দায়িত্ব: ভোট বুথের পথে মহিলা ভোটকর্মীরা। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
ভোট চলাকালীন শুধু পুরুষ দুর্বৃত্ত নয়, ঠেকাতে হতে পারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রমীলা বাহিনীকে। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, মহিলাদের হাঙ্গামার আশঙ্কা এতটাই যে, কেন্দ্রীয় বাহিনী ও কলকাতা পুলিশের মহিলাকর্মী ছাড়াও এ বার শহরে নামছেন রাজ্য পুলিশের ৩০০ জন মহিলা কনস্টেবল।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়ে, গত বৃহস্পতিবার রাজ্য পুলিশের ওই ৩০০ জন মহিলা কনস্টেবল কলকাতায় এসেছেন। থানাপিছু চার জন বা হাফ-সেকশন হিসেবে তাঁদের নিযুক্ত করা হয়েছে। থানার অফিসারের নেতৃত্বে ‘মোবাইল স্ট্রাইকিং’ ফোর্সে ওই মহিলাদের রাখা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, শনিবার নাকা তল্লাশিতেও রাজ্য পুলিশের মহিলা কনস্টেবলদের কাজে লাগানো হয়েছে। তবে কোনও ক্ষেত্রেই ওই মহিলা পুলিশকর্মীদের শহরের পথে একা ছাড়া হচ্ছে না। এখানকার পুলিশ আধিকারিকদের ব্যাখ্যা, ওঁরা এলাকা চেনেন না। তাই কলকাতা পুলিশের সঙ্গে থেকেই কাজ করবেন তাঁরা।
এ দিন দক্ষিণ শহরতলির এক প্রবীণ পুলিশ আধিকারিককে দেখা গেল, তাঁর ‘স্ট্রাইকিং’ দলে রাজ্য পুলিশের চার জন তরুণীকে নিয়েছেন। কিন্তু অপরিচিত এলাকায় সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে রাজি হননি তাঁরা।
কলকাতা পুরসভার বুথে পাহারায় মহিলা সিআরপিএফ কর্মী।
গত কয়েকটি ভোটে দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মহিলা সমর্থকেরা গোলমাল পাকান বলে পুলিশ সূত্রের খবর। দুর্বৃত্তেরাও তাদের দলে মহিলাদের নিয়োগ করেছে। এক পুলিশকর্তার ব্যাখ্যা, ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ বা ‘কুইক রেসপন্স টিম’-এ মহিলা না থাকার সুযোগ নিতে চায় দুষ্কৃতীরা। কোনও পুরুষ পুলিশকর্মী মহিলাদের গায়ে হাত তুললেই গোলমালটিকে ভিন্ন রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ফলে ভোটের শহরে সব রকম সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশি মহিলা পুলিশ দরকার। ওই পুলিশকর্তার ব্যাখ্যা, বেলেঘাটা, এন্টালি এবং দক্ষিণ শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় এর আগে মহিলাদের গোলমাল পাকানোর ঘটনা ঘটেছে। ফলে সেই এলাকাগুলিতে বেশি করে নজর দেওয়া হচ্ছে। প্রসঙ্গত, বিরোধীরাও মহিলা পুলিশকর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর দাবি করেছিল।
লালবাজারের একটি সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশ এলাকায় ২৭৯টি মহিলা বুথ রয়েছে। সেগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর মহিলা জওয়ানেরা থাকবেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর মহিলা জওয়ানদের ২০টি কোম্পানি কলকাতায় এসেছে। মহিলা বুথে পাহারার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর মহিলা জওয়ানেরা থাকছেন। তাঁদের জন্য পৃথক ব্যবস্থাও করা হয়েছে। পথঘাটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কলকাতা পুলিশের মহিলাকর্মীরা রয়েছেন। কিন্তু লালবাজারের কর্তাদের হিসেবে, সেই সংখ্যাও পর্যাপ্ত ছিল না। তাই রাজ্য পুলিশের ৩০০ জন মহিলা কর্মীকে নিয়ে আসতে হয়েছে। ‘‘এই ৩০০ জনের আগে রাজ্যের বিভিন্ন দফার ভোটে কাজ করেছেন,’’ বলছেন এক পুলিশকর্তা।
তবে ভোটের দিন বহু বড় রকমের হাঙ্গামায় ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’কে কাজ করতে হয়। তেমন গোলমালের জায়গায় গিয়ে মহিলা পুলিশকর্মীরা বিপদে পড়বেন না তো, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। মুচকি হেসে এক পুলিশকর্তার জবাব, ‘‘এঁদের চেনেন না। বহু বাহুবলীকেও চোখের পলকে মাটিতে কাত করে ফেলতে পারে আমাদের প্রমীলাবাহিনী।’’