কলকাতার কড়চা: ভারতীয় বস্ত্রশিল্পের ঐতিহ্য

‘আমি খানিকটা উদ্বিগ্ন এবং চিন্তিত’, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা প্রসঙ্গে এ মন্তব্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৮ ০১:২৮
Share:

সুচের ফোঁড়ে আর সুতোর রেখায় আবহমান ভারতে কী ইতিহাস লেখা হল তারই সন্ধানে দেশবিদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন শ্যামলী দাস৷ খুঁটিয়ে দেখেছেন নানা সংগ্রহশালায় রক্ষিত নিদর্শন। দীর্ঘ কাল কাটিয়েছেন রাজস্থানের জয়পুরে, মহারাজা সওয়াই মান সিংহ সংগ্রহালয়ে বস্ত্রবিভাগের কিপার পদে৷ মুঘল যুগের গালিচার উপর গবেষণা করে পিএইচ ডি উপাধি পেয়েছেন৷ কিন্তু বহু দিন থেকেই একটা ইচ্ছে অপূর্ণ ছিল, ভারতীয় বস্ত্রশিল্প নিয়ে বাংলায় একটা বই লেখার ইচ্ছে৷ এ বিষয়ে বাংলা ভাষায় বইপত্র এমনিতেই কম৷ ইংরেজি ভাষায় নানা গবেষণাগ্রন্থ থাকলেও তার বেশির ভাগটাই সাধারণ আগ্রহী পাঠকের নাগালের বাইরে। সেই অভাব বেশ খানিকটা মেটাবে তাঁর সম্প্রতি প্রকাশিত ভারতের ঐতিহ্যময় বস্ত্রশিল্প/ অতীত থেকে বর্তমান (দি সী বুক এজেন্সি)৷ দীক্ষিতের চোখ দিয়ে দেখা পালামপোর, কলমকারি, কাশ্মীরি শাল, বালুচরি বুটিদার, পৈঠানি, বাঁধনি, ইক্বত কিংবা বাংলার কাঁথার ছোট ছোট পরিচিতি ছোট ছোট লেখায় ধরা আছে এ বইয়ে৷ আছে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন সংগ্রহশালায় ছড়িয়ে থাকা ভারতীয় বস্ত্রসম্ভারের দুর্লভ নিদর্শনের বেশ কিছু রঙিন ছবিও৷ ভারতের বস্ত্রশিল্পে রঙেই যে লুকিয়ে আছে প্রকৃতি৷ সুতির কাপড়কে কী দিয়ে ভেজালে তাতে রং ধরবে আর টিকে থাকবে, কোন ফল বা গাছ থেকে কী রং পাওয়া যাবে তার গোপন বিদ্যেটি ভারতের রংরেজদের একচেটিয়া৷ তবু তাঁদের সম্পর্কে বাংলা বা অন্য ভারতীয় ভাষায় গবেষণা হয়েছে ইংরেজির তুলনায় অনেক কম৷ এ বই তার একটা প্রাথমিক পরিচয় তুলে ধরল৷ সঙ্গের ছবিতে কলমকারি পদ্ধতিতে রং করা ও ‘কলম’-এ আঁকা বিভিন্ন বস্ত্রাংশ থেকে পুনর্নির্মিত দেওয়ালে টাঙানোর বিশালকায় প্যানেল, আনুমানিক ১৭ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ। নিউ ইয়র্কের মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম অব আর্টের সংগ্রহ। ছবি বই থেকে।

