দুরবস্থা: নতুন করে রাস্তা তৈরির কাজের জন্য উড়ছে ধুলো। ব্যারাকপুরের ঘোষপাড়া রোডে। ছবি: মাসুম আখতার
নাজেহাল হওয়াই যেন ভবিতব্য। দীর্ঘদিন ধরে ভাঙা রাস্তা নিয়ে নাজেহাল ছিলেন ব্যারাকপুরের ঘোষপাড়া রোড সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। ভাঙাচোরা রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটত মাঝেমধ্যেই। বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীরা তো বটেই, সাধারণ মানুষও রাস্তা সারাইয়ের দাবিতে অবরোধ করেছিলেন ঘোষপাড়া রোডে। এ বার সেই রাস্তা নতুন করে তৈরি করছে পূর্ত দফতর। তবে রাস্তা তৈরিকে কেন্দ্র করে এ বার ধুলোর সমস্যায় জেরবার হচ্ছেন বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘অন্তত রাস্তাটা তো হচ্ছে। ধুলোর সমস্যাও না হয় কিছু দিন সহ্য করব।’’
গত বছর বর্ষার পর থেকেই ব্যারাকপুর স্টেশন সংলগ্ন ঘোষপাড়া রোডের দফারফা হয়ে গিয়েছিল। ওই রাস্তা গিয়েছে কাঁচরাপাড়া পর্যন্ত। বর্তমানে রাস্তাটি নতুন করে তৈরির কাজ চলছে ব্যারাকপুর এবং উত্তর ব্যারাকপুর— এই দুই পুরসভা এলাকার অংশে। সূত্রের খবর, সম্পূর্ণ রাস্তাটিই নতুন করে হওয়ার কথা। তবে জরুরি ভিত্তিতে ওই দুই পুর এলাকার মধ্যেই কাজ চলছে। দুই পুরসভা সূত্রের খবর, তাদের অঞ্চলেই ঘোষপাড়া রোডের হাল সব চেয়ে খারাপ ছিল। ব্যারাকপুরের লালকুঠি এলাকা, পলতা বাসস্ট্যান্ড, ইছাপুরের কণ্ঠাধার, চৌমাথা কিংবা চারতলা বিল্ডিং-এর সামনে রাস্তা দীর্ঘদিন ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়েছিল বলে অভিযোগ।
এ বার অভিযোগ উঠেছে, পিচের আস্তরণ উঠিয়ে রাস্তা নতুন করে করার ফাঁকে যথেষ্ট পরিমাণে জল দেওয়া হচ্ছে না। তার জেরে রাস্তা দিয়ে গাড়ি চললেই কার্যত ধুলোর ঝড় উড়ছে এলাকায়। রবিবার ঘোষপাড়া রোড ধরে ব্যারাকপুর থেকে পলতা পর্যন্ত যেতে যেতেই দেখা গেল ধুলোর দাপট। ঘুষিপাড়া এলাকায় ধুলোর জেরে চারপাশ অন্ধকার হওয়ার অবস্থা। করোনার কারণে মাস্কে মুখ ঢাকা থাকায় ধুলো নাকে-মুখে ঢুকছে না ঠিকই। তবে যারা মাস্ক ব্যবহার করছেন না, তাঁদের রাস্তার ওই অংশে পৌঁছে নাক-মুখ চাপা দিতে দেখা গেল।
রাস্তার ধারের একটি মার্বেলের দোকানের কর্ত্রীর কথায়, ‘‘ধুলো খুবই উড়ছে। রাস্তার কাজ হচ্ছে, কিন্তু জল তেমন ভাবে দেওয়া হচ্ছে না। তবে আমরাও সহ্য করছি। কারণ এত দিন তো রাস্তাটাই বেহাল অবস্থায় পড়ে ছিল। এত দিনে রাস্তা ঠিক হচ্ছে। তার জন্য ধুলোর সমস্যাটা সহ্য করছি।’’
রবিবার ব্যারাকপুরের লালকুঠি, ঘুষিপাড়া, পলতা এলাকা ঘুরে দেখা গেল, রাস্তার ধারে পড়ে রয়েছে পাথর, স্টোনচিপ। হাওয়া দিলে সে সব থেকেও উড়ছে ধুলো। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এলাকার একমাত্র বড় রাস্তা হওয়ায় যানবাহনের চাপের কারণেই দিনের বেলা সেখানে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই কাজ হচ্ছে রাতের দিকে। স্থানীয় বাসিন্দারাও জানাচ্ছেন, ওই রাস্তায় দিনের বেলা কাজ করতে গেলে যানজটের সমস্যা হবে। তাতে অসুবিধা আরও বাড়বে।
কিন্তু জল দেওয়া হচ্ছে না কেন? পূর্ত দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, প্রতিদিন সকালে জল দেওয়া হচ্ছে। সব জায়গায় ধুলোও উড়ছে না।
ব্যারাকপুর পুরসভার দাবি, রাস্তা তৈরি হয়ে গেলে সব সমস্যারই সমাধান হবে। সেখানকার প্রশাসকমণ্ডলীর প্রধান উত্তম দাসের দাবি, ‘‘আগামী কিছু দিনের মধ্যেই রাস্তা সারাইয়ের কাজ শেষ হয়ে যাবে। ওই রাস্তা ঠিক হয়ে গেলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন।’’ উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর প্রধান মলয় ঘোষের দাবি, ‘‘উন্নত মানের রাস্তা তৈরি হচ্ছে। হাইওয়ের রাস্তা যেমন হয়, তেমনটাই হবে।’’
ব্যারাকপুর থেকে কাঁচরাপাড়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার যোগাযোগের একমাত্র বড় রাস্তা ঘোষপাড়া রোড। শহরের বাইরের অংশে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে থাকলেও সেই রাস্তা ব্যবহার করতে অনেকটাই ঘুরতে হয়। তাই ঘোষপাড়া রোড ওই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের জন্য কার্যত একমাত্র ভরসা। দীর্ঘদিন পরে হলেও রাস্তার তৈরির কাজ শুরু হওয়ায় খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা।