শিবালিক মুখোপাধ্যায়
স্কুটার চালিয়ে ৩৪ দিনে গোটা দেশ ঘুরেছিলেন বছর দুই আগে। এ বার প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীদের রক্ষার বার্তা দিতে মোটরবাইকে চেপে কলকাতা থেকে কন্যাকুমারী হয়ে দুর্গম খারদুং লা পাড়ি দিচ্ছেন কলকাতার শিবালিক মুখোপাধ্যায়। ২২ অগস্ট কন্যাকুমারীর উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি। ২৬ অগস্ট কন্যাকুমারী থেকে যাত্রা শুরু করবেন খারদুং লার পথে।
লেক টাউনের বাঙুরের বাসিন্দা, বছর চৌত্রিশের শিবালিক পেশায় ম্যাক্সিলোফেশিয়াল শল্য চিকিৎসক। শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত। বাইক চালানো নেশা। ২০১৯ সালে স্কুটারে ভারত ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু এ বার লক্ষ্য, কলকাতা থেকে কন্যাকুমারী হয়ে খারদুং লা। শিবালিকের কথায়, ‘‘এর আগে অনেকেই কন্যাকুমারী থেকে লাদাখ গিয়েছেন। অনেকে উত্তর থেকে দক্ষিণে এসেছেন। কন্যাকুমারী থেকে খারদুং লা কাউকে যেতে শুনিনি।’’ কলকাতা থেকে বিশাখাপত্তনম ও চেন্নাই হয়ে কন্যাকুমারী যাবেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘সব কিছু ঠিক থাকলে ২৫ তারিখেই কন্যাকুমারী পৌঁছে যাব। পরদিন ভোর ৫টা নাগাদ খারদুং লার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার ইচ্ছে।’’
শিবালিক জানালেন, প্রকৃতিকে রক্ষা করা ও বন্যপ্রাণীদের ভালবাসার বার্তা দিতেই তাঁর এই বাইক সফর। এর জন্য বাইকেই থাকছে একাধিক পোস্টার। সঙ্গে থাকছে মাসখানেক আগে মারা যাওয়া পোষ্যের স্মৃতি। পথে যেখানে যেখানে দাঁড়াবেন, সেখানকার মানুষের মধ্যে ওই বার্তা ছড়িয়ে দেবেন তিনি। তবে নিরামিষাশী শিবালিক রাস্তায় কোনও হোটেলে রাত কাটাবেন না বলেই ঠিক করেছেন। তাঁবু খাটানোর ব্যবস্থা সঙ্গেই থাকবে তাঁর। কোনও পেট্রল পাম্প অথবা ধাবার সামনে রাতের চার-পাঁচ ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে নেবেন। শিবালিক জানালেন, কন্যাকুমারী থেকে খারদুং লার দূরত্ব প্রায় চার হাজার কিলোমিটার। তবে কলকাতা থেকে কন্যাকুমারী হয়ে নিজের ‘মিশন’ শেষ করে ফিরে আসতে অন্তত দশ হাজার কিলোমিটার বাইক চালাতে হবে তাঁকে। আপাতত চলছে প্রয়োজনীয় অনুমতি জোগাড় করা থেকে শুরু করে শেষ মুহূর্তের নানা রকম প্রস্তুতি।
শিবালিকের বাড়িতে আছেন তাঁর মা, বাবা, স্ত্রী ও ভাই। বাবা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, মা বেসরকারি এক হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত। স্ত্রী রত্না শীলও পেশায় চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম প্রথম বাড়িতে সকলেই শিবালিকের বাইক চালিয়ে দূরে যাওয়া নিয়ে একটু ভয় পেতেন। বারণও করতেন। কিন্তু এ বার প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণ রক্ষার যে বার্তা দিতে ও বেরোচ্ছে, তা জানার পরে সকলেই ওকে উৎসাহ দিচ্ছি। ওর বার্তা পেয়ে কয়েক জনও যদি এ বিষয়ে অনুপ্রাণিত হন, সেটাই বড় পাওনা হবে।’’ তবে শিবালিকের কথায়, ‘‘মানুষ যত দিন না সচেতন হবে, তত দিন আমরা প্রকৃতিকে রক্ষা করতে পারব না।’’ আর এ কাজে তিনি সফল হবেন বলেই তাঁর বিশ্বাস।