Advertisement

অন্তরালের মানুষ

Advertisement

অবসরকালীন যে ভাতা প্রাপ্য হত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে, তার একটা অংশ তাঁর নির্দেশমতো কাজে লাগত সেখানকারই কয়েকটি দুঃস্থ পরিবারের। এ দেশের ব্যাঙ্ক পর্যন্ত যা আসত, তার আনুকূল্য পেয়েছেন আবাসনের দ্বাররক্ষী, গৃহের পরিচারিকা, গাড়ির চালক, অঞ্চলের রিকশাচালক। স্বাস্থ্য-উদ্যোগের মতো কত সেবাপ্রকল্প, শিল্প-সাহিত্যের কত অবাণিজ্যিক উদ্যোগ যে তাঁর অকৃপণ অথচ নীরব সহযোগের স্পর্শ পেয়েছে, সে হিসেব কারও কাছে নেই। মানুষটি ছিলেন অর্থনীতির বিশিষ্ট ছাত্র এবং গবেষক। বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুল, প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে অনিন্দ্য দত্ত (জ. ১৯৩১) গবেষণা করেন ফ্লরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে, ১৯৮৭-তে তা বই হয়ে বেরোয় অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে: গ্রোথ অ্যান্ড ইকুইটি: আ ক্রিটিক অব দ্য লুইস-কুজনেটস ট্র্যাডিশন। দীর্ঘ কাল প্লাইমাউথ স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়িয়ে অবসরের পর ’৯৬-এ দেশে ফেরা, আমৃত্যু এ শহরের বাসিন্দা। মার্ক্সবাদে বিশ্বাসী এই মানুষটি ছিলেন প্রখ্যাত চিন্তক অম্লান দত্তের আপন ভাই। নিঃশব্দে চলে গেলেন গত এপ্রিলে, মূলস্রোতের বিপরীতে একেবারেই অন্তরালের মানুষ ছিলেন তিনি।

নতুন কেন্দ্র

এই মুহূর্তে সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় শুধু বাচিক শিল্পীই নন, তিনি বিভিন্ন শিল্পমাধ্যমে কাজ করা এক অভিজ্ঞ শিল্পী। এ বার তিনিই এই শহরে ইন্টারডিসিপ্লিনারি আর্টস কালেকটিভ বা আন্তঃসাংস্কৃতিক শিল্প সমন্বয় কেন্দ্র গড়ে তোলায় উদ্যোগী। শিল্পী জানালেন, এটা কোনও প্রতিষ্ঠান বা কোর্স নয় ঠিকই, কিন্তু মূল সাহিত্যগ্রন্থের ধারণাকে ধারণ করতে সামগ্রিক, শিল্পসম্মত উপস্থাপনগুলিকে নতুন রূপে গড়ে তোলার জন্য একটি জরুরি পদক্ষেপ, যা জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষালাভের পাশাপাশি শিল্পের সঙ্গে শিল্পীদের যোগাযোগের মাধ্যম তৈরি করবে। কেন্দ্রটির নাম SPCkraft, এটির উদ্বোধন ১৫ মে। পাশাপাশি, রবীন্দ্রগানের সঙ্গে পশ্চিমি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মেলবন্ধনের উদ্দেশ্যে মিশরের ভারতীয় দূতাবাসের আমন্ত্রণে ও আইসিসিআর-এর উদ্যোগে সুজয়প্রসাদ পাড়ি দিলেন মমির দেশে। ৬ ও ৭ মে কায়রো ও আলেকজান্দ্রিয়া শহরের দু’টি অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন সুজয়প্রসাদ, প্রবুদ্ধ রাহা এবং সৌমিত্র সেনগুপ্ত।

সাংস্কৃতিক

কলকাতা আন্তর্জাতিক শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন। শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে মেধার উন্মেষে সহায়ক হবে এমন একটি ধর্ম জাতি গোষ্ঠী ও রাজনীতি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠার সলতে পাকানো শুরু হয়ে গিয়েছিল ২০০৪ সালেই। সাহিত্যিক চিত্রকর নাট্যব্যক্তিত্ব শিক্ষাবিদরা মিলে তৈরি করলেন একটি ট্রাস্ট, সভাপতিত্বে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। কালিকাপুরে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে পাওয়া জমিতে আর্ট সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনাও হল। কিন্তু জমি বেদখল হওয়ায় কাজ আর এগোয়নি। সংস্থার সহ-সভাপতি শিল্পী যোগেন চৌধুরী ট্রাস্টি-সদস্য অমিতাভ চৌধুরীর সহযোগিতায় শেষ পর্যন্ত সেই জমি উদ্ধার করতে পেরেছেন। ভবনের নকশাও তৈরি, অনুমোদনের পর বছর দু’একের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন ওঁরা। ২৫ বৈশাখ (৯ মে) এই ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন সংস্থার বর্তমান সভাপতি শঙ্খ ঘোষ। সঙ্গীত পরিবেশনায় শামা রহমান।

