প্রতীকী ছবি।
তলপেটে যন্ত্রণা হয়। তবু প্রস্রাব চেপে কাজ করে যান পাটুলিরকল্পনা দেওয়ান (নাম পরিবর্তিত)। কারণ, ই এম বাইপাসের ধারে যে আবাসনে তিনি পরিচারিকার কাজ করেন, সেখানে গৃহকর্তা তাঁকে শৌচালয় ব্যবহার করতে দেন না। কল্পনার কথায়, ‘‘প্রায় ১০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। গৃহকর্তা নিজেদের শৌচালয় ব্যবহার করতেদেন না। বার বার প্রস্রাব করতে আবাসনের ১২তলা থেকে নীচে নামাও সম্ভব হয় না। প্রস্রাব চেপে রাখা ছাড়া তো উপায় নেই।’’
এই সমস্যা শুধু কল্পনার একার নয়। তাঁদের সংগঠন, পশ্চিমবঙ্গ গৃহ পরিচারিকা সমিতিরকার্যকরী সদস্যা স্বপ্না ত্রিপাঠীর দাবি, ‘‘সম্প্রতি ঢাকুরিয়ায় পরিচারিকাদের একটি স্বাস্থ্য শিবির হয়েছিল। সেখানে হাজির ৯০ জনের মধ্যে ৬৮ জনই জানান, ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রস্রাব চেপে কাজ করতে করতে তাঁদের নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। শহরের বিভিন্নআবাসনে যে সব পরিচারিকা কাজ করেন, তাঁদের অনেককেই এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কাজ করতে হয়।’’ এক পরিচারিকার কথায়, ‘‘আমি একটি আবাসনের আটতলার একটি ফ্ল্যাটে কাজ করি। যখনপ্রস্রাব চেপে রাখতে খুব কষ্ট হয়, তখন নীচে এসে কমিউনিটি শৌচালয় ব্যবহার করি।’’ আর এক জন বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে প্রস্রাব আটকেরাখায় নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। তলপেটে যন্ত্রণা হয়। মূত্রথলিতেচাপ পড়ে।’’
সোনারপুরের বাসিন্দা, পরিচারিকা রেবেকা হালদারের(নাম পরিবর্তিত) দাবি, ‘‘আমি দক্ষিণ কলকাতার একটি আবাসনেকাজ করি। শৌচালয় ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। পেটের সমস্যা হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। সংসারের দায় না থাকলে কাজ করতাম না।’’
এখানেই শেষ নয়। স্বপ্নার অভিযোগ, ‘‘কয়েকটি আবাসনে লিফ্টও ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না পরিচারিকাদের। যাঁরাআবাসনের প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় তলের ফ্ল্যাটে কাজ করেন, তাঁরা সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে বাইরেরশৌচালয় ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু তার উপরের তলগুলিতে কাজ করেন যাঁরা, তাঁদের পক্ষে বারবার ওঠানামা করা সম্ভব হয় না।’’তাঁর আরও দাবি, অপরিষ্কার গণ শৌচালয় ব্যবহার করার ফলে অনেকেরই মূত্রনালিতেসংক্রমণ হয়েছে।
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখলেতা থেকে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কাবেশি না হলেও তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে। মূত্রথলিতেচাপ তৈরি হলে কিডনির উপরেওচাপ তৈরি হয়। কিডনি-রোগ চিকিৎসক অরূপরতন দত্ত বলেন, ‘‘প্রস্রাব চেপে রাখলে তা থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা তেমননেই ঠিকই, তবে তাতে কষ্ট অবশ্যই হয়। যাঁদের বিশেষ প্রয়োজনেবার বার জল খেতে হয়, তাঁদেরকাছে ওই পরিস্থিতি আরও বেশি কষ্টকর।’’
শ্রমমন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, ‘‘পরিচারিকাদের শৌচালয় ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না, এইঅভিযোগ সত্যি হয়ে থাকলে তা অমানবিক। আমি গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রীদের অনুরোধ করব, এই ধরনের আচরণ যেন না করা হয়। পরিচারিকাদের সংগঠন চাইলে শ্রম দফতরের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। দফতরইতিমধ্যেই পরিচারিকাদের দক্ষতা বৃদ্ধি-সহ নানা বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। একাধিক বার তাঁদের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে।’’
করোনা সংক্রমণের সময়ে বহু পরিচারিকা কাজ হারিয়েছিলেন। তাঁদের সিংহভাগ এখনও কাজফিরে পাননি। কমেছে বেতনও। সংগঠনের দাবি, দৈনিক ২০০ টাকা বেতনে ১২ ঘণ্টা কাজ করছেন অনেকে। স্বপ্নার দাবি, ‘‘পরিচারিকাদের নানা সমস্যারকথা আগেও শ্রম দফতরকে জানানো হয়েছে। কাজের শর্ত, বেতন, সুযোগ-সুবিধা, কাজের পরিবেশ সম্পর্কে নির্দিষ্ট একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করুক শ্রম দফতর।’’
স্বপ্না জানান, এমন অনেক পরিচারিকা রয়েছেন, যাঁদের বেতন না দিয়ে কাজ থেকে তাড়িয়েদেওয়া হয়েছে। পুলিশের কাছেদরবার করেও লাভ হয়নি।কোভিড-পরবর্তী পরিস্থিতিতে তাঁদেরবেতন কমে গিয়েছে বলে ওঅভিযোগ। স্বপ্নাদের দাবি, এই সমস্যাগুলির সমাধানে শ্রম দফতর উদ্যোগী হোক।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।