সচেতন নন বহু ডাক্তারই, তাই ঝুঁকি স্ক্রাব টাইফাসে

কী এই স্ক্রাব টাইফাস? ছোট এক ধরনের পোকার কামড়ে এই রোগ হয়। সেই পোকার কামড়ের দাগ এই রোগ চেনার একটি উপায় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ১১:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

সপ্তাহ দুয়েক আগে ‘স্ক্রাব টাইফাস’ নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসা বিধি জারি করেছে স্বাস্থ্য ভবন। কী কী লক্ষ্মণ থাকলে পোকাবাহিত এই রোগের চিকিৎসা শুরু করতে হবে ওই নির্দেশিকায় তা বলা আছে। এর পরেও একাধিক ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, জ্বরের কারণ বুঝতেই অনেকটা সময় চলে যাচ্ছে চিকিৎসকেদের। এ জন্য তাঁদের এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতার অভাবকে দায়ী করছেন চিকিৎসকদের একটি মহল। খাস কলকাতার বাসিন্দা এক স্কুল পড়ুয়ার জ্বরের কারণ বুঝতে দেরি হওয়ায় তাই ফের উঠে আসছে প্রসঙ্গটি।

Advertisement

কী এই স্ক্রাব টাইফাস? ছোট এক ধরনের পোকার কামড়ে এই রোগ হয়। সেই পোকার কামড়ের দাগ এই রোগ চেনার একটি উপায় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এ ছাড়াও রোগ চিহ্নিত করার বেশ কয়েকটি লক্ষণ রয়েছে। নির্দেশিকা বলছে, জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পাঁচ দিন পরেও পরীক্ষায় ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়া ধরা না পড়লে সতর্ক হতে হবে।

র‌্যাশ, গ্রন্থির ফোলা ভাব, পেশির যন্ত্রণা এবং শুকনো কফ ওঠার মতো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কি না নজর রাখতে হবে। এগুলি দেখা গেলে দ্রুত ডক্সিসাইক্লিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার কথাও নির্দেশিকায় বলা হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ইলিয়ট রোডের বালক ধর্ষণে অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত

অথচ এই লক্ষণগুলি থাকা সত্ত্বেও উত্তর কলকাতার বাসিন্দা বছর দশেকের বালিকার চিকিৎসা শুরু হতেই পেরিয়ে গিয়েছিল বেশ খানিকটা সময় বলে জানাচ্ছে তার পরিবার। গত ২ ডিসেম্বর জ্বরে আক্রান্ত হয় ওই বালিকা। দ্বিতীয় দিন থেকেই প্রবল জ্বরের সঙ্গে বমি শুরু হয় তার। মেয়েটির বাবা জানান, দর্জিপাড়ার এক চিকিৎসকের কাছে মেয়েকে নিয়ে গেলে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া এবং টাইফয়েডের পরীক্ষা করাতে বলেন তিনি। সব পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু ওষুধে জ্বর না কমায় ৫ ডিসেম্বর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মেয়েকে নিয়ে যান তিনি। ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার রিপোর্ট দেখে ওষুধ দেন চিকিৎসকেরা। তাও জ্বর না কমায় ৮ ডিসেম্বর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মেয়েটিকে ভর্তি করে নেন। তারও পাঁচ দিনের মাথায় পরীক্ষার রিপোর্ট নিশ্চিত করে যে কিশোরী স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত। চিকিৎসার পরে এখন সুস্থ সে।

স্ক্রাব টাইফাস

• কী ভাবে: রিকেটশিয়া নামে জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে এই রোগ হয়। জীবাণুর বাহক হল এক ধরনের লাল রঙের ছোট পোকা।

• লক্ষণ: পোকা কামড়ানোর পাঁচ-সাত দিন পরে জ্বর আসে। কামড়ের দাগ, র‌্যাশ, মাংসগ্রন্থির ফোলা ভাব, হাত-পা ব্যথা, শুকনো কফ ও বমি।

• চিকিৎসা: জ্বরের পাঁচ দিন পরেও রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়া ধরা না পড়লে সতর্ক হতে হবে। স্ক্রাব টাইফাসের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কি না, নজর রাখতে হবে। দেখা গেলে দ্রুত ডক্সিসাইক্লিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে।

• ঝুঁকি: ঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে মস্তিষ্ক, কিডনি, ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কাও রয়েছে।

কিন্তু নির্দেশিকায় উল্লিখিত লক্ষণ বালিকার থাকা সত্ত্বেও কেন দেরিতে শুরু হল চিকিৎসা? কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট এক জনের ক্ষেত্রে কী ঘটেছে, তা না জেনে বলতে পারব না। তবে স্ক্রাব টাইফাস নিয়ে যখন এত হইচই হত না, তখনও আমরা অনেক রোগীকে সুস্থ করেছি। ফলে চিকিৎসায় দেরি হয়েছে বলে মনে হয় না।’’ স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য চিকিৎসক জ্যোতির্ময় পাল বলেন, ‘‘এত সহজে কিছু বলা সম্ভব নয়। রোগীর কী ধরনের লক্ষণ ছিল, তার ভিত্তিতে সে কী চিকিৎসা পেয়েছে, সে সব দেখতে হবে।’’

আরও পড়ুন: উত্তুরে হাওয়ার দাপট শুরু কলকাতায়

এক বেসরকারি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, ‘‘জ্বর আসার সাত দিন পর থেকে একটা ভয় থেকে যায়। ফুসফুস এবং মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াটাই উদ্বেগের। সংক্রমণের কারণে ফুসফুসের রং সাদা হয়ে যায়। আমরা একে বলি, অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিস্ট্রেস সিনড্রোম।’’

‘ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ’-এর চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরির বক্তব্য, ‘‘আমাদের হাসপাতালে গত ছ’মাসে স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত কলকাতা পুরসভার অন্তত ১৫ জন বাসিন্দার চিকিৎসা হয়েছে। চিকিৎসকেদের মধ্যে আরও সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।’’ ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া নিয়ে চিকিৎসকেরা যতটা অবহিত, স্ক্রাব টাইফাসের ক্ষেত্রে যে তা নয়, মানছেন স্বাস্থ্য দফতরের জনস্বাস্থ্য বিভাগের এক আধিকারিকও।

স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘স্ক্রাব টাইফাস নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে স্বাস্থ্য দফতর কাজ করছে। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনকেও এ কাজে সাহায্য করতে বলা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement