এ ভাবেই ফেটেছে দেওয়াল। (ডান দিকে) কাজ চলছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর। বৃহস্পতিবার ছবি দু’টি তুলেছেন দীপঙ্কর মজুমদার।
মেট্রো রেলের কাজের জেরে ফাটল ধরল হাওড়া জেলার প্রধান গ্রন্থাগারের গোটা ভবনে। যেখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় গোটা জেলার ১৩৬টি গ্রন্থাগারকে।
মেট্রো সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া ময়দানের কাছে প্রায় ৭০ বছরের পুরনো দোতলা এই সরকারি ভবনটির ৬৫ ফুট নীচে টানেল বোরিং মেশিন বা টিবিএম সুড়ঙ্গ কাটা শুরু করতেই এই বিপত্তি। যার জেরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অনির্দিষ্ট কালের জন্য বাড়িটিতে সাধারণ মানুষের প্রবেশও নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দফতরের বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অধিকাংশ কর্মীকে আপাতত অফিসে আসতে বারণ করা হয়েছে। মেট্রো রেলের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, দেওয়ালের চারদিকে ফাটল হলেও ভবনটির বড় কোনও ক্ষতি হয়নি। আতঙ্কের কারণ নেই। আর যা ক্ষতি হয়েছে তা মেট্রোর তরফেই সারিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
মেট্রো রেল সূত্রে খবর, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর হাওড়ার দিকে প্রান্তিক স্টেশন হাওড়া ময়দানে মাস কয়েক হল পূর্ণ গতিতে কাজ শুরু হয়েছে। এই স্টেশন থেকে মেট্রো সুড়ঙ্গ পথে গঙ্গার নীচ দিয়ে গিয়ে কলকাতার দিকে ওঠার কথা। এ জন্য দিন পনেরো আগে ময়দান স্টেশন থেকে আধ কিলোমিটার দূরে হাওড়া জেলা গ্রন্থাগার ভবনের সামনে সুড়ঙ্গ করতে টিবিএম মেশিন নামানো হয়। ২৯ এপ্রিল মেট্রো রেলের পক্ষ থেকে জেলা গ্রন্থাগারের আধিকারিককে চিঠি দিয়ে ওই কাজ শুরু করার কথা জানানো হয়। পরদিন থেকেই শুরু হয় কাজ।
রাজ্য সরকার পরিচালিত এই ঐতিহ্যশালী ভবনটি তৈরি হয় ১৯৫২ সালে। অবস্থানগত দিক থেকে গ্রন্থাগারটি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে হওয়ায় হাওড়ায় মেট্রোর কাজ শুরু হওয়া থেকেই ভবনটি যাতে না ভাঙা পড়ে সে বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছিল হাওড়া পুরসভা ও প্রশাসন। মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষও জানিয়েছিলেন, ভবনের নীচ দিয়ে সুড়ঙ্গ করা হলেও সেটির ক্ষতি হবে না। কিন্তু গত শনিবার সুড়ঙ্গ কাটার কাজ শুরু হওয়ার পরেই মেশিনের কম্পনে ভবনটির দেওয়ালের চার দিকে প্রথমে সরু চুলের মত ফাটল দেখা দিতে শুরু করে। এর পরে সুড়ঙ্গ যত এগোতে থাকে, ততই বাড়তে থাকে ফাটলও।
বৃহস্পতিবার ওই গ্রন্থাগারে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির সামনের কোলাপসিবল গেটে তালা ঝুলছে। দড়ি দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে ভবনটির চারদিক। পিছনের দিকে, অর্থাৎ যে দিক দিয়ে মেট্রোর টিবিএম মেশিন নেমেছে, সে দিকে গিয়ে দেখা গেল দেওয়াল জুড়ে চওড়া ফাটলের চিহ্ন। একই অবস্থা ভবনটির ভিতরে একতলা ও দোতলার প্রায় প্রত্যেকটি দেওয়ালে।
এ দিন গ্রন্থাগারের নীচের তলায় কোনও কর্মী না থাকলেও দোতলায় উঠে দেখা গেল তিনজন কাজ করছেন। ফাটল ধরেছে ওই ঘরের চারদিকে এবং ছাদের কংক্রিটের বিমেও। নিশীথ সরকার নামে ওই কর্মীদের একজন বললেন, ‘‘এটি গোটা জেলার ১৩৬টি গ্রন্থাগারের সদর দফতর। এখান থেকেই ৩০০ কর্মীর বেতন, ছুটি অনুমোদন, অনুদান বন্টন— সবই করা হয়। তাই আমাদের কয়েকজনকে বাধ্য হয়ে এই বিপদ মাথায় নিয়ে কাজে আসতে হচ্ছে।’’
জেলা গ্রন্থাগার অফিসার তুষারকান্তি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মেট্রো রেল সমস্ত ফাটল সারিয়ে দেবে বলেছে। কিন্তু এর ফলে গ্রন্থাগার ভবনটির কতটা ক্ষতি হল বোঝা যাচ্ছে না। হাওড়া পুরসভার কমিশনারকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি দেখতে অনুরোধ জানিয়েছি।’’
কী বলছেন মেট্রো রেল-কর্তৃপক্ষ?
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর চিফ ইঞ্জিনিয়ার পরশুরাম সিংহ এ দিন বলেন, ‘‘আসলে টিবিএম যেখানে কাজ শুরু করেছে তার উপরেই এই বাড়িটি থাকায় এতটা ক্ষতি হয়েছে। তবে ভবনটিতে যে ফাটল ধরেছে তা উপর থেকে। কংক্রিটে ফাটল ধরেনি। আমাদের ঠিকাদার সংস্থা কেএমআরসিএল-এর ইঞ্জিনিয়ারেরা ফাটলগুলির নজরদারি করছেন। ক্র্যাক মিটার লাগানো রয়েছে। প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’’
মেট্রোর চিফ ইঞ্জিনিয়ার যা-ই বলুন, যতদিন ওই এলাকায় মাটির নীচে টিবিএম মেশিনের কাজ হবে, নিরাপত্তার জন্য ততদিন গ্রন্থাগার আধিকারিককে গ্রন্থাগারটি বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।