ঐতিহ্য

ঐতিহ্য রক্ষার আন্দোলন আস্তে আস্তে দানা বাঁধছে কলকাতায়। সম্প্রতি বিশ্ব ঐতিহ্য দিবসে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে সুবোধ মল্লিক স্কোয়্যার থেকে পুরভবন পর্যন্ত মিছিলে যোগ দেন বহু নাগরিক। শহরের ঐতিহ্যবাহী এলাকাগুলিতে স্থানীয় অধিবাসীদের অবহিত করে তাঁদেরও আন্দোলনে সামিল করতে এগিয়ে এসেছেন শিল্পী-গবেষকরা। এ বার এই উদ্যোগকেই আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে যদুনাথ ভবন মিউজিয়াম অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টারে ১১-১৩ মে আয়োজিত হয়েছে আলোচনাসভা ও প্রদর্শনী: ‘রিক্লেমিং দ্য সিটি/ কনজার্ভিং স্পেসেস, সাইটস অ্যান্ড দ্য বিল্ট ফ্যাব্রিক অব কলকাতা’। ১১ মে বিকেল সাড়ে ৫টায় তপতী গুহঠাকুরতার সূচনাকথা এবং প্রদর্শনীর (‘চিৎপুর রিইমাজিন্‌ড: কলকাতাজ হেরিটেজ করিডর’) উদ্বোধন, প্রাসঙ্গিক আলোচনায় কমলিকা বসু। ১২ মে সকাল ১০:৩০ থেকে সন্ধে ৬:৩০ ঐতিহ্য রক্ষার নানা দিক নিয়ে আলোচনায় যোগ দেবেন জহর সরকার, সুজাতা সেন, অমিত চৌধুরী, মনীশ চক্রবর্তী, নীলিনা দেব লাল, ছত্রপতি দত্ত প্রমুখ।

সচেতনতা

আগামী কাল বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। এই বিষয়ে সচেতনতা প্রসারের লক্ষে আয়োজিত হয়েছে তিন দিনের একটি অনুষ্ঠান। আজ সকাল সাড়ে দশটায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরলা রায় মেমোরিয়াল হলে। এখানে রয়েছে আন্তঃবিদ্যালয় কুইজ এবং বিতর্ক প্রতিযোগিতা। বিতর্কের বিষয়, বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা আইনগত ভাবে বাধ্যতামূলক করা উচিত কি না। সঙ্গে রোজই থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যৌথ ভাবে এর আয়োজক নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিট, হেমাটোলজি বিভাগ এবং গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল। বিকেলে মোহরকুঞ্জের মুক্তমঞ্চে থাকবে অনুষ্ঠান এবং পুরস্কার বিতরণ। থাকছে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের হাতের কাজ ও চিত্র প্রদর্শনী।

কবিতাপাঠ

শিল্পী আশিতে পা দিয়েছেন। উদ্যমে কিন্তু একতিলও ভাটা পড়েনি। সেই ১৯৬৩ সালে তাঁর ছবির প্রদর্শনী দেখে কমলকুমার মজুমদার মন্তব্য করেছিলেন, যোগেন চৌধুরীর ‘রেখা অত্যন্ত কাব্যধর্মী’। তাঁর অজস্র ছবি যেমন কবিতা হয়ে উঠেছে, তেমনই তিনি কবিতাও লিখেছেন কম নয়। দৈনন্দিনতার গ্লানি, তিক্ততা থেকে শিল্পী মুখ লুকিয়ে বাঁচতে চাননি, ছবির সঙ্গে কবিতাতেও তার স্পষ্ট প্রকাশ। তাঁর প্রথম কবিতার বই হৃদয় ট্রেন বেজে ওঠে প্রকাশিত হয় ১৯৭০ সালে। প্রকাশক ছিলেন কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। আর নান্দীমুখ সংসদ থেকে যোগেন চৌধুরীর কবিতা প্রকাশিত হয় ২০০৩-এ। এ বার ১২ মে সন্ধে সাড়ে ছ’টায় ‘দেবভাষা’র নতুন আবাসে (৯/২ ফার্ন রোড, কল-১৯) যোগেন চৌধুরীর একক কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে ‘সংলাপ অবিরত’ পত্রিকা। বিশেষ অতিথি পবিত্র মুখোপাধ্যায়।

