আম পাঠক তাঁকে ভাষাচার্য বলেই জানেন। বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশ নিয়ে তাঁর গবেষণা। তবে সংস্কৃতির জগতে তাঁর ছিল অনায়াস বিহার। বন্ধু শিশিরকুমারের নাট্যাভিনয়ের জন্য চটজলদি মঞ্চ-উপযোগী বেশবাস নির্মাণ করেছিলেন। চমৎকার ছবি আঁকতে পারতেন। ভাষাজ্ঞানকে বইয়ের বাইরে কাজে লাগাতে ছিলেন সিদ্ধহস্ত। ১৯২৮ সালের শীতকাল, গয়া থেকে কলকাতা ফিরছেন। সোমবার ক্লাস নিতে হবে। ট্রেনে অসম্ভব ভিড়— কোনও জায়গা নেই। শেষে দেখলেন একটা ‘বোগি’ দখল করে বসে আছেন জনা পনেরো কাবুলি। ভয়ে সেখানে কেউ উঠছে না। সুনীতিকুমার দেখলেন এই সুযোগ, তিনি ‘২/৪টি ফার্সী কথা বলতে’ পারেন। অতঃপর ফারসি-জানা বাঙালির সে বোগিতে সসম্মানে জায়গা হল । এই সুনীতিকুমারের হাতফেরতা হয়েই ‘সংস্কৃতি’ কালচারের বাংলা প্রতিশব্দ— রবীন্দ্রনাথও সে শব্দকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতা’র অমিত রায় শিলং পাহাড়ে সুনীতিকুমারের ভাষাতত্ত্বের বই পড়ে। এই সুনীতিকুমার তাই কেবল ভাষাচার্য নন— বাঙালির মনন সংস্কৃতির সেরা রসদদার, বিচিত্রের অনুব্রতী। ভাষায় তাঁর আহার, সংস্কৃতিতে তাঁর বিহার। সুকুমার সেন আচার্য সুনীতিকুমারের সরস স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিখেছিলেন, নানাবিধ আহারে তাঁর মন ও মতি ছিল। মাঝে মাঝে তাঁর আহার্যের বিবরণে রক্ষণশীল হিন্দু-ব্রাহ্মণেরা বিচলিত হতেন। এই সরস-সচল চিন্তাশীল সুনীতিকুমারের সংস্কৃতির নানা আনাচকানাচ বিহারের ফল তাঁর সাংস্কৃতিকী (আনন্দ)। আগে পাওয়া যেত খণ্ডে খণ্ডে, তা মাঝে বেশ কিছুদিন অমিল হয়েছিল। এখন আবার অখণ্ড সাংস্কৃতিকী পাওয়া যাবে। সুখপাঠ্য অথচ গভীর সে-সব রচনা। হালের বাঙালি পড়ে বুঝবেন কাকে বলে সুসংস্কৃত রচনা।
সত্যভাষী স্বর
আজ কবির জন্মদিন। ছিয়াশি পূর্ণ করে সাতাশিতে পা দিলেন। ছবি: শুভাশিস চক্রবর্তী
‘বন্ধুতা ঈশ্বরপ্রায়, তারই কাছে লিপ্ত হতে পারি।’ তাঁর কোনও একটি কবিতার প্রথম পঙ্ক্তির এমন উচ্চারণেই আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে আসে কেন তাঁর নতুন কাব্যগ্রন্থের নাম এও এক ব্যথা-উপশম (সিগনেট প্রেস)। শঙ্খ ঘোষের এই বইটির পিছনের প্রচ্ছদে লেখা হয়েছে ‘বহির্জাগতিক সব অপঘাত আর ব্যক্তিগত মৃত্যুবোধকে জড়িয়ে নিয়ে... চলতে চায় এই কাব্যগ্রন্থ।’ হয়তো তাই এ-বইয়ের ‘তিস্রা ঝাঁকি’ কবিতায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস বা গুজরাত দাঙ্গার পর কালবুর্গি কিংবা গৌরী লঙ্কেশের হত্যা পেরিয়ে নিজেরই মুখোমুখি যেন কবি: ‘আজ সে-পরীক্ষা হবে আমরা শুধু শববাহক/ না কি কোনো সত্যভাষী স্বর!’ একদা এক গদ্যগ্রন্থে লিখেছিলেন ‘আছি একটা ব্যক্তিগণ্ডির মধ্যে বাঁধা... শিল্পসাহিত্য পারে সেই গণ্ডিটা একটু খুলে দিতে... ’, আর এই সদ্যপ্রকাশিত কবিতাবলির একটিতে লিখছেন ‘পূর্ণতাতে পৌঁছলে আর ভাবব আমি কাকে?/ শূন্য থেকে শূন্য নিলে শূন্য বাকি থাকে।’
