Kolkatar Korcha

কলকাতার কড়চা: দেওয়ালে মুক্তির লিখন

সবাই সুন্দর হতে চায় যে! এই সবই মনে করিয়ে দেয়, আমাদের চার পাশে শুধু সমাজ রাজনীতির বেড়া আর দেওয়াল, জীবনের সহজতা সতেজতাকে মাথা তুলতে দিচ্ছে না যারা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:৫৩
Share:

বড় রাস্তা থেকে গলিতে পা রাখতেই চমক। চেনা বাড়িঘর, দোকান সব যেন অন্য রকম। গলির এক দিকে কাঁটাতারের বেড়া, লাগোয়া দেওয়ালে নানা দেশের পতাকার রং গায়ে মেখে এক ঝাঁক ঘুড়ি। অতি চেনা মনিহারি দোকানের পরিচিত পসরা বদলে গিয়েছে, বিক্রি হচ্ছে কৃত্রিম নাক চোখ মুখ। সবাই সুন্দর হতে চায় যে! এই সবই মনে করিয়ে দেয়, আমাদের চার পাশে শুধু সমাজ রাজনীতির বেড়া আর দেওয়াল, জীবনের সহজতা সতেজতাকে মাথা তুলতে দিচ্ছে না যারা।

Advertisement

গত তিন বছরের মতো এ বারও বেহালা ১৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন রাস্তা ও এলাকায় চলছে ‘বেহালা আর্ট ফেস্টিভ্যাল’, আয়োজক নতুন সঙ্ঘ। চতুর্থ বছরের শিল্প উৎসবের মূল সুরটি ধরিয়ে দিলেন উৎসবের আহ্বায়ক, শিল্পী সনাতন দিন্দা: “একটি শব্দ— ‘আনবাউন্ড’। আমাদের ব্যক্তি ও সমষ্টিজীবনকে নিজেদের কব্জায় রাখতে নানা নিয়ন্ত্রক শক্তি গড়ে তুলেছে বিস্তর বেড়াজাল। সেই জাল কেটে মানুষের সামগ্রিক মুক্তির দুর্গম যাত্রাপথকেই প্রণতি জানাতে এই উদ্যোগ।” দেশের গণ্ডি পেরিয়ে, এই মুক্তিপথের সূত্রেই এসেছে ইরান-সহ নানা দেশে নানা ভূমে এই সময় ঘটে চলা মেয়েদের প্রতিবাদ-কথা। সৌন্দর্যের প্রথাগত নির্মাণকে অস্বীকার করে ‘ফর্সা হওয়ার ক্রিম’-সংস্কৃতিকে ছুড়ে ফেলার আহ্বানের রূপক হয়ে উঠেছে আয়না থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার নারীমুখ। এমন নানা প্রতীক ও রূপকল্পের মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে শিল্প ও শিল্পীর যোগসূত্র স্থাপনের চেষ্টা হিসেবে এই উৎসবকে দেখছেন উদ্যোক্তারা। সুদৃশ্য গ্যালারির ঠান্ডা ঘর থেকে শিল্পকে মুক্ত করে মানুষের রোজকার জীবনের অঙ্গ করে তোলা— স্মরণ করা হয়েছে সেই সব অজানা শিল্পীদের, অজন্তা-ইলোরার চিত্রকৃতি থেকে বাংলার মন্দির-ভাস্কর্য ও অলঙ্করণে যাঁরা রেখে গিয়েছেন আমাদের সংস্কৃতি ও শিল্পজীবনের অনন্য অভিজ্ঞান।

শিল্প মানুষের মুক্তির কথা বলে, এই ভাবনা থেকেই এ বছরের উৎসব নিবেদিত জয়নুল আবেদিন ও ঋত্বিক ঘটকের উদ্দেশে, এবং অবশ্যই মৃণাল সেনকে— যাঁর জন্মশতবর্ষের সূচনা এ বছর। দেওয়ালচিত্রে ফুটে উঠেছে নীল আকাশের নীচে বা আকালের সন্ধানে ছবির চিরচেনা মুহূর্তেরা। নানা দৃশ্যকল্পের সঙ্গে লেখা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ (ছবিতে) থেকে জীবনানন্দ, শঙ্খ ঘোষ, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার পঙ্‌ক্তি, সেখানেও নির্বাধ মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। এই উদ্যোগকে আলাদা মাত্রা দিয়েছেন এই শিল্পপ্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত মডারেটররা। বিভিন্ন শিল্প মাধ্যমে কাজ করে চলা শিল্পীদের কাজগুলি যত্নে কিউরেট করে বিষয়ভাবনার সঙ্গে মিলিয়ে তুলে ধরেছেন তাঁরা, সচরাচর যা স্ট্রিট আর্ট ফেস্টিভ্যালে দেখা যায় না। তিন দিন ব্যাপী এই উৎসবের শুরু হয়েছে গতকাল, ৩ ফেব্রুয়ারি। দেখার সুযোগ আগামী কাল ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, সময় বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা।

