বিজন সেতুতেও ফাটল দেখা দিয়েছে। -নিজস্ব চিত্র।
ব্রিজের তলায় দোকান? সবে কড়ায় ডিমের ঝোল চাপিয়েছেন বাপি কাহন। বালিগঞ্জ স্টেশনের কাছে বিজন সেতুর নীচেই তাঁর ভাতের হোটেল। ছবি তোলার সময়েই নজর করেছিলেন। এ বার প্রশ্নটা করতেই বলে উঠলেন, “মরি মরব! অনেকেই তো এর নীচ দিয়ে যাতায়াত করছেন। কেউ তো কিছুই করছে না। মাথায় ব্রিজ ভেঙে পড়লে তবেই হুঁশ ফিরবে।”
বাপ-ঠাকুরদার আমল থেকেই ফুটপাতে ভাতের হোটেলের ব্যবসা। যখন এখানে উড়ালপুল নির্মাণ হয়নি তখন থেকেই এই হোটেল চলছে। মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর বাপির মতোই বিজন সেতু নিয়ে চিন্তায় সেখানকার ব্যবসায়ীরা। বলছেন, ‘‘ওরা (সরকারি আধিকারিকরা) বহুবার দেখে গিয়েছে। কেউ কিছু করছে না। আমাদের তো পেটের দায়ে দোকান খুলতেই হবে।’’
শুধু কি দোকান? সেতুর নীচে মিনিবাসের স্ট্যান্ডও রয়েছে। স্কুলগাড়ি, বাস, অটোর ভিড় লেগেই থাকে। পাশে বালিগঞ্জ স্টেশন, তাই বাড়তি চাপ তো রয়েইছে। বিজন সেতুর স্বাস্থ্যের দিকে তাকালেই আঁতকে উঠতেই হয়।কংক্রিটের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে লোহার কাঠামো। সেই কাঠামোর চারপাশে আগাছার শিকড় আষ্টেপৃষ্টে জড়়িয়ে রয়েছে। সেতুর শুরু থেকে শেষ প্রান্তের বিভিন্ন জায়গায় এমনই অবস্থা। গাছগাছালিতে ভর্তি। যেন সেতুর গায়ে কেউ বাগিচা করেছেন! বিভিন্ন জায়গায় চাঙড় খসে পড়ছে।বাপি বললেন, “কিছু দিন আগেই আমার সামনের দোকানদারের মাথায় চাঙড় ভেঙে পড়ে। আর একজনের দোকানের সামনে একই ঘটনা ঘটেছিল। ও সেই সময় ছিল না বলে প্রাণে বেঁচে গিয়েছে।”
মাঝেরহাট ব্রিজের কাছেই তারাতলা ব্রিজেও ধরেছে ফাটল -নিজস্ব চিত্র।
বিজন সেতুর আর এক প্রান্তে সিকন্দরের জুতোর দোকান। বিহারের বাসিন্দা হলেও, ছোটবেলাতেই কলকাতায় চলে আসেন সিকন্দর। তিনি জানালেন, দু’বছর আগে ব্রিজের হালহকিকত খতিয়ে দেখতে এসেছিলেন কর্তারা। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। তার পর থেকে এই অবস্থাতে রয়েছে সেতুটি। দক্ষিণ কলকাতার সঙ্গে বাইপাসের সংযোগকারী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুর বেহাল দশা কবে বদলাবে, তা নিয়ে চিন্তিত স্থানীয়রাও। তাদের বক্তব্য, ব্রিজ ভেঙে পড়লে, তখন সকলের হুঁশ ফিরবে।
দুই সেতুর হালহকিকত: দেখুন ভিডিয়ো
Send a message
আরও পড়ুন- মাঝেরহাট ব্রিজ বন্ধ, এখন কোন পথে যাতায়াত জেনে নিন
আরও পড়ুন- অনেক সেতুর অবস্থাই খারাপ, বললেন মুখ্যমন্ত্রী, তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ মেট্রোর কাজ
গড়িয়াহাট থেকে গোলপার্কের দিকে যাওয়ার সময় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ঢাকুরিয়া ব্রিজ। ইএম বাইপাস, যাদবপুর, টালিগঞ্জ এলাকার সঙ্গে সংযোগকারী এই সেতুর হালও খুব একটা ভাল নয়। ব্রিজের তলা দখল করে রয়েছেন ফুটপাতবাসীরা। উপরের দিকে নীল-সাদা রং করে চকচকে করা হলেও, ব্রিজের তলার দিকের অবস্থা শোচনীয়। আগাছায় ভর্তি। কোথাও কোথাও ফাটলও রয়েছে। ইঁদুরের অত্যাচারে এমনিতেই ব্রিজের নীচে বড়বড় গর্ত রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় সমস্যা। ব্রিজের তলার মাটি আলগা হয়ে গেলে বড়সড় সমস্যা হতে পারে। তার উপর নিয়মিত যত্ন নেওয়া না হলে, আরও সমস্যা হতেই পারে।
দীর্ঘ দিন ধরে অবহেলার ছবি ফুটে উঠেছে ঢাকুরিয়া ব্রিজে। -নিজস্ব চিত্র।
মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর ঢাকুরিয়া, বিজন সেতুর উপরে বাড়তি চাপ পড়ছে। এই অবস্থায় যদি এখনই বাড়তি উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে বিপদ আরও এগিয়ে আসবে। মাঝেরহাট ব্রিজের থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরেরই রয়েছে তারাতলা ব্রিজ। বয়স খুব একটা বেশি নয়। কিন্তু এর মধ্যেই কিছু কিছু জায়গায় ফাটল ধরা পড়েছে। আগাছাও রয়েছে।