অচ্ছেদ্য

সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে তাঁর অচ্ছেদ্য গ্রন্থি সেই ‘গুগাবাবা’ থেকে শেষ ছবি ‘আগন্তুক’ পর্যন্ত, কে না জানে তিনি সত্যজিতের ফটো-বায়োগ্রাফার। কিন্তু কেবল এই একটি মাত্র পরিচয়েই কখনও আটকে থাকেননি নিমাই ঘোষ (জ. ১৯৩৪)। চিত্রকর আর চিত্রকলা, শহর কলকাতা, জনজাতির জীবন, থিয়েটার... ক্যানডিড ফটোগ্রাফির ভিতর দিয়ে তাঁর ক্যামেরা অবিরত খুঁজে বেড়িয়েছে মানুষের মুখ, তার প্রত্যন্ত জীবন। সাদাকালোর ফ্রেমে অ্যানালগ ফটোগ্রাফি-ই চর্চা করে গিয়েছেন তিনি বরাবর, ডিজিটাল ক্যামেরা ছোঁননি। তাঁকে নিয়ে সাদাকালোয় ৪৮ মিনিটের ছবি করেছেন অনির্বাণ মিত্র— ‘নিমাই ঘোষ: আ রে অব লাইট’ (চার্লস ওয়েকম্যান ফিল্মস)। দেখানো হল ৪ মে সন্ধেয় আলিয়াঁস ফ্রঁসেজে। বিশিষ্ট স্থিরচিত্রকার অনির্বাণের এটাই প্রথম চলচ্চিত্র, তিনি তীর্থ দাশগুপ্তের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন এই নির্মাণ-কৃতিত্ব। ‘আগেও আমাকে কিংবা আমার কাজ নিয়ে ছবি হয়েছে, বিদেশে-এ দেশে, তবে এ ছবিটিতে সবচেয়ে পরিব্যাপ্ত ভাবে বিস্তৃত পরিসরে তুলে ধরা হয়েছে আমার সারা জীবনের কাজের বৈচিত্র,’ জানালেন নিমাইবাবু। আগামী কাল তাঁর জন্মদিন।

উদ্বিগ্ন

‘আমি খানিকটা উদ্বিগ্ন এবং চিন্তিত’, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা প্রসঙ্গে এ মন্তব্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। সিউড়ি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অমিতারঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের (১৮৯৩-১৯৭২) ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মারক বক্তৃতায়, গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনে। অমিতারঞ্জনের দুই পুত্র দেবরঞ্জন ও রমারঞ্জনবাবু প্রণববাবুর অধ্যাপক ছিলেন এবং সিউড়ি কলেজ থেকেই তিনি শিক্ষালাভ করেন। স্মৃতিচারণে প্রণববাবু বলেন, ‘সে সময় কলেজ গরিব ছিল, পাকা বাড়ি ছিল না। কেরোসিনের বাতিতে পড়তে হত, কিন্তু তা সত্ত্বেও লেখাপড়ায় কোথাও কোনও অসুবিধে হয়নি! শিক্ষাগত মানেরও অভাব ছিল না।’ কৃতীদের দেশের, সমাজের বা গবেষণার কাজে আরও বেশি করে এগিয়ে আসবার পরামর্শ দেন তিনি। শেষে বলেন, ‘প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হিসেবে নয়, বরং সিটিজেন মুখার্জি হিসেবে সরকারকে বলছি, শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ করুন, অনেক লাভ হবে।’ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুপর্ণানন্দ মহারাজ।