Advertisement

জন্মদিনে

“সমস্তরকম খাঁচা ভেঙে কবি যখন তাঁর নিজস্ব সত্য অস্তিত্বের প্রকাশ করে যান তাঁর নিজেরই ভাষায়, যার মধ্যে ধরা পড়ে গোটা জগৎজীবন, তখন সেটা তৈরি করে... নতুন কোনো আদল,” নিজের কথাকেই সত্য করে তুলেছেন শঙ্খ ঘোষ (ছবি) তাঁর সৃষ্টি ও চর্যায়। খাঁচা ভেঙে বারংবার গড়েছেন সত্যের নতুন আদল। ৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধে ৬টায় নিউ টাউন রবীন্দ্রতীর্থে ৯১ বছর পূর্তিতে তাঁকে স্মরণ, পরিবারের উদ্যোগে। আট পাঠে এক কবি: অন্য ভারতীয় ভাষার লেখকের চোখে শঙ্খ ঘোষের কবিতা (প্রকা: গুরুচণ্ডা৯) বই উদ্বোধনে শ্রীজাত; প্যাপিরাস ও পারিবারিক উদ্যোগে পুস্তিকা প্রকাশে অরিজিৎ কুমার। ‘শঙ্খ ঘোষ’ ওয়েবসাইট উদ্বোধনে অপর্ণা সেন, তিনি ও কল্যাণ রায় পড়বেন শঙ্খ ঘোষের কবিতা, পাঠ করবেন সৌরীন ভট্টাচার্য অমিয় দেব রত্না মিত্রও। কবির প্রিয় শিল্পী, বাংলাদেশের লাইসা আহমেদ লিসা গাইবেন রবীন্দ্রগান।

কলকাতার গান

কর্মসূত্রে কলকাতায় আসা, কিন্তু তাঁকে মুগ্ধ করেছে এ শহর। গানবাজনার প্রতি টান ছিল আগে থেকেই, অনায়াসে গেয়ে ওঠেন কিশোরকুমারের নানা গান। তবে এ বার কলকাতাকে নিয়ে গান গাইলেন রাজ্য সরকারের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব বিবেক কুমার। অবাঙালি হলেও, শহরের বাঙালিয়ানা নিয়ে তাঁর মুগ্ধতার ছাপ রেখেছেন নিজের গানে। শহরের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, গান-গল্প-সিনেমা, উৎসব, খাওয়াদাওয়া, সবই তুলে ধরেছেন তাঁর ‘শহর আমার প্রিয় কলকাতা’ গানে। বন ও প্রাণিসম্পদ দফতরের কাজের গুরুদায়িত্ব থেকে সময় বার করে প্রস্তুতি চলেছে দীর্ঘ দিন, এ বার প্রকাশ পেল তা। গায়ক ও সুরকার তিনিই, লিখেছেন তপনকুমার দেবনাথ। বিবেকের কথায়, “কলকাতা আপন করে নিতে জানে, কখন একাত্ম হয়ে গিয়েছি এ শহরের সঙ্গে জানি না। সেই শ্রদ্ধাই জানাতে চেয়েছি গানে।”

নজরকাড়া

নায়ক ছবিতে বংশী চন্দ্রগুপ্তর তৈরি ট্রেনের সেট দেখে বিস্মিত উত্তমকুমার, “কী করে বানান এমন সেট, বংশীদা?” উত্তর এল, “তুমি এমন আশ্চর্য ন্যাচারাল অভিনয় কী করে করো যদি বুঝিয়ে দিতে পারো, আমিও বোঝাতে পারব সেট-এর রহস্য।” এমনই নানা গল্প, তথ্য, ছবি, মহানায়কের ব্যবহৃত সামগ্রী দেখা যাবে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদ আয়োজিত সপ্তদশ আন্তর্জাতিক ইতিহাস উৎসবে। রামপ্রসাদের সই করা মোগল আমলের কবুলতিপত্র, শ্রীঅরবিন্দ নিয়ে নানা তথ্য... ও দিকে আদিম মানুষের পাথরের অস্ত্র ও সামগ্রীও দেখার সুযোগ। ‘থিম কান্ট্রি’ কেনিয়া, দেখা যাবে কেনিয়ার হস্তশিল্প, মুদ্রা, ডাকটিকিটও। সাবর্ণ সংগ্রহশালায় (বড়বাড়ি, বড়িশা) ৫ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি, সকাল ১০টা-রাত্রি ৯টা।

