সরেজমিন: প্রায় বুজে যাওয়া খাল পরিদর্শন করছেন পুরকর্তা ও সেচ দফতরের আধিকারিকেরা। গড়িয়া স্টেশন এলাকায়। নিজস্ব চিত্র।
বর্ষা শুরু হতেই ফের বানভাসি হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন মহেশতলা ও রাজপুর-সোনারপুর পুর এলাকার বাসিন্দারা। গত বর্ষায় ওই দুই পুরসভার অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন হলেও কয়েকটি ওয়ার্ড থেকে জল বেরোতে সময় নিয়েছিল মাস তিনেক। এমনকি অন্যত্র বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকার অভিজ্ঞতাও অর্জন করতে হয়েছে কোনও কোনও বাসিন্দাকে। এ বারেও তেমন পরিস্থিতি হতে পারে ভেবে ভীত অনেকেই।
কলকাতা পুরসভা সংলগ্ন দুই পুরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ডেই গত বর্ষায় কোথাও হাঁটুজল, কোথাও কোমর সমান জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। মহেশতলা পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের চন্দননগরের অধিকাংশ বাড়ি থেকে বর্ষার জল সরতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পেরিয়ে গিয়েছিল। অভিযোগ, গত বর্ষায় ওই ওয়ার্ডের অধিকাংশ বাসিন্দা এলাকাছাড়া ছিলেন। সাপে কামড়ানোর ঘটনাও ঘটেছে এলাকায়। কয়েকটি ওয়ার্ডের কিছু বাসিন্দা আবার অন্যত্র ভাড়া থাকার অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় করেছেন বলে জানা গিয়েছে।
এমন পরিস্থিতির কারণ হিসাবে ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে, অধিকাংশ নিকাশি খাল-পথ মজে গিয়েছে। আভ্যন্তরীণ নিকাশি নালা অনেক জায়গায় দখল হয়ে গিয়েছে। আবার সংস্কারের অভাবেও নিকাশি নালা মজে রয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় বিধায়ক দুলাল দাসের আশ্বাস, গত বছরের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে না। বছরখানেকের মধ্যে নিকশি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তাঁর কথায়, ‘‘গত কয়েক মাসে এই পুর এলাকায় আভ্যন্তরীণ নিকাশি নালার সংস্কার হয়েছে। ২০ নম্বর ওয়ার্ডের আক্রা এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের গোবিন্দপুরে নিকাশির কিছু কাজ হয়েছে। এ ছাড়াও পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের বরাদ্দ অর্থে কিছু নিকাশির সংস্কার শুরু হচ্ছে। জরুরি অবস্থার কথা ভেবে কলকাতা এবং মহেশতলা পুরসভা পর্যাপ্ত পাম্প তৈরি রেখেছে।’’
রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ডের বাড়ি থেকে জমা হাঁটুজল সরতে সময় নিয়েছিল কয়েক সপ্তাহ। কোথাও আবার মাস দেড়েক লেগেছিল বলেও অভিযোগ। অল্প বৃষ্টিতেই জলবন্দি হয়ে পড়ে পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের মিশন পল্লি। জল সরতে লাগে মাসখানেক। সোনারপুর উত্তরের বিধায়ক ফিরদৌসি বেগম বলেন, ‘‘পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অর্থে মিশন পল্লি থেকে নরেন্দ্রপুর রেল স্টেশনের কালভার্ট পর্যন্ত নিকাশি নালা তৈরি হচ্ছে। সোনারপুর কলেজ এলাকায়ও নিকাশির কাজ শুরু হচ্ছে।’’
বাসিন্দাদের ভবিষ্যতের জন্য ভরসা দিয়ে ওই পুরসভার চেয়ারম্যান পল্লব দাস বলেন, ‘‘আশপাশের পঞ্চায়েতের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। পুরসভার নিকাশি জল বেরোতে যাতে কোনও বাধা না পায়, বৈঠকে তার পথ খোঁজা হয়েছে। তা ছাড়া পাম্প চালানোর পরিকাঠামো তৈরি আছে।’’
পুরবাসীদের অভিযোগ, চার বছর আগে পুর এলাকার নিকাশি খালের সংস্কার হয়েছিল। দখলদারি ও আবর্জনা ফেলার জেরে অধিকাংশ খাল পথ ফের বুজে গিয়েছে। ফলে পাম্প করে জমা জল খালে ফেললে ফের এলাকায় ফিরবে বলে আশঙ্কা। রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শুভাশিস বসুর দাবি, ‘‘গত বছর কয়েকটি ওয়ার্ডের পাম্প চালানোর দায়িত্বে ছিলেন কাউন্সিলরেরা। তখন সময় মতো পাম্প না চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। এ বছর থেকে পাম্প পুরসভার তত্ত্বাবধানে চালানো হবে।’’
যদিও দুই পুরসভার কর্তাদের আশ্বাসে মোটেও আশ্বস্ত নন বাসিন্দারা। তাঁদের কথায়, এমন আশ্বাস তো প্রতি বছরই দেওয়া হয়। কিন্তু বর্ষায় চরম ভোগান্তির শিকার সেই হতে হয় তাঁদেরই।