কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির সই জাল করার অভিযোগ উঠতে না উঠতেই সুপ্রিম কোর্টের নথি জাল করার অভিযোগ সামনে এল।
এত বড় অভিযোগ পেয়েও পুলিশ এক মাস ধরে কেন নিষ্ক্রিয় ছিল, সেই প্রশ্ন আগেই তুলেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। সোমবার তাঁর কাছে অভিযোগ জানানো হল, সই জাল করে ধৃত বিকাশ সিংহ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বলে যে দু’জনের সই জাল করেছেন, তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিই নন। তা সত্ত্বেও ওই দুই ব্যক্তির সই জাল করে এক অভিযুক্তকে জামিনে মুক্ত করার চেষ্টা করেছেন ধৃত ব্যক্তি।
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, গিরিশ পার্কের বাসিন্দা বিকাশ সিংহের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির সই জাল করে প্রেসিডেন্সি জেল থেকে বিচারাধীন এক বন্দিকে জামিনে মুক্ত করার চেষ্টা করেছেন। জামিনের নির্দেশটি দেখে সন্দেহ হওয়ায় জেল সুপার অভিযুক্তকে ছাড়েননি। বিকাশকে গত ৩ জুলাই গ্রেফতারও করা হয়।
পুলিশ জানায়, তাপস বিশ্বাস নামে ওই বন্দির দিদি সান্ত্বনা রায়ের অভিযোগ, জামিন পাইয়ে দেওয়ার নাম করে বিকাশ তাঁর থেকে কয়েক দফায় এক লক্ষেরও বেশি টাকা আদায় করেছিলেন। গত মে মাসে গিরিশ পার্ক থানা এ নিয়ে অভিযোগ নিতে চায়নি বলেও তাঁর অভিযোগ।
সম্প্রতি সান্ত্বনার আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি অভিযোগ করেন, অভিযুক্ত বিকাশ শুধুমাত্র সান্ত্বনাদেবীর সঙ্গেই প্রতারণা করেননি, বসিরহাটের বাসিন্দা কাসেদ আলি গাজি নামে অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গেও প্রতারণা করেছেন। কাসেদের আরও অভিযোগ, তাঁর ছেলে রুহুল কুদ্দুস গাজিকে জামিনে মুক্ত করার জন্য কয়েক দফায় বেশ কয়েক হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বিকাশ।
রুহুল আলিপুর জেলে বন্দি। রুহুলের জামিনের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নথি জাল করা হয় বলে অভিযোগ। অভিযুক্ত রুহুল অবশ্য জামিনে মুক্তি পাননি। তবে এই ক্ষেত্রে গিরিশ পার্ক থানার পুলিশ কাসেদ আলি গাজির অভিযোগ পেয়েও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন আইনজীবী ফিরোজ।
পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা ও সই জালের ঘটনার সিবিআই তদন্ত চেয়ে গত ২৭ জুন হাইকোর্টে মামলা করেন সান্ত্বনা। এ দিন সরকারি আইনজীবী আদালতে জানান, অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে ওই মামলার তদন্তকারী অফিসারকে সরিয়ে অন্য এক জন অফিসারের হাতে তদন্ত ভার তুলে দেওয়া হয়েছে।
বিকাশের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি এর আগেও কলকাতা হাইকোর্টের এক বিচারপতির সই জাল করেছিলেন। হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ গত বছর ২৮ নভেম্বর বিকাশকে গ্রেফতার করলেও সময়মতো চার্জশিট জমা দিতে না পারায় তিনি জামিন পেয়ে যান। জেল থেকে বেরিয়ে অভিযুক্ত ফের কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির সই জাল করেন বলে অভিযোগ।