সৃজন-পরম্পরা
প্রেসিডেন্সি কলেজ, ১৯৬৫, ইতিহাস অনার্স, ফার্স্ট ইয়ার। এক ছাত্র ক্লাসের ফাঁকে মাঝে মাঝে ভবানী দত্ত লেনের আর্কাইভসে চলে যায়, নথিপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করে। তার পর শিক্ষকদের অহেতুক উত্ত্যক্ত করে— বইতে এমনটা থাকলেও নথিতে কিন্তু অন্য! সেই ছেলে এখন ভারতের অন্যতম প্রধান ইতিহাসবিদ: গৌতম ভদ্র। মুঘল যুগে কৃষি-অর্থনীতি থেকে তিতুমির, নিম্নবর্গের ইতিহাস, বটতলা, কথকতা, জাল রাজা কত বিষয়েই যে তাঁর রসগ্রাহী পদচারণা! এহেন ইতিহাসবিদ ও শিক্ষকের সম্মাননাগ্রন্থ অন মডার্ন ইন্ডিয়ান সেন্সিবিলিটিজ: কালচার, পলিটিক্স, হিস্ট্রি সম্প্রতি বেরোল রাটলেজ থেকে। মুখবন্ধ: দীপেশ চক্রবর্তী। নিবন্ধলেখকেরা সকলেই দেশবিদেশে ইতিহাসের অধ্যাপক। গবেষক-ইতিহাসবিদ সে-দিন শিক্ষকতাকে বললেন পৃথিবীর অন্যতম সৃজনী ক্রিয়াকলাপ। কারণ, এই বই শুধু তাঁর সম্মাননা নয়, তাঁর শিক্ষক, ছাত্র সকলকে নিয়ে এক বিদ্যাবংশের স্বীকৃতি। ছাত্রছাত্রীদের পরিপ্রশ্নে, শিক্ষক-ছাত্রের দ্বিরালাপে প্রতিনিয়ত পূর্ণ হয় সেই বংশের সৃজন-পরম্পরা।
নিবেদিতা সংখ্যা
জন্মের সার্ধশতবর্ষে ভগিনী নিবেদিতাকে নিয়ে লেখালিখি বড় কম হচ্ছে না। তারই মধ্যে কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে প্রকাশিত হচ্ছে ‘পুরশ্রী’ পত্রিকার বিশেষ নিবেদিতা সংখ্যা। নিবেদিতাকে নিয়ে মননশীল নানা রচনার পাশাপাশি আছে শঙ্করীপ্রসাদ বসুকে নিয়ে বিশেষ ক্রোড়পত্র যেখানে সংকলিত হয়েছে তাঁর সংগ্রহ থেকে বহু অজানা ঐতিহাসিক তথ্য, এমনকী তাঁর অব্যবহৃত তথ্যও। সত্যানন্দ পরমহংসের স্মৃতিকথা, শ্রীমা সারদাদেবীর সাক্ষাৎ শিষ্য স্বামী অসিতানন্দের নিবেদিতা-স্মৃতি, সমকালীন বাংলা ও ইংরেজি সাময়িকপত্রে নিবেদিতা-সংবাদ বিষয়ে প্রবীর মুখোপাধ্যায় ও সুদীপ বসুর লেখা, রবীন্দ্রনাথ-নিবেদিতা পত্রবিনিময় ইত্যাদিতে সমৃদ্ধ এই সংখ্যাটি ৭ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায় কলকাতা পুস্তকমেলার মূল মঞ্চে প্রকাশ করবেন মহানাগরিক শোভন চট্টোপাধ্যায়।
বাংলার পুতুল