অচিন বই

সত্তর দশকের কলকাতা। নীল স্কুটারে চেপে আকাশ বসু চলেছে পাত্রী দেখতে। বৃষ্টি সেন নামের সেই মেয়েটিকে ভুলতে পারবে না সে, চঞ্চল ছেলেটির জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে যাবে সপ্রতিভ এক তরুণীর জীবন— অদ্রীশ বর্ধনের তখন নিশীথ রাত্রি উপন্যাসে। কল্পবিজ্ঞান, ফ্যান্টাসি, অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী যে অদ্রীশ বর্ধন সুপরিচিত, তাঁর সঙ্গে এই লেখককে মেলানো দুষ্কর। ১৯৭৩-এ প্রকাশিত এ বই লেখক অচিরে বাজার থেকে তুলে নেন, চাননি তার মৃত্যুর আগে তা পুনঃপ্রকাশিত হোক— উপন্যাসের চরিত্র, ঘটনার সঙ্গে একাত্মবোধেই কি? পঞ্চাশ বছর পর বইটি প্রকাশ করল মন্তাজ (কল্পবিশ্ব) ও ফ্যান্ট্যাস্টিক, পাওয়া যাচ্ছে বইমেলায়। বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যে দু’টি পুরস্কারও চালু করেছে কল্পবিশ্ব প্রকাশনা, অদ্রীশ বর্ধনের স্মৃতিতে ‘আশ্চর্য’ পুরস্কার ও রণেন ঘোষের পত্রিকা নামাঙ্কিত সেরা সম্ভাবনাময় তরুণ লেখককে পুরস্কার।

সহজ পাত

“২৫১ নম্বর স্টলে না কি বিরিয়ানি পাওয়া যাচ্ছে?” উত্তেজিত জনৈকের প্রশ্ন বইমেলায়। জানা গেল, বিরিয়ানি নয়, বিরিয়ানির বই। অহো, সে আবার উৎসর্গীকৃত ‘ক্যালকাটা বিরিয়ানি’র নেপথ্যপুরুষত্রয়, জি ইংলিস জেমস কিড ও উইলিয়াম কেরিকে, উনিশ শতকে যাঁদের উৎসাহে সিলেটে আলুর চাষ শুরু হয় কেবল কলকাতার বাজারে পাঠানোর জন্য! বিরিয়ানির সঙ্গে সম্পর্ক ঢাকা না কলকাতা কার বেশি মাখোমাখো, পারসিক অওয়ধি না মোগল কোন রসুইয়ে তার উদ্ভব, আজকের কলকাতা ও বঙ্গের বিরিয়ানি-বিলাসীরা এই সমস্ত মত পেরিয়ে পাতে বিশ্বাসী। সর্বসুখদ খাদ্যটির স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ সব নিয়েই ‘৯ঋক্যাল বুকস’-এর বিরিয়ানির বই, সামরান হুদা ও দামু মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়, বিশিষ্টজনের লেখায়।

