রোহিঙ্গাদের পাশে আছি। সোমবার মিছিল শহরে। নিজস্ব চিত্র
১৪ দিনের ব্যবধানে ফের সপ্তাহের প্রথম দিনেই যানজটে স্তব্ধ হয়ে গেল কলকাতা। সোমবার সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন রাস্তায় নড়ছিল না গাড়ি। সময় গড়িয়ে গেলেও গাড়ির গতি বাড়েনি। বিশেষ করে মধ্য এবং পূর্ব কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায়।
বাদ যায়নি দক্ষিণ এবং উত্তর কলকাতার কিছু রাস্তাও। গত ২৮ অগস্ট, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সমাবেশের জেরে ওই দিনও একই ভাবে পর্যুদস্ত হয়েছিল শহরের যান চলাচল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার দুপুরে এক ধর্মীয় সংগঠনের মিছিল ছিল। সপ্তাহের প্রথম দিনে এমনিতেই সকাল থেকে পথে গাড়ির চাপ বেশি থাকে। তার উপরে ভোগান্তি বাড়ে দফায় দফায় বৃষ্টিতে। ফলে সকাল থেকেই মধ্য এবং উত্তর কলকাতার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। নাকাল হন অফিসযাত্রী থেকে স্কুলপড়ুয়া, সকলেই। দুপুরের ওই মিছিলের জেরে ব্যাপক আকার নেয় যানজট। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলা বারোটা নাগাদ মিছিল উপলক্ষে ওই ধর্মীয় সংগঠনের তরফে জমায়েত হয়েছিল পার্ক সার্কাস ময়দানের কাছে। ফলে, ওই সময় থেকেই গাড়ি চলাচল ব্যাহত হতে শুরু করে পার্ক সার্কাস কানেক্টর-সহ পূর্ব কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায়। দুপুর একটার পরে ওই সংগঠনের কয়েক লক্ষ লোকের মিছিল শুরু হয়। মূলত মধ্য এবং পূর্ব কলকাতার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে মিছিল যাওয়ায় সেখানকার বিভিন্ন রাস্তা কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। নিউ পার্ক স্ট্রিট দিয়ে মিছিল পৌঁছয় মল্লিকবাজারে। সেখান থেকে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড দিয়ে মৌলালি হয়ে এস এন ব্যানার্জি রোড ধরে মিছিল ধর্মতলায় পৌঁছয়। পরে তারা রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে জমায়েত করে।
পুলিশের দাবি, ওই মিছিলের জেরে শিয়ালদহ উড়ালপুল, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড, বেলেঘাটা মেন রোড, সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউ, পার্ক স্ট্রিট, শেক্সপিয়র সরণির মতো রাস্তা প্রথম দফাতেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। মিছিল ধর্মতলার দিকে এগোতেই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এস এন ব্যানার্জি রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, জওহরলাল নেহরু রোডের মতো রাস্তা। অভিযোগ, মিছিলের ভিড় এত বেশি এবং গতি এতটাই শ্লথ ছিল যে, ধর্মতলার মোড়-সহ বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি ৪৫-৫০ মিনিট করে দাঁড়িয়ে থেকেছে। আবার কিছু কিছু জায়গায় গাড়ি চললেও তার গতি ছিল খুবই ধীর।
লালবাজার জানিয়েছে, এ দিনের বিক্ষোভ-মিছিলে ভিড় এতটাই বেশি ছিল যে, জমায়েতের জায়গায় লোক উপচে পড়েছিল। যার জের গিয়ে পড়ে মেয়ো রোড, রেড রোড, বিবাদী বাগের মতো এলাকার বিভিন্ন রাস্তায়। ভোগান্তিতে পড়েন অসংখ্য মানুষ।
ট্র্যাফিক পুলিশ জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের উপরে অত্যাচারের প্রতিবাদে ওই মিছিল যে ভাবে এগিয়েছে, সেই মতো সংশ্লিষ্ট রাস্তাগুলি বন্ধ করে গাড়ি অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ বিকল্প রাস্তা দিয়ে গাড়ি পাঠালেও তাতে সাধারণের ভোগান্তি কমেনি। শোভাবাজারের বাসিন্দা, বছর পঁয়ষট্টির সবিতা চক্রবর্তী চেতলা থেকে বাস ধরেছিলেন। কিন্তু ধর্মতলার কাছে দাঁড়ানোর পরে বাস আর নড়তেই চায় না। প্রথমে বাসেই অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু ৪৫ মিনিট কেটে যেতেও বাসের নড়নচড়ন নেই দেখে হেঁটেই ধর্মতলা পার হলেন তিনি।