সোমা মুখোপাধ্যায়ের বাংলার পুতুল (প্রতিক্ষণ) বইটি হাতে আসতেই মনে পড়ে গেল পুতুলের জন্ম সম্পর্কে প্রচলিত সেই কাহিনি— এক দিন খেলার ছলে পার্বতী আপন মনে একখানা পুতুল গড়ছেন, এমন সময় সেখানে মহাদেব এসে হাজির। তাঁকে দেখেই লজ্জায় পুতুল লুকিয়ে ফেলেন পার্বতী। কিন্তু মহাদেব শেষ পর্যন্ত খুঁজেপেতে বারই করে ফেললেন পুতুলখানা। বিমুগ্ধ মহাদেব সেটিকে প্রাণ দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন মর্তলোকে। সেটি পুতুলই, কিন্তু মানুষের মতো প্রাণ আছে তার। যা-ই হোক, সেই কোন কাল থেকে কাঁচামাটি বা পোড়ামাটির তৈরি পুতুল সমাজে তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। বিষয়বৈচিত্র ও লোকপ্রযুক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে এই পুতুল যেমন আকর্ষণীয় তেমনই তাৎপর্যপূর্ণ এদের সাংস্কৃতিক ইতিহাস। তাদের সঙ্গেই পরিচয় ঘটাবে দুর্দান্ত সব পুতুলের ছবিসংবলিত এই বই।
রসসাহিত্য
বাংলা সাহিত্যের প্রবহমানতায় হাস্যরসের নানা রূপ... নির্মল হাসি, ব্যঙ্গবিদ্রুপ, শ্লেষ-কশাঘাত, সমবেদনা, সমাজ-সমালোচনা... রসসাহিত্যের এই শিল্পরীতির বিস্তার ভিন্ন থেকে ভিন্নতর হয়েছে। সেই ঐতিহ্য ও পরম্পরা প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে বলেই ‘কোরক’ সাহিত্য পত্রিকা-র (সম্পা: তাপস ভৌমিক) বইমেলা সংখ্যা-র বিষয়: ‘রসরঙ্গ রসিকতা রসসাহিত্য’। রসিক ব্যক্তিত্ব বা তাঁদের রসসাহিত্য নিয়ে বিশ্লেষণাত্মক রচনায় ঋদ্ধ এ-পত্র। সম্পাদকের নিবেদনে জানানো হয়েছে, ‘আড্ডা, রসিকতা, কথার চাতুর্য দিয়ে মজা করার মতো ব্যক্তিত্ব এবং অবসর দুই-ই অপস্রিয়মাণ।’ সেই ফেলে-আসা সময়ের হাস্যরসের আবহ ফেরাতেই তাঁদের এই প্রয়াস।
আধুনিকতা
প্রধানমন্ত্রী নেহরু তাঁর অফিসে টাঙানো ভারতের মানচিত্রটির দিকে তাকিয়ে ভাবতেন, এই যে হিমালয় পর্বতরাজি দেশের সীমান্ত জুড়ে বিরাজ করছে এর মধ্যে কত না ‘শক্তি’ লুকিয়ে আছে। সেই শক্তিকে কাজে লাগালে ভারতের উন্নয়নপ্রক্রিয়াকে কত না তাড়াতাড়ি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে! নেহরুর কাছে উন্নয়ন কোনও হৃদয়হীন অর্থনৈতিক প্রকল্প ছিল না, ছিল এক মানবমুখী নৈতিক কার্যক্রম, যা সমাজের উপর থেকে নীচ অবধি মানুষকে আগের চেয়ে ভাল রাখবে। অথচ সেই মানবমুখী নৈতিকতার মধ্যেও প্রকৃতির স্থান ছিল মানুষের প্রয়োজন মেটানোর উপাদান হিসাবেই। কিন্তু আজ বিজ্ঞজনরা বলছেন, প্রাণিজগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মানুষকে দেখাটা উচিত নয়। কেননা এমনকী ক্ষুদ্রতম জীবাণুও কিন্তু পৃথিবী ও সভ্যতার একই রকম জরুরি বাসিন্দা। কী চেহারা হয় আমাদের উন্নয়ন বা আধুনিকতা ভাবনার, যদি মানুষকে সেই ভাবনার কেন্দ্র থেকে আমরা সরিয়ে দিই? এমনই এক গুরুতর প্রশ্নের সামনে কলকাতার শ্রোতৃবর্গকে দাঁড় করিয়ে গেলেন দীপেশ চক্রবর্তী। সম্প্রতি তিনি কাজ করছেন পরিবেশ ইতিহাস নিয়ে। ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর বরণীয় ইতিহাসবিদকে কলকাতা এ-ভাবেই পেল সপ্তদশ প্রণবেশ সেন স্মারক বক্তৃতায়: ‘উন্নয়ন ও আধুনিকতা: বর্তমান-সর্বস্ব এই সময়’।
