প্রতীকী ছবি।
তেইশ বছর পরে মাথার ভিতর থেকে বেরোল গুলি!
পারিবারিক অশান্তির জেরে গুলিবিদ্ধ হয়েছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। কার্যত মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে ফিরেছিল ১৮ বছরের ওই কিশোর। পরে গুলি বার করার জন্য আর অস্ত্রোপচার করতে রাজি ছিলেন না তার মা। সেই কিশোর এখন বছর একচল্লিশের যুবক। সম্প্রতি কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল তাঁর। চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন, এর নেপথ্যে রয়েছে মাথায় আটকে থাকা সেই বুলেট। শেষে ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস, কলকাতা’ (আইএনকে)-র চিকিৎসকেরা সেটি বার করে বড় ঝুঁকি দূর করলেন। এখন সুস্থ ওই স্কুলশিক্ষক।
মালদহের বাসিন্দা ওই স্কুলশিক্ষক জানাচ্ছেন, ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৯৯ সালে। তিনি মাসির বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতেন। মাধ্যমিকের শেষে নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন। এক দিন কাকার ঘরে তিনি টিভি দেখতে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, সেই সময়ে খুড়তুতো দাদা আচমকাই তাঁর বাঁ কানের উপরের অংশে বন্দুক ধরে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই টিপে দেয় ট্রিগার। গুলিবিদ্ধ হন ওই স্কুলশিক্ষক। তড়িঘড়ি তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেই সময়ে ভগবতীচরণ মোহান্তি নামে যে স্নায়ু-শল্য চিকিৎসক ওই কিশোরের চিকিৎসা করেছিলেন, তিনিই সম্প্রতি মল্লিকবাজারের হাসপাতালে গুলিটি বার করেন। ভগবতীবাবুর কথায়, “ছেলেটি যখন জরুরি বিভাগে এসেছিল, তার অবস্থা ছিল অত্যন্ত সঙ্কটজনক। বুলেটটি ঢোকার দিকে ক্ষত থাকলেও, বেরোনোর চিহ্ন ছিল না। পরীক্ষায় দেখা যায়, সেটি মস্তিষ্কের স্নায়ুর পিছন দিকে আটকে আছে।’’ ওই চিকিৎসক জানান, স্নায়ু যে পর্দায় আচ্ছাদিত থাকে, সেটি ভেদ করে ঢুকেছিল বুলেটটি। ফলে পিজি হাসপাতালে সেই পর্দা মেরামত করা এবং ক্ষত ঠিক করার জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। ভগবতীবাবু বলেন, “সকলেই ভেবেছিলাম, ছেলেটি হয়তো আর বাঁচবে না। কিন্তু কয়েক দিন পর থেকে ওর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে।’’
প্রায় দেড় মাস পিজিতে ভর্তি ছিল ওই কিশোর। কাউকে ভাল মতো চিনতে পারত না। সুস্থ হওয়ার পরেও খুব দুর্বল ছিল। ভগবতীবাবুর চিকিৎসাতেই ছিল সে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে প্রাইমারি টিচার্স বেসিক ট্রেনিং করে ২০০৬ সালে ওই যুবক প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পান। ২০১২-তে তাঁর বিয়ে হয়। স্ত্রীর কথায়, “বিয়ের সময়ে বিষয়টি আমাদের জানানো হয়েছিল। প্রথমে আমি ভয় পাচ্ছিলাম। তখন আমার বাবা-মা বোঝান, বিয়ের পরেও তো কোনও কিছু ঘটতেই পারে। সেখানে পাত্র সুস্থই রয়েছেন।’’ বিয়ের পরের বছর ওই দম্পতির এক কন্যাসন্তান হয়। সেই মেয়েকে চিকিৎসকের কাছে দেখাতে নিয়ে গিয়ে, অজ্ঞান হয়ে খিঁচুনি শুরু হয় ওই শিক্ষকের। তাঁর কথায়, “মাঝেমধ্যেই এই সমস্যা হত। তার জন্য ওষুধও চলছিল। বিয়ের আগে পুরো ভাল ছিলাম। হঠাৎ আবার সমস্যা শুরু হয়।’’
ওই শিক্ষক জানাচ্ছেন, মাসখানেক আগে আচমকাই দেখা যায়, তাঁর কথা বলার সময়ে জড়তা হচ্ছে। মাথার পিছন দিকে ব্যথাও হচ্ছে। বিষয়টি ভগবতীবাবুকে জানাতেই তিনি পরীক্ষা করে দেখেন, ২৩ বছর আগে বুলেটটি যেখানে আটকে ছিল, এখনও সেখানেই আটকে রয়েছে। তখনই অস্ত্রোপচার করার পরামর্শ দেন তিনি। ওই শিক্ষক বলেন, “২০২১-এ মা মারা গিয়েছেন। এখন আর বাধা দেওয়ার কেউ নেই। তাই অস্ত্রোপচারে রাজি হয়ে যাই।’’
সেই মতো ভগবতীবাবু-সহ স্নায়ু-শল্য বিভাগের চিকিৎসক সুতীর্থ হাজরা, শিক্ষানবিশ চিকিৎসক সৌমী ঘোষের দল নিউরো নেভিগেশন যন্ত্রের মাধ্যমে একেবারে ঠিক জায়গায় পৌঁছে গুলিটি বার করে।