ঘটনাস্থলে তদন্তে পুলিশ। রবিবার, শিয়ালদহে। নিজস্ব চিত্র।
ঘরে চাপ চাপ রক্ত। সিঁড়িতেও রক্তের দাগ। যা চলে গিয়েছে দোতলার ঘর পর্যন্ত। টেনে-হিঁচড়ে নিয়েযাওয়ার চিহ্নও স্পষ্ট। দোতলার ঘর আর শৌচাগারেও রক্ত। শৌচাগারেই পড়ে তখন কাতরাচ্ছেন এক যুবক। পাশে কাটারি হাতে দাঁড়িয়ে তাঁর ভাই। রবিবার সকালে চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটেগিয়ে এমন দৃশ্য দেখে চমকে গিয়েছিলেন। পুলিশে খবর দেন তাঁরাই। আহত যুবককে উদ্ধার করে এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান ওই প্রতিবেশীরাই। পরে পরিজনেরা যুবককে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন।
রবিবার বেলা পৌনে ১১টা নাগাদঘটনাটি ঘটেছে শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন জাস্টিস মন্মথ মুখার্জি রো এলাকায়। আহতের নাম অনির্বাণ খাসনবিশ। তাঁর ভাই, অভিযুক্ত সায়ক খাসনবিশকে গ্রেফতারকরেছে মুচিপাড়া থানার পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ওই পরিবারের তরফ থেকেও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যার ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে সায়ককে। এই হামলার পিছনে সম্পত্তিগত বিবাদ সামনে এসেছে বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে। একই দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদেরও।
স্থানীয় এবং পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, জাস্টিস মন্মথ মুখার্জি রো এলাকার ওই তেতলা বাড়িতে বৃদ্ধবাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন দুই ভাই। বড় ভাই অনির্বাণ একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী। ছোট ভাই সায়ক কিছু করেন না। তাঁদের এক বোন বিবাহিত। জানা গিয়েছে, সম্পত্তি নিয়ে ওইপরিবারে বিবাদ দীর্ঘ দিনের। কোনও কাজ না থাকায় ছোট ছেলে বাবার পুরো সম্পত্তি তাঁর নামে লিখে দিতে দীর্ঘ দিন ধরেই চাপ দিচ্ছিলেন। সম্পত্তি লিখে না দিলে সকলকে খুন করা হবে বলেও সায়কএকাধিক বার হুমকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে অশান্তি চলছিল। শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত এই নিয়ে ঝামেলা হয় বলে স্থানীয়দের দাবি।
পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সায়ক তাঁর দাদার উপরে কাটারি নিয়েচড়াও হন। অনির্বাণের ঘাড়, পেট, হাত-সহ শরীরের একাধিক জায়গায় কাটারির কোপ লেগেছে। কোপ মারতে মারতে সায়ক দাদাকে নীচ থেকে দোতলায় নিয়ে আসেন বলেও অভিযোগ। অনির্বাণকে বাঁচাতে এলে দিদিপ্রিয়াঙ্কা পালকেও সায়ক এলোপাথাড়ি মারধর করেন বলে দাবি। প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘‘শনিবার রাতে অশান্তির খবর পেয়ে রবিবার সকালে বাড়ি থেকে এসেছিলাম। হঠাৎ ভাই কাটারি নিয়ে দাদাকে মারতে থাকল। আগেও ভাই একাধিক বার আমাদের খুন করার হুমকি দিয়েছে। ওর দাবি, যে হেতু ও বেকার, তাই সব সম্পত্তি ওকেই লিখে দিতে হবে।’’ গোটা ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে আছেন বৃদ্ধবাবা-মা।
প্রতিবেশী সলিল সরকার বলেন, ‘‘চিৎকার শুনে আমরা ওই বাড়িতে ঢুকে দেখি, শৌচাগারে দাদাকে শুইয়ে কাটারি দিয়ে কোপাচ্ছে ভাই।আমরাই অনির্বাণকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’’
গুরুতর আহত অনির্বাণের অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলেহাসপাতাল সূত্রের খবর। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তদন্তকারীরা দীর্ঘক্ষণ ওই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।