শূন্য: কলকাতা পুরভবনে মেয়রের ঘরের বাইরে থেকে খুলে নেওয়া হয়েছে পুরনো বোর্ডটি। (ইনসেটে) রথীন রায়। নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্রীয় পুরভবনে ‘ক্ষমতা’র ভরকেন্দ্রে থাকা সারিবদ্ধ ঘর। নামফলকহীন। কিছু দিন আগেও যে ঘরের সামনে, দেওয়ালে নামের বোর্ডগুলি ছিল, তার ছাপ রয়ে গিয়েছে এখনও। পুরকর্মীরা জানালেন, সব বোর্ড খুলে নেওয়া হয়েছে, নতুন বোর্ড লাগানো হবে বলে। সেই নতুন বোর্ডে কার কার নাম থাকবে, তা নিয়েই এখন জল্পনা দিনভর। যে জল্পনার অবসান হতে পারে আজ মঙ্গলবার, কলকাতা পুরভোটের ফল ঘোষণার পরে। কারণ, তার পরেই জানা যাবে ক্ষমতায় কারা বসতে চলেছেন, কারা হতে চলেছেন নতুন পুরবোর্ডের ‘মুখ’।
পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, পুরনো বোর্ডগুলি (যা এত দিন পুর প্রশাসকমণ্ডলীর ছিল) খুলে ইতিমধ্যেই পুরসভার এন্টালি ওয়ার্কশপে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নতুন বোর্ডের মাপ নেওয়ার জন্য। ওয়ার্কশপের ‘কার্পেন্টার’ বিভাগে নতুন বোর্ড তৈরির প্রক্রিয়া এখন শেষ পর্যায়ে। পালিশ করে রাখা হচ্ছে সেই বোর্ড। শহরের নতুন মেয়র-সহ সপারিষদদের নাম ঘোষণামাত্রই বোর্ডে তাঁদের নাম লিখে পাঠানো হবে পুরভবনে। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুর প্রতিনিধিদের ঘরের বাইরে লাগানো থাকবে সেই বোর্ড। আর তাই ব্যস্ততা বাড়তে চলেছে রথীন রায়ের— এন্টালি ওয়ার্কশপে কর্মরত পুরসভার ‘ফ্রি-হ্যান্ড রাইটার’-এর।
কারণ, কলকাতা পুরসভার নতুন পুরবোর্ডে মেয়র-সহ সপার্ষদদের নামের জন্য তৈরি হওয়া কাঠের বোর্ডে রথীনবাবুর মতোই অখ্যাত কর্মীদের হাতের লেখার ছোঁয়া থাকবে। তাঁদের হাতের লেখাতেই ফুটে উঠবে ঘরের বাইরে লাগানো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নাম। আগে অবশ্য বেশ কয়েক জন ‘ফ্রি হ্যান্ড রাইটার’ ছিলেন। তবে তাঁদের মধ্যে অনেকে অবসর নেওয়ায় বোর্ডে নাম লেখার মূল দায়িত্ব এখন রথীনবাবুর।
এন্টালি ওয়ার্কশপের ম্যানেজার পরাগভূষণ ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘পালিশ করা কাঠের বোর্ডের উপরে হাতে লেখা হয় নাম। যাঁরা ভাল পারেন, তাঁরাই বরাবর এই কাজটা করে এসেছেন। বর্তমানে এই কাজটা মূলত রথীনবাবু করছেন।’’ এমনিতে পুরসভার যাবতীয় আসবাবপত্র থেকে রাস্তার রেলিং, সমস্ত কিছুই এন্টালি ওয়ার্কশপে তৈরি হয়। পরাগবাবুর কথায়, ‘‘এক সময়ে এই ওয়ার্কশপ দেশের অন্যতম উল্লেখযোগ্য পুর-ওয়ার্কশপ ছিল। ব্রিটিশ আমল থেকেই এখানে নানা জিনিস তৈরি হয়ে এসেছে।’’
এন্টালি ওয়ার্কশপের দায়িত্ব এত দিন যাঁর অধীনে ছিল, সেই প্রাক্তন মেয়র পারিষদ সামসুজ্জামান আনসারি জানাচ্ছেন, শুধু নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করাই নয়, কাজ যাতে নিখুঁত হয়, সে দিকেও লক্ষ রাখা হয়। তাঁর কথায়, ‘‘বাইরের অনেকেই জানেন না যে শুধুমাত্র এস এন ব্যানার্জি রোডের কেন্দ্রীয় পুরভবনের নয়, বরং পুরসভার সমস্ত অফিসের প্রয়োজনীয় সামগ্রীই এখানে তৈরি হয়।’’
এ দিকে ৪৩ বছর বয়সি রথীনবাবু জানাচ্ছেন, মাধ্যমিক দেওয়ার পর থেকেই তিনি হাতের লেখার কাজে যুক্ত রয়েছেন। দেওয়াল লিখন, পোস্টার লেখা, সবই করেছেন এক সময়। তার পরে ২০১০ সালে চাকরি পান পুরসভায়। রথীনবাবুর কথায়, ‘‘আমার পাশাপাশি এন্টালি ওয়ার্কশপের আরও অনেকেই লেখালিখির কাজ করেন। যে কাজটা যিনি করেন, সেই কাজটা যাতে নিখুঁত হয়, প্রত্যেকেই সেই চেষ্টা করেন।’’
বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য থেকে শোভন চট্টোপাধ্যায় হয়ে ফিরহাদ হাকিম। পুরকর্তাদের একাংশের মতে, ক্ষমতার এই পালা এবং মুখ-বদলের মধ্যেও একটা বিষয়ের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে পুর অন্দর মহলে। তা হল, কাঠের তৈরি নামফলকে রথীনবাবুর মতো ‘অখ্যাত কর্মী’দের হাতের ছোঁয়ার উপাখ্যান!