গল্প হলেও সত্যি
জয়ন্ত-মানিক, কিরীটি, ব্যোমকেশ কি ফেলুদার মতো গল্পের গোয়েন্দা নয়, এই গোয়েন্দারা বাস্তবের। চরিত্ররাও রক্তমাংসের, আর কাহিনি ‘গল্প হলেও সত্যি’ শ্রেণিভুক্ত। গত শতকের ত্রিশের দশকের পাকুড় হত্যা মামলা দিয়ে শুরু, শেষ মাত্র দশ বছর আগের লুথরা হত্যাকাণ্ডে। নানা কারণে এই এক ডজন খুনের রুদ্ধশ্বাস কাহিনি কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের শতাব্দী-পেরোনো ইতিবৃত্তে উজ্জ্বল হয়ে আছে। গোয়েন্দাপীঠ লালবাজার (আনন্দ) বইয়ে ঝরঝরে ভাষায় সেই সব তদন্তপদ্ধতির বিবরণ রচনা করেছেন বর্তমানে কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সুপ্রতিম সরকার। ‘লেখাগুলি একবার পড়তে শুরু করলে শেষ না করে উপায় থাকে না’, ভূমিকায় নগরপাল রাজীব কুমারের মন্তব্যটি যথার্থ। সঙ্গে তারই প্রচ্ছদ।
গ্রন্থনির্মাতা
সম্মাননাগ্রন্থ কি স্মারকগ্রন্থ যা-ই হোক, ‘কোনো আকারেই শ্রদ্ধার ন্যূনতম অর্ঘ্যও পশ্চিমবঙ্গের পেশাদার গ্রন্থকর্মীদের প্রতি নিবেদিত হওয়াটা যেন কতকটা বেরেওয়াজ।’ গ্রন্থনির্মাতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য/ মননে ও যাপনে (অভিযান) বইয়ের সূচনাকথায় লিখছেন সম্পাদক শিলাদিত্য সিংহ রায়। কর্মজীবন মূলত দিল্লিকেন্দ্রিক হলেও বাংলার গ্রন্থজগতের সঙ্গে নাড়ির যোগ ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের (১৯৩৩-২০১৫)। কাজ আর জীবন দুটি জগৎকেই তিনি এক সুতোয় গেঁথেছিলেন— তারই কথা শিলাদিত্যের ‘করুণ রঙিন পথ’ লেখায়। আছে বিশিষ্ট জনের কলমে ‘স্মরণ’, বুদ্ধদেবের গ্রন্থচিন্তা, চিঠিপত্র, প্রাসঙ্গিকতায় পুলিনবিহারী সেনকে নিয়ে শঙ্খ ঘোষ কি প্রভাতকুমার ঘোষকে নিয়ে স্বপন চক্রবর্তীর লেখা, বিমান সিংহের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার, রামকুমার মুখোপাধ্যায় ও অভিজিৎ গুপ্তের প্রবন্ধ। সঙ্গে জরুরি পুস্তিকা ‘প্রকাশনার পরিভাষা’। এত সুনির্মিত গ্রন্থ বাংলায় সত্যিই দুর্লভ।
সাক্ষাৎকার
‘দ্য ভেরি বেস্ট অব রিভিউজ যা এখানে হয়েছে, তারা যেন ছবিটাকে প্রায় একটা সাহিত্যের... সেটাকে সিনেমা হিশেবে দেখা হচ্ছে, একটা আলাদা, বিশেষ শিল্পমাধ্যম বলে দেখা হচ্ছে— সেটা আমি কোনোদিন বোধ করিনি।’ সত্যজিতের এমন অনেক প্রায়-না-শোনা অথচ অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ কথাবার্তার সমাহার— দুর্লভ কথোপকথন সব। বেরোল বইমেলায় সোমনাথ রায়ের সম্পাদনায় ‘এখন সত্যজিৎ’-এর ‘সাক্ষাৎকার ২’ সংখ্যা। সত্যজিতের ভক্ত থেকে গবেষক, সকলের জন্যেই।
