এই বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয় মনোরঞ্জন কর্মকারের দেহ। বুধবার, মুকুন্দপুরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
বন্ধ ফ্ল্যাটের ভিতর থেকে এক মহিলার চিৎকার ভেসে আসছিল। যা শুনে ছুটে এসে ফ্ল্যাটের দরজা ভাঙেন পাশে থাকা আত্মীয় এবং প্রতিবেশীরা। দেখেন, মেঝেয় রক্তাক্ত অবস্থায় বসে সেই মহিলা। গোটা ঘরও ভেসে যাচ্ছে রক্তে। অন্য বন্ধ ঘরের দরজা ভেঙে দেখা যায়, ফাঁস দিয়ে ঝুলছেন ওই মহিলারই স্বামী। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার দুপুরে দক্ষিণ কলকাতার পঞ্চসায়র থানা এলাকার মুকুন্দপুরে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম মনোরঞ্জন কর্মকার (৪৩)। তাঁর স্ত্রী রমা কর্মকারকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, অভাব এবং সাংসারিক বিবাদের জেরেই এমন ঘটনা। এ দিন সরস্বতী পুজো উপলক্ষে দম্পতির একমাত্র মেয়ে গিয়েছিল ছবি আঁকার স্কুলে। সেই সময়েই বাড়িতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, যার জেরে স্ত্রীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর পরে আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারেন ওই ব্যক্তি। তবে গোটা ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর চারেক আগে মুকুন্দপুরের ওই এলাকায় নিজেদের জমিতেই একটি আবাসন তৈরি করে দোতলার ফ্ল্যাটে সপরিবার থাকতেন মনোরঞ্জন। ওই আবাসনেই অন্য দু’টি ফ্ল্যাটে থাকেন মনোরঞ্জনের মা মিনতিদেবী এবং ভাই মানস এবং তাঁর স্ত্রী পিঙ্কি। এ দিন বিকেল ৩টে নাগাদ বাইরে থেকে আবাসনে ঢোকার সময়ে হঠাৎ রমার চিৎকার শুনতে পান পিঙ্কি। এর পরে পিঙ্কি, মানস এবং মিনতিদেবী গিয়ে দেখেন, মনোরঞ্জনের বন্ধ ফ্ল্যাটের ভিতর থেকে চিৎকার করছেন রমা। পিঙ্কিদের ডাকে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। পিঙ্কি জানান, দরজা ভেঙে ঢুকে দেখা যায় ঘরের মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। সেখানেই বসে গোঙাচ্ছেন রমা। ওঁর মাথা-মুখ থেকে তখন রক্ত ঝরছে। কোনও মতে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর পরেই সকলের নজর যায় কর্মকার দম্পতির মেয়ের পড়ার ঘরের দরজাও ভিতর থেকে বন্ধ। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কল্পনা কর্মকার নামে এক প্রতিবেশী মহিলা বলেন, ‘‘ওই ঘরের দরজা ভেঙে দেখা যায়, পাখা থেকে নাইলনের দড়িতে ফাঁস দিয়ে ঝুলছেন মনোরঞ্জন। তাঁর হাতের শিরা কাটা। বিছানা-মেঝে ভেসে যাচ্ছে রক্তে।’’
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পঞ্চসায়র থানার পুলিশ। মনোরঞ্জনকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। বিকেলে আঁকার স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে এমন ঘটনার কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে নবম শ্রেণির পড়ুয়া পারমিতা। এমন ঘটনার কথা জানাজানি হতেই পাড়ার সরস্বতী পুজোর মণ্ডপে মাইক বাজানো বন্ধ করে দেয় পুজো কমিটি। বাড়ির সামনে ভিড় করে থাকা প্রতিবেশীরা জানান, টিভি সারানোর কাজ করতেন মনোরঞ্জন, শাড়ির ফল্স সেলাই করেন রমা। কাজকর্ম তেমন না থাকায় ইদানীং পরিবারে আর্থিক টানাটানি চলছিল। প্রশান্ত সরকার নামে এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘এমনিতে ভাল স্বভাবের মানুষ ছিলেন মনোরঞ্জন। তবে ইদানীং পাড়ায় মেলামেশা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এমন কিছু যে করে বসবেন তার আঁচ সম্ভবত কেউ পাননি।’’
প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, আনাজ কাটার ছুরি জাতীয় কিছু দিয়ে রমাকে আঘাত করার পরে নিজের হাতের শিরা কেটে, ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন মনোরঞ্জন।