মূর্তির রঙে সাবেক পথে কুমোরটুলি

কুমোরটুলি সূত্রের খবর, অতীতে জলের সঙ্গে তেঁতুল বীজের পাউডার মিশিয়ে অত্যধিক তাপমাত্রায় (৬০-১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ফুটিয়ে আঠা তৈরি করতেন শিল্পীরা। ওই আঠার সঙ্গে গুঁড়ো রং মিশিয়ে প্রতিমার গায়ে লাগানো হতো। শিল্পীরা দাবি করছেন, এই পদ্ধতি অনেক পরিশ্রমসাধ্য হলেও খরচ হতো অনেক কম।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৭ ০৭:৩০
Share:

যত্নে: এ ভাবেই পুরনো পদ্ধতিতে তৈরি হচ্ছে প্রতিমার রং। নিজস্ব চিত্র

প্রতিমা যাতে সহজে দর্শনার্থীদের চোখ টানে, সে জন্য এক সময়ে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে রং তৈরি করতেন কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরা। তাতে খরচও হতো কম, প্রতিমার ঔজ্জ্বল্যও থাকত অনেক দিন। কিন্তু ক্রমে তাঁরা ঝুঁকেছিলেন দামী কৌটোর রঙের দিকে। সেই পথ ছেড়ে এ বার মৃৎশিল্পীরা আবার ফিরছেন সাবেকিয়ানায়। সৌজন্যে, পণ্য ও পরিষেবা কর বা জিএসটি। যা লাগু হওয়ার পরে কৌটোর রঙের দাম বেড়ে গিয়েছে কয়েক গুণ। বাধ্য হয়েই পটুয়াপাড়ার শিল্পীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কৌটোর দামী রং ব্যবহার করবেন না। পরিবর্তে বছর পনেরো আগে ব্যবহার করা তেঁতুল বীচির আঠার সঙ্গে গুঁড়ো রঙের মিশ্রণ ঠাকুরের গায়ে মাখাবেন তাঁরা।

Advertisement

কুমোরটুলি সূত্রের খবর, অতীতে জলের সঙ্গে তেঁতুল বীজের পাউডার মিশিয়ে অত্যধিক তাপমাত্রায় (৬০-১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ফুটিয়ে আঠা তৈরি করতেন শিল্পীরা। ওই আঠার সঙ্গে গুঁড়ো রং মিশিয়ে প্রতিমার গায়ে লাগানো হতো। শিল্পীরা দাবি করছেন, এই পদ্ধতি অনেক পরিশ্রমসাধ্য হলেও খরচ হতো অনেক কম। রঙের উজ্জ্বলতাও থাকত অনেক দিন। কিন্তু দিন বদলের সঙ্গে রঙের ব্যবহারে পরিবর্তন এনেছিলেন তাঁরা। পরিশ্রম করে রং তৈরির বদলে বাজারের কৌটোর রং কিনে প্রতিমায় মাখানো হতো। চলতি বছরে জিএসটি-র জন্য আবার পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছেন মৃৎশিল্পীরা।

আরও পড়ুন: আরও বৃষ্টির ভয় দেখাচ্ছে ঘূর্ণাবর্ত

Advertisement

শিল্পীরাই জানাচ্ছেন, এ বার এক হাজার টাকার রং কিনতে জিএসটি বাবদ তাঁদের ২৮০ টাকা বাড়তি গুণাগার দিতে হচ্ছে। শিল্পী মিন্টু পালের কথায়, ‘‘প্রতি বছর আমাকে প্রায় ৬০ হাজার টাকার রং কিনতে হয়। কিন্তু জিএসটি-র জন্য ওই রং কিনতে এ বার অতিরিক্ত প্রায় ১৭ হাজার টাকা কর বাবদ দিতে হবে। বাধ্য হয়েই তাই কৌটোর রঙের পরিবর্তে তেঁতুল বীচির আঠার সঙ্গে গুঁড়ো রং মিশিয়ে ব্যবহার করব।’’ কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সমিতির সম্পাদক কার্তিক পালের কথায়, ‘‘জিএসটি-র জন্য রঙের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা সাবেকিয়ানাতেই ফিরতে চাই। পুরনো পদ্ধতি বেশ কষ্টসাধ্য হলেও দামে অনেকটাই সস্তা হবে।’’ মৃৎশিল্পীদের আর এক সংগঠন কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সাংস্কৃতিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক বাবু পালের কথায়, ‘‘প্রতিমা তৈরির সামগ্রীর দাম বাড়লেও গত বছরের তুলনায় প্রতিমার দাম বা়ড়েনি। এই পরিস্থিতিতে দামী রং ব্যবহার করা আমাদের পক্ষে দুঃসাধ্য।’’

পুরনো প্রথায় রং ব্যবহারের ক্ষেত্রে কুমোরটুলির পটুয়াদের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র। তিনি বলেন, ‘‘কৌটোর রঙের তুলনায় তেঁতুল বীচির আঠার সঙ্গে গুঁড়ো রঙের ব্যবহার অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব। শিল্পীদের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।’’ পরিবেশ দফতরের প্রাক্তন মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ও বলছেন, ‘‘প্রতিমায় কৌটোর রং ব্যবহার করলে বিসর্জনের পরে তা জলের দূষণ বাড়ায়। কারণ, ওই রঙে সীসা এবং ক্যাডমিয়ামের মতো ভারী ধাতুর মিশ্রণ থাকে। এর তুলনায় তেঁতুল বীজের আঠার সঙ্গে গুঁড়ো রঙের মিশ্রণ ব্যবহার নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। তবে ওই রঙে যাতে ভারী ধাতু না থাকে, সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement