বি বা দী বাগ চত্বরের হেরিটেজ ভবন। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
জোব চার্নক আসার আগেও যে ভূখণ্ডের অস্তিত্ব ছিল, নবাব সিরাজউদৌল্লার সময়ে যার নাম ‘আলিনগর’, আবার ব্রিটিশ শাসনের সময়ে যার নাম ‘ক্যালকাটা’ হয়েছিল, সেই শহরের প্রতিটি পুরনো বাড়ি, ইট-কাঠ-পাথরের নিজস্ব গল্প থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। এমনটাই মনে করেন ইতিহাসবিদ থেকে কলকাতা-গবেষকেরা।
তাঁরা এটাও বলেন, এ শহর নিয়ে যত বই, যত ছবির সংগ্রহ আছে, তা অন্য কোনও শহর নিয়ে রয়েছে কি না, সংশয় রয়েছে তা নিয়েও। কিন্তু সেই ইতিহাস বা ঐতিহ্য কি ঠিক ভাবে সংরক্ষিত হচ্ছে? তাঁরা বলছেন, না! আর এই ‘গাফিলতি’র জন্য তাঁরা আঙুল তুলেছেন কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ কমিটির দিকে। ঐতিহ্যশালী ভবনগুলির গ্রেডেশন থেকে শুরু করে ঐতিহ্যের সংরক্ষণ-সহ সমস্ত বিষয়ে যে কমিটির দায়িত্ব পালন করার কথা।
তবে শুধু আঙুল তোলা নয়, হেরিটেজ-বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি রাজ্য প্রশাসনের একাংশও মনে করছে, শহরের ঐতিহ্যের সংরক্ষণ ও তা তুলে ধরার কাজ পুরসভার হেরিটেজ কমিটি ঠিক মতো পারছে না। তাই ওই কমিটি তুলে দিয়ে ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্ব রাজ্য হেরিটেজ কমিশনকে দেওয়ার কথা শুরু হয়েছে প্রশাসনের অন্দরে।
রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্ন বলেন, ‘‘কলকাতার ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও তার দেখভালের দায়িত্ব কমিশন একক ভাবে পেতে পারে। সে ক্ষেত্রে পুরসভার হেরিটেজ কমিটি থাকবে না। এমনই প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা পড়েছে।’’
যে প্রস্তাব আলাদা ‘মাত্রা’ পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক কলকাতা সফরের পরে। কারণ, দু’দিনের কলকাতা সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শহরের ঐতিহ্যকে আলাদা ভাবে তুলে ধরার উপরে গুরুত্ব দিয়েছেন। হেরিটেজ-বিশেষজ্ঞদের একটি অংশের মতে, কলকাতার ঐতিহ্যকে মাধ্যম করেই মোদী বাঙালি-আবেগের কাছাকাছি পৌঁছতে চাইছেন। তাই নতুন কোনও বিতর্ক চাইছেন না প্রশাসনের কর্তাদের অনেকেই। কারণ, এর আগে ঐতিহ্যশালী ভবনের গ্রেডের অবনমন ঘটিয়ে, তা ভেঙে ফেলার অনুমোদন-সহ একাধিক বিষয়ে পুর-হেরিটেজ কমিটি বিতর্কে জড়িয়েছে।
এমনিতে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন জেলার ঐতিহ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলি দেখভাল করলেও এত দিন কলকাতার ক্ষেত্রে কোনও মাথা ঘামাত না। কারণ, কলকাতার পুর-হেরিটেজ কমিটিই শহরের ঐতিহ্যশালী ভবনের তালিকা প্রকাশ করেছিল ২০০৯ সালে। যদিও হেরিটেজ ভবন চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ১৯৯৭-’৯৮ সাল থেকেই।
হেরিটেজ কমিশনের এক কর্তার কথায়, ‘‘শহরের ঐতিহ্যের বিষয়টি পুর-হেরিটেজ কমিটি দেখভাল করলেও আইন সংক্রান্ত জটিলতা তৈরি হলে আদালত তা আমাদের কাছেই পাঠিয়ে দেয়। ফলে একটিই দফতর যাতে পুরো বিষয়টি দেখভাল করতে পারে, সে কারণেই ওই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’’ পুর-হেরিটেজ কমিটির এক সদস্য অবশ্য বলছেন, ‘‘হেরিটেজ কমিশনই শহরের ঐতিহ্যের সংরক্ষণ করবে না কি পুর-হেরিটেজ কমিটি ওই কমিশনের অধীনে কাজ করবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।’’
যা-ই হোক না কেন, হেরিটেজ-বিশেষজ্ঞেরা শুধু চাইছেন, শহরের ঐতিহ্য থাকুক ‘নিরাপদ হাতে’। কলকাতা-গবেষক হরিপদ ভৌমিক বলেন, ‘‘কলকাতার প্রতিটি পুরনো বাড়ির ইট-পাথরের নিজস্ব একটা ইতিহাস রয়েছে। সেটা যাতে ঠিক ভাবে সংরক্ষিত হয়, তা দেখা উচিত।’’