আহত: বুদ্ধদেব বিশ্বাস
তোলাবাজদের হয়তো খুব ‘অবিবেচক’ বলা যাবে না! প্রোমোটারের কাছে প্রকল্প খরচের ‘মাত্র’ এক শতাংশ দাবি করে হুমকি দিয়েছিল তারা। কিন্তু প্রোমোটার তাদের দাবি মতো ৫ কোটি টাকা দিতে রাজি হননি। অতএব প্রোমোটারকে না পেয়ে তাঁর সুপারভাইজারকে মাটিতে ফেলে পেটালো তোলাবাজদের দল। খবর পেয়ে ওই প্রোমোটার সেখানে গেলে তাঁকেও দাবি মতো ‘তোলা’ না দিলে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ।
মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার চ্যাটার্জিহাট থানার ঠাকুর রামকৃষ্ণ লেনে। বিকেলে ঘটনা জানিয়ে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ওই প্রোমোটার। হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়ে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, বেশ কিছুদিন আগে হাওড়ার বাসিন্দা মানস রায় এবং কয়েক জন অংশীদার মিলে ঠাকুর রামকৃষ্ণ লেনের ডুমুরজলা স্টেডিয়াম সংলগ্ন প্রায় ১৮৪ কাঠা জমি কিনেছেন। সেখানে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আবাসন ও স্কুল তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। অভিযোগ, ওই জমিতে পাঁচিল দেওয়ার সময়েই স্থানীয় কিছু তোলাবাজ এসে মানসবাবুর কাছে ৮০ লক্ষ টাকা দাবি করে। কিন্তু কয়েকশো কোটি টাকার প্রকল্প হলেও ওই টাকা তোলা দিতে রাজি হননি ওই প্রোমোটার।
আরও পড়ুন: ঋতুপর্ণার মায়ের গয়না চুরি
অভিযোগ, এতেই ক্ষেপে যায় ওই তোলাবাজেরা। তখন তারা ৫ কোটি টাকা না দিলে জমিটাই দখল করে নেওয়ার হুমকি দেয় বলে পুলিশের কাছে অভিযোগে জানান মানসবাবু। তিনি বলেন, ‘‘টাকা দিতে পারব না বলতেই ওঁরা বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার শুরু করে। জমির পাঁচিলও ভেঙে দেওয়া হয়। বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোও হয়েছে।’’
মানসবাবুর অভিযোগ, এ দিন দুপুরে তিনি খবর পান ওই তোলাবাজেরা প্রকল্পের জমি বেড়া দিয়ে ঘিরে নিচ্ছে। এর পরে তিনি সুপারভাইজার বুদ্ধদেব বিশ্বাস-সহ আর তিন জন কর্মীকে সেখানে পাঠান। বুদ্ধদেববাবুর অভিযোগ, ওই জমিতে যেতেই ১০-১২ জন তোলাবাজের দল তাঁদের ভিতরে ঢুকতে বাধা দেয়। তিনি বলেন, ‘‘কেন ভিতরে ঢুকতে দেবে না জানতে চাইতেই ওঁরা বাঁশ, রড নিয়ে চড়াও হয়। আমাকে মাটিতে ফেলে রড দিয়ে পেটাতে থাকে। তাতেই মাথা ফেটে যায়।’’ খবর পেয়ে মানসবাবু ঘটনাস্থলে গেলে তাঁকেও হুমকির মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ। ওই প্রোমোটার বলেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত আমি এত টাকা দিতে অস্বীকার করায় ওঁরা এ দিন স্পষ্ট হুমকি দিয়ে গিয়েছে প্রাণে মেরে দেবে।’’ বুদ্ধদেববাবুকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরাও কমবেশি আহত হয়েছেন।
তবে কোনও প্রভাবশালীর প্রশ্রয় ছাড়া এ ধরনের বেপরোয়া তোলাবাজি সম্ভব কি না সেই প্রশ্নই এখন সামনে এসেছে। যদিও এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শাসকদলের মন্ত্রী তথা জেলা সভাপতি অরূপ রায় বলেন, ‘‘আমাদের দল কোনও ভাবেই তোলাবাজিকে প্রশ্রয় দেয় না। আমি পুলিশ কমিশনারকে বলেছি অবিলম্বে এই তোলাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’’