প্রতীকী ছবি।
নরেন্দ্রপুর ও নেতাজিনগরে দুই নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ দম্পতির খুনের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে। তার পরেই কলকাতার পুলিশ কমিশনার নির্দেশ দিয়েছিলেন, শহরের প্রবীণ-প্রবীণাদের খোঁজ রাখতে ও তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হতে হবে পুলিশকে। সেই নির্দেশ মতো গত কয়েক দিন ধরে নিউ টাউন লাগোয়া ভাঙড় বিধানসভা এলাকায় বিভিন্ন আবাসনের বৃদ্ধ দম্পতিদের দরজায় পৌঁছে গিয়েছেন কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার আধিকারিকেরা। শুধু তা-ই নয়, খবর রাখতে নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ চালু করে ফেলেছেন তাঁরা।
কলকাতার লেদার কমপ্লেক্স থানার আইসি এস কে পাহাড়ির নেতৃত্বে পুলিশ রবিবার ও সোমবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওই সব বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের নাম নথিভুক্ত করেছে । অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, একাই থাকছেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। সর্বক্ষণ খেয়াল রাখার মতো কেউ নেই। পরিচারিকারা কাজ করে চলে যাওয়ার পরে সঙ্গী বলতে আর কেউ নেই ওই প্রবীণ-প্রবীণাদের। গাড়ির চালক থেকে শুরু করে বাড়িতে যাঁরা কোনও কাজে আসেন তাঁদের নাম-ঠিকানা নথিভুক্ত করেছে পুলিশ। এমনকি, ওই সব বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও চালু করে দিয়েছেন ওই পুলিশ আধিকারিকেরা। যাতে বিপদে-আপদে অথবা যে কোনও প্রয়োজনে খবর আদানপ্রদান করা সম্ভব হয়। বয়স্কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে সমস্ত আবাসনের দরজায় সিসি ক্যামেরা নেই, সেখানে পুলিশের পক্ষ থেকে তা বসানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার একটি আবাসনে একাই থাকেন বছর বাহাত্তরের চন্দনা সাহানা। স্বামী মারা গিয়েছেন। মাস কয়েক আগে শৌচাগারে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়েছিলেন চন্দনাদেবী। দীর্ঘক্ষণ পড়েছিলেন সেই ভাবে। সোমবার পুলিশ খোঁজ নিতে বাড়িতে যেতেই তাঁর আকুতি, ‘‘আমাদের দেখার তো কেউ নেই। তোমরা কি বিপদে আমাদের পাশে থাকবে? অসুস্থ হলে যদি খবর পাঠাই, তা হলে কি তোমরা আমায় হাসপাতালে নিয়ে যাবে?’’ আইসি অবশ্য তাঁকে অভয় দিয়ে বলেছেন, ‘‘যখনই ডাকবেন আমরা চলে আসব।’’
কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকাতেও নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ দম্পতির অভাব নেই। যেমন, কাঁটাতলা গ্রামে একচিলতে মাটির বাড়িতে স্ত্রীর সঙ্গে থাকেন বছর তিয়াত্তরের তারক সর্দার। বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ এবং নিঃসন্তান ওই দম্পতির দু’বেলা দু’মুঠো খাবারও ঠিকমতো জোটে না। গ্রামের এমন অসহায়
বৃদ্ধ দম্পতিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাঁদের দিকেও লক্ষ রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ আধিকারিকেরা।