ওদের লক্ষ্য মোবাইল-নির্ভর গাড়ি, যেমন ওলা বা উবের। পাশাপাশি নতুন ট্যাক্সিও। আর পদ্ধতি, ফোন করে এই ধরনের গাড়ি ডেকে তাতে সওয়ারি হয়ে লক্ষ্যহীন যাত্রা।
ওরা সংখ্যায় থাকত দুই বা তিন জন। গাড়িতে বসেই শুরু হতো গল্পগুজব। রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে চলত খাওয়া-দাওয়া। চালকের সঙ্গে ভাব জমিয়ে তাঁকেও খেতে বাধ্য করতো তারা।
এর পরে জাতীয় সড়কের মতো নির্জন জায়গায় মাদক মেশানো ঠান্ডা পানীয় খাইয়ে অজ্ঞান করে ফেলত চালককে। এমনকী অনেক সময়ে খুনও
করত চালককে। এর পরে রাতের অন্ধকারে চালকের দেহ রাস্তার ধারে ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে পালাত তারা।
সম্প্রতি হাওড়ায় এমনই এক আন্তঃরাজ্য গাড়ি পাচার চক্রের হদিস মিলেছে। পুলিশের জালে ধরা পড়েছে চক্রের দুই পান্ডা। হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত সৌম্যজিৎ পারিজা এবং সুশান্তকুমার নায়েক দু’জনেই ওড়িশার বাসিন্দা। বছর ছাব্বিশের সৌম্যজিতের বাড়ি সেখানকার খুদা জেলার বালিয়ান্তায় এবং তেত্রিশ বছরের সুশান্তের কটকে। পুলিশ জানায়, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গিয়েছে, চক্রটি পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশার পাশাপাশি মহারাষ্ট্র ও হায়দরাবাদেও ছড়িয়ে আছে।
কী ভাবে সন্ধান মিলল এই চক্রের?
হাওড়া গোয়েন্দা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মার্চ মাসে পাঁচলা থানা এলাকায় মুম্বই রোডের পাশে এক ওলা-চালকের মৃতদেহ মেলে। ওই চালকের বাড়ি মালিপাঁচঘড়া থানা এলাকায়। সেই ঘটনায় খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। ওই চালকের মোবাইলের সূত্র ধরে জানা যায়, গাড়িটি শেষ ভাড়া নিয়েছিল সৌম্যজিৎ। ওড়িশা থেকে তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের পরে পাকড়াও করা হয় সুশান্তকে।
হাওড়ার গোয়েন্দাপ্রধান সুমিত কুমার বলেন, ‘‘ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, চালককে মাদক খাইয়ে অজ্ঞান করে বা প্রয়োজনে খুন করে ওরা গাড়ি পাচার করে দিত ভিন্ রাজ্যে। সেখানে গাড়ির নম্বর প্লেট, ইঞ্জিন নম্বর ও রং পাল্টে ফেলে বিক্রি করে দেওয়া হতো ভাল দামে।’’
গোয়েন্দাপ্রধান জানান, ধৃতেরা এখনও পর্যন্ত এ ভাবে পশ্চিমবঙ্গে দু’টি, মহারাষ্ট্র ও হায়দরাবাদে দু’টি মিলিয়ে মোট চারটি গাড়ি পাচার করে বিক্রি করে দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যে প্রায়ই চালককে অজ্ঞান করে একাধিক গাড়ি চুরি যাওয়ার খবর আসায় মনে করা হচ্ছে, এর সংখ্যা আরও বাড়বে। পুলিশ জানায়, এই চোরদের মূল লক্ষ্য মূলত ওলা-উবেরের মতো নতুন গাড়ি ও ট্যাক্সি। যেগুলি সহজেই ভাড়া পাওয়া যায়। পাশাপাশি নতুন গাড়ি বেচে পাওয়া যায় ভাল দামও। গোয়েন্দাপ্রধান বলেন, ‘‘এ রাজ্যে চক্রটি মূলত কলকাতা থেকেই তাদের কাজকর্ম চালায়। এ শহরে এক জন ‘রিসিভার’ ও রয়েছে। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’
পুলিশের দাবি, এই চক্রের মাথা রয়েছে ওড়িশায়। ধৃতদের ১৩ দিনের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শীঘ্রই চক্রের বাকিদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, আন্তঃরাজ্য এই চক্রটি ছাড়াও হাওড়ায় আর একটি গাড়ি পাচার চক্রে সন্ধান মিলেছে। গাড়ি চুরির অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে একটি গাড়িও।