কথোপকথন

সে দিন মুখোমুখি বসে পরস্পর কথা বলবেন চপল ভাদুড়ী ও গৌতম হালদার। নারীচরিত্রে নিজেদের অভিনয়ের অভিজ্ঞতা। দুই প্রজন্মের দুই অভিনেতা, কী ভাবে ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে তাঁদের ভাবনা ও প্রয়োগ, তা নিয়েই তাঁদের কথোপকথন। এক দিকে চপলরানি-র অভিনয়ে প্রধানত আবেগ আর টেকনিক-এর ব্যবহারে প্রায় পুরো নারীচরিত্রই হয়ে উঠতেন চপল, আবার অন্য দিকে ‘মেঘনাদবধ’-এর অভিনয়ে শুধু সংলাপ-শব্দ-ইঙ্গিত-সঙ্কেতের মাধ্যমে নারীচরিত্র প্রতিষ্ঠা করে ফেলতেন গৌতম। কথার ফাঁকে ফাঁকে তাঁরা সে অভিনয়ের নমুনাও পেশ করবেন। উষ্ণিক-এর ৩৪ বছরের জন্মদিন উদ্‌যাপন সে সন্ধ্যায়, ১৩ মে অ্যাকাডেমিতে সন্ধে ৬টায়। ‘‘এ বছর থেকে আমরা এই ‘উষ্ণিক সংলাপ’ শুরু করছি ওঁদের দু’জনের কথাবার্তা দিয়ে, প্রতি বছরই হবে।’’ জানালেন উষ্ণিক-এর কর্ণধার ঈশিতা মুখোপাধ্যায়। এর পর তাঁর রচনা ও নির্দেশনায় উষ্ণিক-এর নাটক ‘অগ্নিজাতক’। মুখ্য ভূমিকায় অর্পিতা ঘোষ।

আশি পেরিয়ে

লখনউয়ের মানুষ ঠিকই, কিন্তু কলকাতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক অনেক দিনের। বাবা অচ্ছন মহারাজ মারা গিয়েছেন, কাকা লচ্ছু মহারাজ তখন মুম্বইয়ে নৃত্যনির্দেশনা নিয়ে ব্যস্ত, আর এক কাকা শম্ভু মহারাজও নিজের কাজে ব্যস্ত লখনউয়ে। তখন তিনি সবে চোদ্দো। জীবনে দাঁড়াবার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। ঠিক সেই সময়ই ডাক পেলেন কলকাতার। মা এক পাতানো ভাইয়ের সঙ্গে পাঠিয়ে দিলেন এ শহরে। ১৯৫২ সাল। মন্মথনাথ ঘোষের বাড়িতে তাঁর স্টেজ শো— ‘‘আড়াই ঘণ্টা নেচেছিলাম কলকাতার সেই আসরে। অভিমন্যুর মতো অবস্থা তখন। চার দিকে রসিকজনের মাঝখানে নেচে চলেছি। গিজগিজ করছে দর্শক। পর দিন কাগজে কাগজে এত প্রশংসা বেরিয়েছিল যে আজও মনে পড়লে অভিভূত হয়ে যাই। আসরের বাইরেও মাইক লাগানো হয়েছিল। লোকে রাস্তায় খবরের কাগজ পেতে বসেছিলেন। তাঁরা বলাবলি করেছিলেন, ‘বিরজুর নাচ না দেখতে পাই ক্ষতি নেই। ওঁর ঘুঙুরের আওয়াজ শুনব।’’ স্মৃতিতে ফিরছিলেন বিরজু মহারাজ। ১৯৩৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জন্ম। সাত পুরুষ ধরে তাঁদের পরিবারে কত্থক নাচের চর্চা। রবিশঙ্কর তাঁর নাচ দেখে বলেছিলেন, ‘তুম তো লয় কা পুতুল হো।’ ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’-র নৃত্যনির্দেশনায় সত্যজিতের সঙ্গে কাজের স্মৃতিও টাটকা: ‘‘দাদার সঙ্গে শুটিং করা মানেই প্রচুর মিষ্টি দই খাওয়া।...’’ সদ্য আশি পূর্ণ করা এই কিংবদন্তি নৃত্যশিল্পীই সম্প্রতি দু’দিনের ‘দমদম মার্গ সঙ্গীত উৎসব’-এ তাক লাগানো নৃত্য পরিবেশন করে গেলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement