জখম: এসএসকেএমে এক আহত। মঙ্গলবার। ছবি: সুমন বল্লভ।
ঘড়িতে তখন বিকেল প্রায় পাঁচটা। টেরিটিবাজারের বাসিন্দা ইমরান মুনিরের মোবাইলটা বেজে উঠল।
হ্যালো বলতেই ও পার থেকে ক্লান্ত, জড়ানো স্বরে ভেসে এল, ‘‘আস্সালামু আলাইকুম’’। পাল্টা সম্ভাষণ জানালেন ইমরান। ও প্রান্তের মানুষটি জানতে চাইলেন ইমরানের কুশল। ফোনালাপের মধ্যেই ইমরান মনে করতে চেষ্টা করছিলেন ওই ব্যক্তিকে। কিছু বলার আগেই ও পারের মানুষটি হিন্দিতে কাঁপা গলায় জানালেন, ‘‘ভাইজান, আমি কলকাতায় ভেঙে পড়া সেতুর নীচে আটকে। আমাকে বাঁচান।’’ আঁতকে উঠলেন ইমরান। ‘‘দয়া করে আপনার নামটা একটু বলবেন?’’ —জানতে চাইলেন তিনি। ‘‘আমার নাম দর্শন খেতি, ভাইজান। দিল্লিতে থাকি। ভুলে গেলেন? আজই কলকাতায় এসেছিলাম।’’ কেটে গেল ফোন। ইমরানের মনে পড়ল, বছর কয়েক আগে গুজরাতে গিয়ে পরিচয় হয়েছিল দর্শনের সঙ্গে। তখনই নম্বর আদানপ্রদান হয়। পরে ইমরানের ফোন নষ্ট হওয়ায় হারিয়ে যায় দর্শনের নম্বর। ফের ওই নম্বরে ফোন করলেন ইমরান। জানতে চাইলেন, ‘‘এখন আপনি কোথায়?’’ দর্শনের উত্তর, ‘‘চার দিকে কলকাতা লেখা রয়েছে। সেতুর নাম জানি না। কিছু চিনি না। আমাকে অ্যাম্বুল্যান্সে কোথাও নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এখন কী করব!’’ এর পরেই হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন দর্শন। ফোনটা কেটে গেল। এর পরে আর দেরি করেননি ইমরান।
প্রতিদিনের মতো ব্যবসার কাজে ব্যস্ত ইমরান তখনও জানতে পারেননি, তত ক্ষণে এ শহরের বিকেল ফের দেখে ফেলেছে পোস্তার আতঙ্ক। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়া মাঝেরহাট সেতুর ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে ঠিক কত জন— জানতে যখন সংবাদমাধ্যম, প্রশাসন তোলপাড় করছে, তখন দর্শনের খোঁজে কলকাতার ‘ভাইজান’ ইমরান ছুটে চলেছেন।
আরও পড়ুন: হঠাৎ প্রবল ঝাঁকুনি, খাদে পড়ল গাড়িটা
আরও পড়ুন: প্রকাণ্ড সেতুটা ঝুলে রয়েছে ‘ভি’-এর আকারে
এ দিনের দুর্ঘটনায় আহতদের মূলত নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এসএসকেএম ও সিএমআরআই-এ। দু’জায়গা থেকেই নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে ইমরানকে। দর্শনের ফোনও সমানে বন্ধ বলছে। নিরুপায় ইমরানের কথায়, আর একটা ফোনের অপেক্ষায় তিনি। যে ফোনে শুনতে পাবেন, ‘‘ভাইজান, ভাল আছি।’’
(শহরের প্রতি মুহূর্তের সেরা বাংলা খবর জানতে পড়ুন আমাদের কলকাতা বিভাগ।)