ভোটার: গড়াগাছার একটি স্কুলে ভোট দিচ্ছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। রবিবার। ছবি: অরুণ লোধ
আপাত নিস্তরঙ্গ বুথ। কোথাও সামান্য উত্তেজনাও নেই। ভোটারদের যা কাহিল করেছে, তা হল গরম। গরমে সেই হাঁসফাঁস অবস্থার মধ্যেই ফিসফিস গুঞ্জন, ‘‘ভোট দিতে আসছেন তো?’’ শুধু সাধারণ ভোটারদের একাংশই নয়, বুথের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা পর্যন্ত জানতেন, তিনি আসবেন ভোট দিতে।
সেই শোভন চট্টোপাধ্যায়, কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শেষ পর্যন্ত ভোট দিতে এলেন তাঁরই বাড়ি সংলগ্ন ভোটকেন্দ্র— গড়াগাছা শিশু ভারতী স্কুলে। রবিবার বিকেল সাড়ে ৩টে। তড়িৎ গতিতে ভোট দিয়ে বেরিয়ে যান তিনি। বাড়িতে ঢোকেননি। কারণ ব্যাখ্যা করে তাঁর সংক্ষিপ্ত উত্তর, বাড়িতে ঢোকার পরিস্থিতি নেই।
ভোট দিতে যাওয়ার সময়ে ঝামেলা হতে পারে, এমন আশঙ্কা আগেই করেছিলেন শোভন। তাঁকে পরিকল্পিত ভাবে অপদস্থ করা হতে পারে ভেবে নির্বাচন কমিশনকে আগাম চিঠিও দিয়েছিলেন তিনি। এ দিন নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়ার পরে শোভন বলেন, ‘‘কোনও ঝামেলা চোখে পড়েনি।’’ নিজের ভোটদান নিয়ে তাঁর জবাব, ‘‘প্রতি বার নির্বাচনে ভোট দিই। এ বারেও ভোট দিলাম।’’ তবে ‘চাপ’ যে রয়েছে, এ দিন শরীরী ভাষায় তা ঢাকার আপ্রাণ চেষ্টা করেন তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরও দেন। কিন্তু অস্বস্তি ঢাকতে পারেননি। ভোট দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এ দিনও শোভন অভিযোগ করেন, কেমন করে পারিবারিক ভাবে তিনি বঞ্চিত হয়েছেন! তাই বাড়িতে ঢুকবেন না শোভন।
তবে তিনি যে ভোট দেবেনই, শনিবার তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিলেন শোভন। বলেছিলেন, ‘‘সকাল ১০টার পরে ভোট দিতে যাব।’’ আর সেই ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করেই এ দিন তুমুল চর্চা ছিল বেহালা পশ্চিমের এই কেন্দ্রে। এমনিতে পুরো বুথে কোনও উত্তেজনা নেই। ভোটারেরা ভোট দিয়েছেন নিশ্চিন্তে, তাঁদের বিব্রত করার কেউ যদি থাকে, তা ছিল গরম। সকালে লাইন পড়েছিল। কিন্তু গরমের তীব্রতা যত বেড়েছে, ততই ফাঁকা হয়েছে সেই লাইন।
বুথে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ান বলছিলেন, শোভন যে ভোট দিতে আসবেন, তা তাঁরাও জানেন। কারণ, শনিবারই শোভনের নিরাপত্তারক্ষীর তরফে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। ওই জওয়ান বলছিলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন ওঁরা। বলেছিলাম, বুথের নিরাপত্তার দায়িত্ব তো আমাদের!’’
শোভনবাবুর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এই ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে যে চর্চা, তাকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি। এ দিন রত্না বলেন, ‘‘সত্যি বলতে কী ভোটের কাজ নিয়ে আমরা এতটাই ব্যস্ত যে কে-কখন ভোট দিতে এলেন, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামানো বা সময় নষ্ট করার মানসিকতা নেই।’’ যদিও বাবার ভোট দেওয়া নিয়ে খুশি ছেলে সপ্তর্ষি। মা রত্নার সঙ্গে এ দিন ভোট দিতে গিয়েছিলেন তিনি। সপ্তর্ষি বলছেন, ‘‘যা-ই হোক না কেন, এক জন দায়িত্বশীল নাগরিক ও নেতা হিসেবে শোভন চট্টোপাধ্যায় ভোট দিয়েছেন। এতে আমি খুবই খুশি।’’ সঙ্গে যদিও পুত্রসুলভ আক্ষেপ, ‘‘বাড়ির পাশে এলেন, তবু এক বার ঢুকলেন না! এক গ্লাস জল তো খেতে পারতেন।’’