আঁচ সামলে ক্রেতারা। বৃহস্পতিবার, যদুবাবুর বাজারে। ছবি: সুমন বল্লভ
করোনা আবহে লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন করতে গিয়ে মাথায় হাত পড়েছে শহরবাসীর! ফর্দ মিলিয়ে অর্ধেক জিনিস কেনার আগেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে পকেট। উত্তর থেকে দক্ষিণ— সর্বত্রই এক অবস্থা।
বাগুইআটি বাজারে স্থানীয় বাসিন্দা রমেশ মজুমদার বললেন, ‘‘পটল, বেগুন, টোম্যাটোর দাম হাফ সেঞ্চুরি পেরিয়ে গিয়েছিল আগেই। এখন লক্ষ্মীপুজোয় সেঞ্চুরির দিকে এগোচ্ছে। পটল আর বেগুন ৭০ টাকা কেজি, টোম্যাটো ৮০ টাকা!’’ গিরিশ পার্কের তমাল দাসের কথায়, ‘‘লক্ষ্মীপুজোতেই মরসুমের প্রথম ফুলকপি বাড়িতে আসে। এ বার ছোট একটা ফুলকপির দামই ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। বড় হলে ৫০। তাই এ বার ফুলকপি বাদ।’’ গড়িয়াহাটের বাসিন্দা অরূপ বসুর কথায়, ‘‘প্রতি বারই লক্ষ্মীপুজোয় দাম বাড়ে। কিন্তু এ বারের মতো নয়। সরকারের টাস্ক ফোর্স কোথায়?’’
বিষয়টি স্বীকার করে রাজ্য সরকারের টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে বললেন, ‘‘এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের আধিকারিকদের সঙ্গে টাস্ক ফোর্সের সদস্যেরা প্রতি বছর লক্ষ্মীপুজোর আগে বিভিন্ন বাজারে হানা দেন। এ বছরও অভিযান হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে ভাল ভাবে হয়নি।’’ তাঁর মতে, অধিকাংশ বাড়িতেই লক্ষ্মীপুজো হয় বলে এই সময়ে আনাজের চাহিদা বেশি থাকে। সেই সুযোগটাই নেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
আগুন ফুলের বাজারেও। মল্লিকঘাটে এসে টালিগঞ্জের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ রায় বললেন, ‘‘পাড়ার দোকানে পদ্মের দাম শুনে ছিটকে এসেছি। ভাবলাম, মল্লিকঘাটে সস্তা হবে। কিন্তু এখানেও এক-একটি পদ্ম ২৫ থেকে ৩০ টাকা। কুচো গাঁদাও ১০০ টাকা কেজি।’’
‘সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়েক বললেন, ‘‘লকডাউনের কারণে ফলন কম হয়েছে। দুর্গাপুজো ও লক্ষ্মীপুজোয় ফুলের চাহিদা হঠাৎ বেড়েছে। কিন্তু জোগান তো কম। তাই দাম বেশি।’’ নারায়ণবাবুর কথায়, ‘‘এ বার কার্তিক মাসে লক্ষ্মীপুজো হওয়ায় এ রাজ্যের পদ্মের জোগান কম। বেশির ভাগই বেঙ্গালুরুর পদ্ম। এক-একটি ২০ টাকায় বিকোচ্ছে।’’
আনাজ ও ফুলের দাম আকাশছোঁয়া হলেও ফল ও মিষ্টি সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে বলে জানালেন ক্রেতাদের একাংশ। মানিকতলার বাসিন্দা সুজিত কর বললেন, ‘‘কেজিতে ১৫-২০ টাকা দাম বেড়েছে প্রায় প্রতিটি ফলেরই। তবে আনাজের মতো অতটা বাড়েনি।’’ ‘ক্যালকাটা ফ্রুট মার্কেট অ্যাসোসিয়েশন’-এর জয়েন্ট সেক্রেটারি শাহিদ আহমেদ খানের দাবি, ‘‘সমস্ত ফলের জোগানই ভাল। বিশেষ করে শীতের মরসুমের ফলও বাজারে চলে এসেছে। লক্ষ্মীপুজোয় প্রায় সব ফলই ঠিক দামে বিক্রি হচ্ছে।’’