সন্দেশ ১১০

প্রচ্ছদ, অলঙ্করণ, স্কেচ... সন্দেশ পত্রিকায় উপেন্দ্রকিশোর সুকুমার ও সত্যজিতের নানা সময়ে আঁকা ছবির সম্ভার। সঙ্গে রায় পরিবারের পত্রিকাটির প্রজন্মবাহিত শিল্পবিবর্তনের কথা, সত্যজিতের ভাষায়। সন্দেশ পত্রিকার সচিত্র ইতিহাস উঠে এসেছে ‘স্টারমার্ক’-এর নতুন বছরের ক্যালেন্ডারে: ‘সন্দেশ অ্যান্ড দ্য রায় লিগ্যাসি’। সন্দীপ রায়ের তত্ত্বাবধানে (নির্মাণসঙ্গী পিনাকী দে ও ঋদ্ধি গোস্বামী) তৈরি ক্যালেন্ডারটি প্রকাশ পেল গত ২৭ জানুয়ারি বিকেলে, সাউথ সিটির স্টারমার্কে। সন্দেশ নিয়ে কথালাপে সন্দীপবাবুর সঙ্গে ছিলেন প্রসাদরঞ্জন রায়। অন্য দিকে, গত ২১ জানুয়ারি আইসিসিআর-এর কাফেতে প্রকাশিত হল আর একটি ক্যালেন্ডার, ‘সন্দেশ ১১০’, সেখানেও চার প্রজন্মের কাজ। ‘দ্য ড্রিমার্স’ সংস্থার নির্মাণে, সুদীপ্ত চন্দের ভাবনায় এই ক্যালেন্ডারটিও প্রকাশ করলেন সন্দীপ রায়। ছোট-বড় সকলের প্রিয় এই পত্রিকার একশো দশ বছরের পথ চলা নিয়ে ছিল আলোচনাও, দেবজিত্‌ বন্দ্যোপাধ্যায় দেবাশিস মুখোপাধ্যায় প্রমুখের অংশগ্রহণে। ছবিতে সন্দেশ-এর দু’টি প্রচ্ছদ, ১৯১৩ ও ১৯৬৫ সালের।

চির কিশোর

দুই মলাটে বাঙালির প্রিয় এক জীবন। কিশোরকুমারের ৩৫তম প্রয়াণবার্ষিকীতে বৈশাখী পত্রিকা বার করেছে ‘কিশোরকুমার বিশেষ সংখ্যা’ (সম্পা: ধ্রুবজ্যোতি মণ্ডল, অতিথি সম্পা: জ্যোতিপ্রকাশ মিত্র, সঞ্জয় সেনগুপ্ত)। পুনমুর্দ্রণ, অনুবাদ, স্মৃতিকথন, মৌলিক লেখা, ছবি— মণিমাণিক্যে ভরা। কিশোরকুমারের নিজের লেখা, লতা মঙ্গেশকর ও প্রীতীশ নন্দীর সাক্ষাৎকারের অনুবাদ, অশোককুমার রুমা গুহঠাকুরতা লীনা চন্দ্রভারকর অমিতকুমারের স্মৃতিচারণ, অন্য দিকে আশা ভোঁসলে সলিল চৌধুরী মান্না দে শ্যামল মিত্র অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বাপ্পি লাহিড়ী প্রমুখের কথা; দিলীপ কুমার দেব আনন্দ রাজেশ খন্না অমিতাভ বচ্চন মেহমুদ বৈজয়ন্তীমালা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সুপ্রিয়া দেবীর মন্তব্য; অনুষ্ঠান সংগঠক ও রেকর্ড কোম্পানির কর্ণধারদের প্রত্যক্ষ কিশোর-দর্শন। শিল্পীর গাওয়া বাংলা আধুনিক ও রবীন্দ্রসঙ্গীত, বাংলা ও হিন্দি ছবিতে গাওয়া গান-তালিকা, অভিনীত ছবির লিস্টি, কী নেই! ছবিতে সুধীর দার-এর কার্টুনে কিশোরকুমার, পত্রিকা থেকে।

অন্য মিশর

মিশর বলতেই চোখে ভাসে ইতিহাসবইয়ে দেখা পিরামিড, মমি, নীলনদ, ফারাও, হায়ারোগ্লিফ, প্যাপিরাস। তার বাইরেও আর একটা দেশ আছে, আজকের মিশর, যা প্রায় অজানা। সেই অচেনাকে চেনাতেই গগনেন্দ্র শিল্প প্রদর্শশালায় এক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্যোগ করেছে বেঙ্গল ফোটোগ্রাফি ইনস্টিটিউট (বিপিআই) কলকাতা। সঞ্জয় ভট্টাচার্যের পরিকল্পনায়, মিশরের ‘ফারাও আর্ন্তজাতিক ফোটোগ্রাফি ক্লাব’-এর কর্ণধার আহমেদ মহম্মদ হাসানের সৌজন্যে, মিশরীয় আলোকচিত্রশিল্পীদের তোলা ছবিতে দেখা যাবে মিশরীয় জীবন-জীবিকা, খাবার, বেশভূষা, ধর্মাচরণ, স্থাপত্য। প্রদর্শনীর উদ্বোধন ৫ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪টায়, চলবে ৮ তারিখ পর্যন্ত, দুপুর ২টো থেকে রাত ৮টা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement