ফাইল চিত্র।
করোনা ইতিমধ্যেই তার শাখাপ্রশাখা মেলতে শুরু করেছে বিধাননগর পুলিশের ঘরে। প্রতিদিনই কোনও না কোনও পুলিশকর্মী আক্রান্ত হচ্ছেন। এরই মধ্যে আবার কড়া নাড়ছে বিধাননগরের পুরভোট। এই অবস্থায় আগামী ২২ তারিখ পুরভোটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ কী ভাবে করা হবে, সেটাই এখন বড় চিন্তা বিধাননগর কমিশনারেটের অন্দরে। আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, ভোটের সময়ে প্রতি বারই রিজ়ার্ভ ফোর্স থেকে বাহিনীকে কাজে লাগানো হয়। এ বারেও তা হবে। কিন্তু, একের পর এক থানার আধিকারিক অসুস্থ হয়ে পড়লে অন্য ধরনের সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এক আধিকারিক জানান, রিজ়ার্ভ ফোর্স ভোটের দিন কাজ করবে ঠিকই। কিন্তু, এলাকা চেনা কিংবা এলাকা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি ভাল করতে পারেন সংশ্লিষ্ট থানার আধিকারিকেরাই। কারণ তাঁরা জানেন কারা গোলমাল পাকাতে পারে, গোলমাল শুরু হলে কোন নেতার সঙ্গে কথা বলতে হবে।
উল্লেখ্য, করোনায় ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন খোদ বিধাননগর পুলিশের কমিশনার সুপ্রতিম সরকার। সংক্রমিত রাজারহাট থানার আইসি জামালউদ্দিন মণ্ডলও। পাশাপাশি কমিশনারেটের অধীন ১৩টি থানার মধ্যে একাধিক থানায় সাব-ইনস্পেক্টর, এএসআই, সিভিক ভলান্টিয়ার-সহ কোনও না কোনও পুলিশকর্মী আক্রান্ত। শুক্রবারও বিধাননগর (দক্ষিণ) থানার এক সিভিক ভলান্টিয়ারের কোভিড-রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টরেরও উপসর্গ রয়েছে। তাঁদের আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। এই অবস্থায় ভোটের সময়ে পরিস্থিতি কোথায় পৌঁছবে, তা নিয়ে চিন্তিত বিধাননগর কমিশনারেটের আধিকারিকদের একাংশ। এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘রিজ়ার্ভ ফোর্স থাকবে ঠিকই। তবে তার বাইরে আরও কী কী প্রয়োজন, সে সব নিয়ে আলোচনা চলছে। কোভিডের সময়ে বিধানসভা নির্বাচনও হয়েছে। এ বারও নিরাপত্তার দিকে কোথাও কোনও ফাঁক থাকবে না। তবে এটা ঠিক, বিধানসভা ভোটের সময়ে এত দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েনি।’’
পুলিশকর্মীরা আক্রান্ত হওয়ায় কলকাতার একটি থানা ইতিমধ্যেই বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তাই তেমন পরিস্থিতির কথাও মাথায় রাখতে হচ্ছে কমিশনারেটের কর্তাদের। থানার আইসি-দের সঙ্গে বৈঠকে পুলিশকর্তারা সব সময়ে নির্দেশ দিচ্ছেন পুলিশকর্মীদের যথাসম্ভব সতর্ক থাকতে। যাতে কোনও ভাবে একসঙ্গে একাধিক পুলিশকর্মী সংক্রমিত না হয়ে পড়েন।
বিধানসভা নির্বাচনের সময়েই কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন বিমানবন্দর থানার আইসি। ভোটের সময়ে কোয়রান্টিনে থেকে তিনি ফোনে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কমিশনারেটের এক কর্তার কথায়, ‘‘এক জন আধিকারিকের পক্ষে ফোনে বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া আর থানায় উপস্থিত থেকে কাজ করা— দুইয়ের মধ্যে অনেকটাই ফারাক। তাই সবাইকে বলা হচ্ছে যতটা সম্ভব সতর্ক থাকতে। ব্যারাকে ফিরে গিয়ে পোশাক বদল করতে হবে। সব সময়ে ব্যবহার করতে হবে স্যানিটাইজ়ার।’’
ভোটের এখনও দু’সপ্তাহ বাকি। এরই মধ্যে প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করতে হচ্ছে পুলিশকর্মীদের। আসামিকে গ্রেফতার করার সময়ে তার কাছাকাছি আসতে হচ্ছে। আবার কোনও এলাকায় কোভিড-বিধি বলবৎ রাখার সময়ে জমায়েতের মধ্যে গিয়ে বহু মানুষের সংস্পর্শেও আসতে হচ্ছে তাঁদের। যে কারণে নির্বাচনের আগে একাধিক পুলিশ আধিকারিকের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে।