোর্সের এক সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে মত প্রকাশ করেন যে, মন্ত্রীদের দেখে পাইকারি বাজারে ওরা দর এতটা কমিয়ে দিয়েছে। দাম এত কম হতে পারে না।

Advertisement

বৃহস্পতিবার, মাস পয়লার বাজারে সব্জির দরদাম দেখতে বেরিয়েছিলেন রাজ্যের ওই দুই মন্ত্রী। বেশ কয়েক দিন ধরেই অভিযোগ উঠছে, পাইকারি বাজারের সঙ্গে রিটেল দোকানে সব্জির দরের ফারাক অনেকটা। তা যাচাই করতেই এ দিন কোলে মার্কেট এবং মানিকতলা বাজারে যান মন্ত্রীরা। সঙ্গে ছিলেন রবীন্দ্রনাথবাবুও। কিন্তু দুই বাজারে দরের ফারাক দেখে তাঁদের চোখ কপালে ওঠে। রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপকুমার মজুমদারও শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘খুব বেশি হলে ৫০ শতাংশ বাড়তে পারে দাম। কিন্তু এক লাফে ৪০০ গুণ বেশি!’’ এর কোনও ব্যাখ্যা তাঁর জানা নেই বলে জানান প্রদীপবাবু।

কেমন ছিল কোলে মার্কেট এবং মানিকতলায় সব্জির দর? বাঁধাকপির পাইকারি দর ১০ টাকা কেজি। মানিকতলায় তা ২০-২৫ টাকা। মাঝারি মাপের ফুলকপি পাইকারি দরে আট টাকা পিস, রিটেল বাজারে তা ১৮-২০ টাকা। টোম্যাটোর পাইকারি দর পনেরো টাকা আর মানিকতলা বাজারে সেটাই বিকোচ্ছে ৩০ টাকায়।

পাইকারি বাজারের সঙ্গে মানিকতলা বাজারের দরের এই ফারাক দেখে টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথবাবু মন্ত্রীদের বোঝান, ‘‘এরা কিন্তু আমাদের দেখে কম দাম বলছে। পাইকারি বাজারেও এত কম দাম হতে পারে না!’’ তাতেই দুই বাজারে দামের ব্যবধান এত বেড়েছে। তাঁর সংশয়, তাঁরা বাজার ছাড়লেই আবার দাম চড়াবেন ব্যবসায়ীরা। দামের এই হেরফের কী ভাবে কাটানো যায়, তা নিয়ে আলোচনাও করেন দুই মন্ত্রী।

তবে রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতর জানায়, এ দিন সুফল বাংলা গাড়ি থেকে তারা ক্যাপসিকাম বিক্রি করেছে ৪৫ টাকায়। যা আজ, শুক্রবার আরও কমে কেজি প্রতি ৩৮ টাকা হবে।

আলুর দর নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন মন্ত্রীরা। মানিকতলা বাজারে গিয়ে তাঁরা দেখেন, জ্যোতি আলু আঠেরো টাকা, চন্দ্রমুখী আঠাশ টাকা, পেঁয়াজ পঁচিশ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যেখানে কোলে মার্কেটের পাইকারি বাজারে জ্যোতি আলুর দাম ছিল প্রতি কেজি বারো টাকা, চন্দ্রমুখী প্রতি কেজি বাইশ টাকা, পেঁয়াজ প্রতি কিলো ষোলো টাকা। অথচ গত প্রায় সাত মাস ধরে সুফল বাংলায় জ্যোতি আলু বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ১৪ টাকায়। তবে আজ, শুক্রবার ওই আলুর দাম কেজি প্রতি ১২ টাকা হবে বলে জানিয়েছেই সুফল বাংলার কর্তারা।

এ দিকে মন্ত্রীরা মানিকতলার খুচরো বাজারে আছেন— এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই বাজারে আচমকা কমে যায় আলু-পেঁয়াজের দাম। জ্যোতি আলুর দাম এক লাফে পৌঁছে যায় প্রতি কেজি ষোলো টাকা, চন্দ্রমুখী আলু পঁচিশ টাকা এবং পেঁয়াজ প্রতি কেজি বাইশ টাকায়। যা দেখে কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বাজারে দাঁড়িয়েই বিক্রেতাদের বলেন, ‘‘এক বাজারে তো দু’টো দাম চলতে পারে না। আপনারা বাজার কমিটির সঙ্গে বসে দাম ঠিক করে নিয়ে বেচুন।’’ এই উক্তি শুনেই মানিকতলা বাজারে এলাকার এক বাসিন্দা সাধন মণ্ডলের আক্ষেপ, ‘‘মন্ত্রীরা চলে গেলে আবার আলু আঠেরো টাকা হয়ে যাবে।’’

দামের ফারাক সম্পর্কে মানিকতলা বাজার কমিটির সম্পাদক প্রভাত দাসের যুক্তি, ‘‘এতটা বেশি হওয়ার কারণ নেই। দেখতে হবে।’’ কৃষি বিপণন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘খুচরো বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য খুচরো বাজার কমিটিগুলির সঙ্গে কথা বলা হবে।’’ রাতে মন্ত্রী তপনবাবু বলেন, ‘‘এক শ্রেণির ফড়ে এটা করছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement