সংরক্ষের কোপে পড়তে পারেন বহু হেভিয়েট নেতা। গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ।
আসন সংরক্ষণের কারণে তৃণমূলের বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা এ বছর কলকাতা পুরসভা ভোটে নিজের গড় থেকে লড়তে পারছেন না। তার মধ্যে চারজন মেয়র পারিষদ এবং দু’জন বরো চেয়ারম্যান যেমন রয়েছেন, তেমনই ‘প্রভাবশালী’ কয়েক জন কাউন্সিলরও আছেন বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
শুক্রবার আসন সংরক্ষণ নিয়ে খসড়া বিজ্ঞপ্তি জারি হতে চলেছে। এই বিজ্ঞপ্তির পরে কারও কোনও আপত্তি বা সেখানে কোনও ভুল থাকলে আবেদন জানানো যাবে। সংশোধনের পর আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এর পরই নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পালা। রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, রাজ্যের ৯৩টি পুরসভার মধ্যে কলকাতা এবং হাওড়া পুরসভার ভোট এপ্রিলের শুরুতে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাকি পুরসভাগুলির ভোট মে মাসে হতে পারে।
কলকাতার পুরভোটে আসন সংরক্ষণের খসড়া বিজ্ঞপ্তি এখনও জারি হয়নি। তার আগেই আসন সংরক্ষণ নিয়ে কেউ দলের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন, কোনও কোনও তৃণমূল নেতার গলায় শোনা গেল আবার অভিমানী সুর। যাঁরা নিজের এলাকা থেকে ভোটে দাঁড়াতে পারছেন না, তাঁরা এ বার আদৌ নির্বাচনে লড়তে পারবেন কি না, তা নিয়ে চলছে জল্পনাও। প্রশাসন সূত্রে খবর, আসন সংরক্ষণের কারণে মেয়র পারিষদদের মধ্যে স্বপন সমাদ্দার, রতন দে, দেবব্রত মজুমদার, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়েরা যে ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত হয়েছেন, সেখানে থেকে এ বার নির্বাচনে লড়তে পারবেন না। আবার একই কারণে দুই তৃণমূল নেতা তথা বরো চেয়ারম্যানও নিজের আসন থেকে দাঁড়াতে পারছেন না ওই তালিকা অনুযায়ী।
কোপ পড়তে চলেছে বামেদের আসনেও। সিপিএমের তরুণ তুর্কি হিসেবে পরিচিত বেহালার কাউন্সিলর ১২৭ নম্বর ওয়ার্ডটি (তফসিলি জাতি, মহিলা) সংরক্ষিত হতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে। আবার ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডটিও মহিলাদের জন্যে সংরক্ষিত হচ্ছে। ফলে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ আরএসপি নেতা দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ও ওই আসন থেকে লড়তে পারবেন না। কলকাতার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা তৃণমূল নেতা চিকিৎসক ডাক্তার শান্তনু সেনের ওয়ার্ডও মহিলা সংরক্ষিত হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
তবে যে আসন নিয়ে সবার নজর রয়েছে, সেই ১৩১ নম্বর, যেখান থেকে গত নির্বাচনে জিতে মেয়র হয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়, সেই ওয়ার্ডটিও সংরক্ষিত হচ্ছে না বলেই খবর। ওই ওয়ার্ড থেকে এ বার শোভনবাবুকে ভোটের ময়দানে লড়তে দেখা যাবে কিনা, তা ভবিষ্যৎ বলবে।
প্রশাসন সূত্রে এই খসড়া তালিকার বিষয়টি জানা গেলেও, শেষ মুহূর্তে কোনও হিসেব-নিকেশ বদলে গিয়েছে কি না, তা অবশ্য শুক্রবার সকালে জানা যাবে। আসন সংরক্ষণ নিয়ে ডান-বাম সব পক্ষেরই নজর রয়েছে। নিজের গড়ে স্থানীয় কাউন্সিলরের যে প্রভাব থাকে, অন্য জায়গা থেকে দাঁড়ালে ভোটের অঙ্কে তার ফল মিলবে কি না, অনেকেই তা নিয়ে চিন্তিত। কেউ কেউ ক্ষুব্ধও।যেমন তৃণমূল নেতা স্বপন সমাদ্দারের বক্তব্য, “আমার এলাকার মানুষ কাঁদছে এ কথা শুনে। আমি দলের বোঝা হতে চাই না। দলের এটা ভাবা উচিত। পাঁচ বছর কাজ করার পর যদি, ওই ওয়ার্ডে না দাঁড়াতে পারি, তাহলে কাউন্সিলরদের মনোবল নষ্ট হয়ে যাবে।”
আবার রতন দে-র গলায় শোনা গেল যেন অনুযোগের সুর। তিনি বলেন, “আমি আর কী বলব বলুন। দল যা সিদ্ধান্ত নেবে, তাই হবে। আমার আর কী করার আছে।”
এ নিয়ে অনেক তৃণমূল নেতা মুখ খুললেও, নাম প্রকাশে তাঁরা অনিচ্ছুক। ওই নেতাদের বক্তব্য, কাউন্সিলর জমি আকড়ে পড়ে থাকেন পাঁচ বছর ধরে। সবার সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলেন। তার পর যখন পরীক্ষার সময় এল, সেখান থেকে পরীক্ষায় বসতেই দেওয়া হল না। এটা ঠিক নয়। আসন সংরক্ষণ নিয়ে সিপিএম কাউন্সিলর নিহার ভক্তের বক্তব্য, “পাঁচ বছর ধরে এই ওয়ার্ডটাকে গুছিয়েছি। এ বার যদি সংরক্ষণের তালিকায় পড়ে যায়, তা হলে কী করব? পার্টি যদি অন্য জায়গা থেকে দাঁড় করায়, আমি দাঁড়াব।”
রাজ্য নির্বাচন দফতরের এক আধিকারিক জানান, এই সংরক্ষণের বিষয়টি মিউনিসিপ্যাল ইলেকশন ম্যানুয়ালে রোস্টার অনুযায়ী ঠিক করা হয়। ওই ওয়ার্ডের জনসংখ্যা বিন্যাসের ভিত্তিতে ঠিক হয়, সংরক্ষণের বিষয়টি। তৃণমূলের বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়ও বলছেন, ‘‘এই তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে দলের কোনও ভূমিকা নেই। পুরোটাই ইলেকশন ম্যানুয়াল অনুযায়ী হয়। কোনও ওয়ার্ড সংরক্ষিত হবে কি হবে না, সেটা দল ঠিক করে না।’’