ফাইল চিত্র।
গত দেড় মাসে সাত জন! চিনা মাঞ্জায় কারও গলা, কারও নাক, কারও বা কপাল কেটে গিয়েছে মা উড়ালপুলে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে মোটরবাইকের চালক বা আরোহী হেলমেট পরে থাকায় কোনও মতে রক্ষা পেয়েছেন। ওই উড়ালপুলের দুর্ঘটনাপ্রবণ অংশের বেশ কিছুটা ঘিরে দেওয়া হয়েছে। সেতু জুড়ে রয়েছে পুলিশি নজরদারি। সেই সঙ্গে আশপাশের এলাকায় চালানো হয়েছে সচেতনতার প্রচার। তা সত্ত্বেও চিনা মাঞ্জা থেকে দুর্ঘটনা আটকানো যায়নি। আজকাল মোটরবাইক আরোহীরা ওই রাস্তা ধরে যেতে রীতিমতো আতঙ্কে ভোগেন। কী ভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে, আপাতত সে প্রশ্নের উত্তর নেই প্রশাসনের কাছেও।
মা উড়ালপুলে চিনা মাঞ্জার দাপট এবং তার জেরে দুর্ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। বিভিন্ন সময়ে সেখানে গলায় বা মুখে সুতো জড়িয়ে গিয়ে জখম হয়েছেন বাইক আরোহীরা। সমস্যার সমাধানে গত বছরের মার্চ ও জুন মাসে দু’দফায় কেএমডিএ-কে চিঠি দিয়েছিল কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ। তাদের প্রস্তাব ছিল, উড়ালপুলের দু’পাশে তারের জাল লাগানো হোক। কেএমডিএ রাজি হয়। সেই মতো ২০ লক্ষ টাকা খরচ করে ‘ফেন্সিং’ বা তারের জাল বসানো হয়েছিল মা উড়ালপুলের কিছু অংশে। গত বছর সেপ্টেম্বরের গোড়ায় সেই কাজ শুরু হয়। চার নম্বর সেতু সংলগ্ন এলাকা থেকে শুরু করে বোট ক্লাব পর্যন্ত প্রায় ৯০০ মিটার অংশ তারের জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরেও সেতুর উপরে দুর্ঘটনায় রাশ টানা যায়নি। কেএমডিএ-র সেতু বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘পুলিশের তরফে আসা প্রস্তাব অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। আবার যদি প্রস্তাব দেওয়া হয়, আবার কাজ করা হবে।’’
কিন্তু কেন আটকানো যাচ্ছে না দুর্ঘটনা? পুলিশ সূত্রের খবর, যে অংশে তারের জাল দেওয়া হয়েছে, সেখানে দুর্ঘটনা অনেকটাই আটকানো গিয়েছে। সাড়ে চার কিলোমিটার লম্বা ওই উড়ালপুলের দু’পাশে বেশ কিছু বড় বাড়ি থাকলেও একটা বড় অংশের দু’দিক কার্যত ফাঁকা। সেই ফাঁকা ও অরক্ষিত অংশ দিয়েই ঘুড়ির সুতো উড়ে আসায় ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা।
দুর্ঘটনা বাড়তেই অবশ্য একের পর এক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে লালবাজারের তরফে। আশপাশের এলাকায় নজরদারির পাশাপাশি সেতুর উপরে ঘুড়ির সুতো ধরতেও মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশকর্মীদের। সেই সঙ্গে ওই সমস্ত এলাকার থানাগুলির তরফেও চালানো হচ্ছে সচেতনতার প্রচার। এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘আশপাশের এলাকায় লিফলেট বিলি থেকে মাইকে প্রচার, সব রকম চেষ্টাই করা হচ্ছে! উড়ালপুলের উপরে শুধু ঘুড়ির সুতো ধরতেই কয়েক জন পুলিশকর্মী থাকছেন প্রায় সব সময়ে। কিন্তু চিনা মাঞ্জা সব সময়ে তাঁদেরও নজরে আসে না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে।’’
বর্তমানে ফের ওই উড়ালপুলে পর পর দুর্ঘটনা ঘটতে থাকায় নতুন আর কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন লালবাজারের কর্তারা। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই আমরা বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেছি। দ্রুত কেএমডিএ-র সঙ্গে কথা বলে দুর্ঘটনা আটকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’