ঝুঁকি: জল জমার ভয় এই প্লাস্টিকের আচ্ছাদনেই। ছবি: সুমন বল্লভ
উবু হয়ে বসে সবে মাটি মাখা শুরু করেছেন মহিলা। হঠাৎ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। ঘরের দালানের খাঁজে গোঁজা প্লাস্টিকটা আপাদমস্তক জড়িয়ে নিয়ে খেঁকিয়ে উঠে বললেন, ‘‘তোর বাবাকে কত দিন ধরে প্লাস্টিক টাঙাতে বলছি। কাল থেকে আর কোনও কাজ করব না।’’ মাকে শান্ত করতে ছেলের মন্তব্য, ‘‘আমি টাঙিয়ে দেব। কিন্তু ও দিকের প্লাস্টিকগুলো খুলে ফেলতে হবে। জল জমতে দেখলেই তো ধরবে!’’
বর্ষা এলেই কুমোরটুলির পাশাপাশি শহরের একাধিক প্রতিমা গড়ার জায়গায় প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে তৎপর হয় পুরসভা। প্লাস্টিকে জমা জল মশার প্রজননস্থল হিসেবে চিহ্নিত করে গত বছর পুরসভাকে সতর্ক করেন পুর পতঙ্গবিদেরা। তার পরেই পুরসভা তা রুখতে ক়ড়া নজরদারি শুরু করে। সচেতন করতে ব্যানারও টাঙায়। তার পরেও অবশ্য কুমোরটুলির মতো প্রতিমা-ঘরগুলো প্লাস্টিকমুক্ত হয়নি। মৃৎশিল্পীরা বলছেন, পুরসভা বিকল্প কোনও পথ দেখাতে পারেনি। তাই বৃষ্টি এলে প্রতিমা ঢাকতে প্লাস্টিকের ব্যবহার না করে উপায় থাকে না। পুরসভা বলছে, প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ না করা গেলেও জল জমা বন্ধ করা যায় কী ভাবে, তা দেখা হচ্ছে।
শুক্রবার কুমোরটুলিতে গিয়ে দেখা গেল, প্লাস্টিক লাগিয়েই চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। প্রায় সর্বক্ষণ প্রতিমার কাঠামো এবং মাটি প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখছেন মৃৎশিল্পীরা। সেই প্লাস্টিকের উপরেই জমছে জল। কুমোরটুলির এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘ক’দিন পর থেকে সম্পূর্ণ প্রতিমাই প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা হবে। ছোটবেলা থেকে এই পরিবেশে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। গত ক’বছরে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ায় একটু ভয় তো হচ্ছেই।’’ পুরসভার দাবি, গত বছর ডেঙ্গির কোনও প্রভাবই পড়েনি ওই সব এলাকায়। উত্তর কলকাতার খালপাড়েও কয়েক বছর ধরে প্রতিমা গড়া চলছে। সেখানেও বৃষ্টি থেকে প্রতিমা বাঁচাতে ভরসা প্লাস্টিক। খালের ধারেই অস্থায়ী ছাউনি তৈরি করে কাঠামোয় খড় বাঁধা আর মাটি মাখা চলছে শিল্পীদের। এক শিল্পীর কথায়, ‘‘টিনের চালের ঘর করার টাকা নেই। তা ছাড়া ঘর করলেই ভেঙে দেবে। তাই প্লাস্টিকই ঠিক আছে।’’
খালপাড়ের ওই এলাকা কলকাতা পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। প্লাস্টিক ব্যবহারে পুরসভার ব্যর্থতা মেনে নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তী বললেন, ‘‘কিছু করার নেই। প্রতিমা গড়তে গেলে প্লাস্টিকের ব্যবহার হবেই। আমরা তাই এখন প্লাস্টিকে জল জমতে দেখলেই বলছি।’’ কুমোরটুলি কলকাতা পুরসভার ন’নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। কাউন্সিলর মিতালি সাহা বললেন, ‘‘পুরসভা এখনও বিকল্প কিছু ভেবে উঠতে পারেনি। তাই এ ভাবেই চালাতে হবে।’’ পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘সারা বছর আমরা জল জমা আটকাতে গিয়ে বোঝাচ্ছি। কুমোরটুলিতে নজরদারিও চলছে। তবে প্লাস্টিকের বিকল্প কিছু তো সত্যিই নেই।’’