ফিরে দেখা
পশ্চিমবঙ্গ দেখেছে বামপন্থীদের উত্থান, দেখেছে তেভাগা ও খাদ্য আন্দোলন। কিন্তু ১৯৬৭ থেকে ’৭২ পর্যন্ত যে অতি বামপন্থী আন্দোলন শুরু হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে তা-ই ক্রমে ডানা মেলে গোটা দেশের আকাশে। নকশালবাড়ি আন্দোলনের পঞ্চাশ বছরের ইতিহাস ভিন্ন চোখে ফিরে দেখার চেষ্টা করেছে গাঙচিল পত্রিকা, তাদের ‘নকশাল’ সংখ্যায়। প্রশ্ন তুলেছে, দুই বাংলায় একই সঙ্গে ও একই সময় ধরে চলতে থাকা দুটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে মুক্তির আন্দোলন গড়ে উঠলেও কেন একটি সফল হল, অপরটি নয়? এর আগেই ‘শরণার্থী’ বিষয়ে একটি চমৎকার সংখ্যা প্রকাশ করেছিল গাঙচিল।
আন্তর্জাতিক
একটা জাতির মধ্যে অনেক রকম ধর্মবিশ্বাস রইবে, অনেক রকম উপজাতি ও সংস্কৃতি রইবে, তবেই তো সে জাতির সংস্কৃতি বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধ হবে।... সংখ্যালঘুদের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা বোধ করি, কারণ তারা নানাভাবে বঞ্চিত থাকে ও প্রান্তিক জীবনযাপনে বাধ্য হয়।’ ক্লান্তিহীন কথোপকথনে, বাগ্বৈদগ্ধে টের পাওয়া যায় তানভীর মোকাম্মেল-এর মেধা-প্রজ্ঞার গভীরতা। সদ্য বেরোল তাঁর সম্পূর্ণ সাক্ষাত্কার-গ্রন্থ তানভীর মোকাম্মেল/ কিছু কাজকর্ম কিছু বেঁচে থাকা (বৈ-চিত্র প্রকাশন)। ইতিহাসের দিকবদল যেন তাঁর যে-কোনও সৃষ্টিতেই গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিয়ে ফুটে ওঠে। ১৯৫৫-য় জন্ম খুলনায়, তবু দেশভাগ তাঁর পিছু ছাড়ে না। দেশভাগ নিয়েই তাঁর ‘সীমান্তরেখা’ ছবিটির সাম্প্রতিক প্রদর্শন উপলক্ষে কলকাতায় এসেছিলেন। দেখানো হল প্রথমে যাদবপুরে, পরে ইজেডসিসি-তে, সেখানেই তাঁর এই বইটি উদ্বোধন করলেন শঙ্খ ঘোষ, দেবেশ রায় আর তরুণ মজুমদারের উপস্থিতিতে। উদ্যোক্তা সন্দীপ নট্ট ও তাঁর ‘পাশে আছি’ সংস্থা। দাঙ্গা, পাকিস্তানি শাসন, বাঙালির জাতীয়তাবাদ, কমিউনিস্ট পার্টি, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন বাংলাদেশ, প্রান্তিক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা, রবীন্দ্রনাথ, লালন, খেতমজুর আন্দোলন, গণশিক্ষা, বিকল্প চলচ্চিত্র, বাঙালি জাতিসত্তার ভবিষ্যৎ... এমন বিবিধ বিষয় নিয়ে বলে গিয়েছেন এই নতুন বইটিতে। কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, সর্বোপরি চলচ্চিত্রকার এই মানুষটির নিবাস ঢাকা; তবু পায়ের তলায় সরষে তাই দুনিয়া-ভ্রমণ থেকে ক্রিকেট খেলা, স্বদেশভাবনা থেকে আধুনিকতা... আন্তর্জাতিক ভুবনের খোঁজ পাবেন পাঠক়।