কসবার সভায় বিশৃঙ্খলাকারীদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। —নিজস্ব চিত্র।
ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় বিশৃঙ্খলার চেষ্টা। সভা চলাকালীনই চেঁচিয়ে দাবিদাওয়া জানানোয় দৃশ্যতই বিরক্ত হলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই দাবিদারদের বলেও দিলেন, তিনি ‘ভগবান’ নন। তিনি চাইলেও সব কিছু দিতে পারেন না। ঘটনার জেরে কিছুক্ষণের জন্য বক্তৃতা থামিয়ে দিতে হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। তবে সভার শেষে নিজেই তাঁদের মঞ্চে ডেকে নিয়ে কথা বলেন মমতা।
এর আগে বারাসতের সভাতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। মমতার ভাষণ চলাকালীনই হইচই করে ভাতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলেন পশুপালন বিভাগের কিছু অস্থায়ী কর্মী। বৃহস্পতিবার কসবার গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে কার্যত তারই পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। দর্শকদের মধ্যে থেকে এক দল শ্রোতা তাঁদের দাবিদাওয়া জানানোর চেষ্টা করেন মুখ্যমন্ত্রীকে। মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য থামিয়ে পুলিশকে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করতে বলেন।
কিছু পরে পরিস্থিতি শান্ত হতেই মমতা বলতে শুরু করেন, ‘‘আমি তো ভগবান নই। ভগবানও সব কিছু করতে পারেন না! মৃত্যুর মুখে পড়ে কেউ যদি বলেন, ভগবান বাঁচাও! সবাইকে কি বাঁচাতে পারেন? আর পাঁচ দিন পরেই নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হবে। এই ক’বছর আপনাদের জন্য অফুরন্ত পরিশ্রম করেছি। তার পরেও আপনারা এসে বলেন, এই চাই-ওই চাই।’’ তাঁর দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও অনেক সময় সম্ভব হয় না বা সামর্থ্য থাকে না, তা বোঝাতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি যতটা পারি মানবদরদী হয়ে ততটা করতে পারি। কিন্তু এমন কিছু করতে পারি না, যেটা আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়।’’
কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী, সমব্যথীর মতো প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন রাজ্যের মানুষ। তার সঙ্গে সম্প্রতি সকলের জন্যই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড বিলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। তার পরেও কারও কারও দাবি পূরণ হয়নি। তাঁরা এ ভাবে ভরা সভায় দাবিদাওয়া জানিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় আক্ষেপও ধরা পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। তাঁর কথায়, ‘‘একজন-দু'জনের বাড়ি নিয়ে সমস্যা হয়েছে। অনেকেই গালাগালি দিলেন আমায়। কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষের যে উপকার করলাম, এক বারও তো সে কথা বললেন না!’’
তবে জোর-জবরদস্তি করে বা ‘ব্ল্যাকমেল’ করে যে তাঁকে দিয়ে কোনও কাজ করানো যাবে না, সে কথাও স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমায় ভালোবেসে বলে কেউ ঘর মুছে দিতে বললেও দেব। কারণ, আমি আমি স্ট্রিট ফাইটার। কিন্তু কেউ যদি ব্ল্যাকমেল করে বলেন, এটা দিতে হবে, ওটা দিতে হবে। তাহলে আমি পারব না।’’ সেই শ্রেণির লোকজনকে আরও কড়া ভাষায় বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আপনার আমায় পছন্দ হলে দেবেন (ভোট)! না হলে দেবেন না। আমার কিছু যায়-আসে না। যাঁরা দেবেন, সেটা দিয়েই আমার সরকার হয়ে যাবে।’’ তৃণমূলের মতো এমন জনদরদী সরকার সারা বিশ্বে একটা দেখাতে পারলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন বলেও চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।